অনেক সময় সম্পর্কের সীমা লঙ্ঘন হয়ে যায় প্রতারণার সমতুল্য।
একে অপরকে কতটুকু সময় দেবেন, কতটুকু খরচ করবেন, অন্যদের সঙ্গে ভিন্ন ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঘনিষ্টতার মাত্রা কেমন হবে এই বিষয়গুলো সম্পর্কের বিধি-নিষেধের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আর একজনের সঙ্গে প্রেম কিংবা বৈবাহিক সম্পর্কে থাকাকালে আরেকজনের সঙ্গে একই ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করা বা চেষ্টা করা যে অনৈতিক- সে বিষয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।
যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ‘সাইকোলজিস্ট’ তালাল আলসালিম ‘ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “সবার কাছে সম্পর্কের সঙ্গা এক নয়। সীমাবদ্ধতা, বিধিনিষেধও এক নয়। তাই দুজন ভিন্ন জগতের মানুষ যদি সম্পর্কে জড়ায় তবে বিধিনিষেধগুলোর বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা জরুরি। কারণ অনেক ক্ষেত্রে সম্পর্কের সীমা লঙ্ঘন হয়ে যায় প্রতারণার সমতুল্য।”
সম্পর্কে সীমা লঙ্ঘন আসলে কী ?
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অনলাইন প্রাকবৈবাহিক পরামর্শ-বিষয়ক প্ল্যাটফর্ম ‘আওয়ার্স’য়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ‘রিলেশনশিপ থেরাপিস্ট’ এলিজাবেধ আর্নশ বলেন, “সম্পর্কের বিধি-নিষেধগুলো অমান্য করাই হল সীমা লঙ্ঘন। সীমা লঙ্ঘনের বিষয়টাকে সেচ্ছাচার বলে ভেবে নেওয়া সহজ। তবে তা অনিচ্ছা সত্ত্বেও হওয়া অসম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে প্রধান কারণ হয় সম্পর্কে জড়িয়ে থাকা দুজন মানুষের মধ্যে যোগাযোগের অভাব।”
যুক্তরাষ্ট্রের ‘কাপল্স থেরাপিস্ট’ পলেট শারমান বলেণ, “একজন মানুষ স্বভাবতই যা এতদিন করে এসেছে তা তার কাছে স্বাভাবিক ঘটনা আর সম্পর্কে জড়ানোর পরও যে তা নিষিদ্ধ কাজ হয়ে যাবে তা সবক্ষেত্রে বুঝে নেওয়া যায় না।”
সম্পর্কে থাকা দুজন মানুষের জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হওয়ার কারণেই এই তফাৎ তৈরি হয়।
যেমন- কেউ মনে করেন একজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকার পরেও আরেকজনের সঙ্গে ‘ফ্লার্ট’ করা দোষের কিছু নয়। আবার কারও চোখে একজনের সঙ্গে প্রেম থাকলে বিপরীত লিঙ্গের কারও দিকে তাকানোই যাবে না।
এই দুই মানুষ সম্পর্কে জড়ালে সীমা লঙ্ঘন হবে প্রতিনিয়তই, তাই নিজেদের মধ্যে আলোচনাটা জরুরি।
‘রিনিউ ব্রেকআপ বুটক্যাম্প’য়ের প্রতিষ্ঠাতা এমি চ্যান বলেন, “কিছু বিষয় আছে সার্বজনিন নিয়ম। পৃথিবীর সবার জন্য সেটা বোঝার উপায় হল- যে কাজটি আপনার সঙ্গীর সামনে করতে পারেন না অথচ অগোচরে বা লুকিয়ে করেন, তবেই আপনি সম্পর্কের সীমা লঙ্ঘন করছেন।”
সীমা লঙ্ঘন আর প্রতারণার মাঝে পার্থক্য
ডা. আলসালিম বলেন, “খুব স্পষ্ট কোনো সীমারেখা যখন আপনি লঙ্ঘন করেছেন এবং তা এতটাই গুরুতর যে, সেটা আপনাদের সম্পর্কের ভীতকেই দুর্বল করে দেয় তবে সেটা প্রতারণার সামিল হয়ে যায়।”
বৈবাহিক অবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক এবং আবেগগত যোগাযোগ শুধু ওই সম্পর্কে আবদ্ধ দুজন মানুষের মাঝেই থাকবে। তৃতীয়পক্ষ সেখানে থাকতে পারবে না। এই সীমা যদি লঙ্ঘন হয় তবে তা প্রতারণাই।
“আবার কারও কারও সম্পর্কের মধ্যে অন্যদের সঙ্গে ‘ফ্লার্টিং’ করা বা ‘পর্নগ্রাফি’ দেখা সমস্যা নয়। কিন্তু কোনো সম্পর্কে সেটা আবার প্রতারণা।”
একাধিকবার সীমা লঙ্ঘনের ঘটনাও প্রতারণার ইঙ্গিত।
ডা. আলসালিম ব্যাখ্যা করেন, “আসলে প্রতারণা হল শারীরিক বা মানসিক এমন কোনো চাহিদা পূরণ করা যা সঙ্গীর কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না, সেকারণেই তৃতীয়পক্ষ সুযোগ পায়। আর তাই প্রতারণায় একাধিক সীমা একাধিকবার লঙ্ঘন করা হয়ে যায়। আর একাধিকভার সীমা লঙ্ঘনের কারণে মূল সম্পর্কই গুরুত্বহীন বস্তুতে পরিণত হয়।
করণীয়
ডা. আর্নশ বলেন, “সঙ্গী যদি সীমা লঙ্ঘন করে, তবে প্রথম কাজ হবে তাকে জানানো যে সীমা কী ছিল, কীভাবে সে তা লঙ্ঘন করেছে। এসময় আরও জরুরি বিষয় হল- আপনি এই সম্পর্ক থেকে কী আশা করেন সেটা নিশ্চিত হয়ে নেওয়া। আর সেভাবেই সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনা করা।”
সঙ্গীর কাছ থেকে এটাও জেনে নিতে হবে যে, তার সেই সীমা লঙ্ঘনের কারণ কী ছিল?
“সঙ্গীকে এই পর্যায়ে তার আচরণের দায়ভার নিতে হবে, আলেচনায় স্বচ্ছতা রাখতে হবে এবং বিশ্বাস যোগাতে হবে যে ভবিষ্যতে এমনটা আর হবে না”, বলেন তিনি।
আলোচনার মাধ্যমে সীমা লঙ্ঘনের আসল কারণ একবার বের করা গেলে পরের ধাপ হবে তা সমাধান করা।
এক সঙ্গী যদি আরেক সঙ্গীকে নিয়ে সন্তুষ্ট না হয়, আর সেই কারণেই তৃতীয়পক্ষের সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করে, তবে অসন্তুষ্ট থেকে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন আছে কি-না সেটা ভাবার ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় আছে।
ডা. আলসালিম বলেন, “এভাবে চিন্তার করলে সীমা লঙ্ঘন থেকেও এক অপরকে ভালোভাবে চেনার এবং জীবনমুখী শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ মেলে, সম্পর্কের সততাও পরীক্ষিত হয়।”