গবেষণার ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাবার হৃদযন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলে।
দুধ, পনির বা মাখন- রুচি অনুযায়ী একেকজন একেকটা খেতে পছন্দ করেন। এসব খাবার অতিরিক্ত খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান করাও হয়। আর হৃদযন্ত্রেও যে প্রভাব ফেলে সে কথাও ঠিক।
তবে কতটা প্রভাব ফেলে তা কি কখনও মাথায় খেলেছে?
এই বিষয়টা নিয়েই গবেষণা শুরু করেন নরওয়ের ‘ইউনিভার্সিটি অফ বার্গেন’য়ের ‘সেন্টার ফর নিউট্রিশন’য়ের ক্লিনিকাল সায়েন্স বিভাগের গবেষকরা।
‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজি’তে প্রকাশিত এই গবেষণা ‘ওয়েস্টার্ন নরওয়ে বি-ভিটামিন ইন্টারভেনশন ট্রায়াল’য়ের একটি অংশের ওপর নজর দেন বিশেষজ্ঞরা।
এই পর্যালোচনায় যোগ দেয় ১,৯২৯ জন রোগী। যাদের গড় বয়স হবে ৬১.৮ এবং সবাই ‘স্টেবল অ্যাঞ্জাইনা পেকটোরেস’ বা বুকে ব্যথায় আক্রান্ত।
অংশগ্রহণকারীদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা, জীবনযাত্রা, ওষুধ, খাদ্যাভ্যাস এবং দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণের অভ্যাস সবই বিবেচনায় আনা হয় এই গবেষণায়।
গবেষণায় দেখা যায়, যারা দুধ পান করেন বেশি তাদের স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করার আশঙ্কাও বেশি। যারা প্রচুর মাখন খান তাদের ‘অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন (এএমআই)’তে মৃতুবরণের ঝুঁকি বেশি। অপরদিকে যারা প্রচুর পনির খান তাদের ‘এএমআই’ থেকে মৃত্যুবরণের ঝুঁকি আবার কম।
গবেষণার সূত্র ধরে ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের সনদস্বীকৃত পুষ্টিবিদ ক্যাথরিন জের্ভাসিও বলেন, “এই গবেষণা আমাকে অবাক করেছে। কারণ আমি আমার রোগীদের নিয়মিত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। অপরদিকে যেহেতু এই খাবারগুলোতে কোলেস্টেরল ও ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’য়ের মাত্রা বেশি, অতিরিক্ খেলে তা থেকে হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি হয় এটাও সঠিক।”
দুগ্ধজাত খাবারের মধ্যে তফাৎ প্রসঙ্গে জের্ভাসিও বলেন, “গবেষণায় ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে দুধ বেশি পান করলে স্ট্রোক থেকে মৃত্যুবরণের ঝুঁকি বাড়ে। তবে এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। বিশেষ করে এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা ঠিক কতটা দুধ পান করেছেন যাকে অতিরিক্ত বলা হচ্ছে। কারণ সেই অতিরিক্ত মাত্রাই অংশগ্রহণকারীদের কোলেস্টেরল ও ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’য়ের মাত্রা বাড়িয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “মাখন আর পনির নিয়ে যদি বলতে হয়, তবে মাখনে ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’, ‘ট্রান্স ফ্যাট’ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক বেশি পনিরের তুলনায়। দুটোই যদি ১০০ গ্রাম করে নেওয়া হয় তবে মাখনে আছে ৫১ গ্রাম ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’, তিন গ্রাম ‘ট্রান্স ফ্যাট’, ২১৫ মি.লি. গ্রাম কোলেস্টেরল। সেই তুলনায় শেডার চিজ’য়ে থাকে যথাক্রমে ১৯ গ্রাম, ১ গ্রাম আর ১০০ মি.লি. গ্রাম।”
জের্ভাসিও-র মতে, “বিভিন্ন ধরনের দুগ্ধজাত খাবারের মধ্যে যে দুটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে তা হল কতটুকু খাওয়া উচিত আর কোন খাবারটা শরীরের জন্য দরকারী।”
যাদের হৃদরোগ, ‘লিপিড প্রোফাইল’য়ের বিশৃঙ্খলা ও অন্যান্য ‘মেটাবলিক ডিজিজ’ আছে তাদের এই বিষয়টায় অত্যন্ত সাবধান হতে হবে।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারকে ক্ষতিকর খাবার হিসেবে দেখা কখনই উচিত হবে না। স্বাস্থ্যগত অনেক গুণ আছে এদের। শুধু জানতে হবে খাওয়ার নিরাপদ মাত্রা এবং নিরাপদ ধরন। আর সবশেষে তা মনে চলতে হবে।