বন্ধুর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশে ভুল প্রক্রিয়া

main-qimg-1a1f8226d8702ec2e284a83755ed5a30-lq

বন্ধুর প্রতি সমর্থন দিতে গিয়ে অনেকেই হয়ত ভুলভাবে সহানুভূতি প্রকাশ করছেন। যা নিজের পাশাপাশি বন্ধুর জন্যও ক্ষতির কারণ হতে পারে।

বিপদে বন্ধুর পরিচয়। তবে বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে চুপ থাকাটও কাম্য নয়।

আর এই বিষয়টা খুব সাধারণভাবেই করা হয়।

ধরা যাক, আপনার কোনো এক বন্ধুর আচরণে পরিবর্তন দেখা গেল। বুঝতেই পারছেন তার কোনো সমস্যা চলছে, অথচ সে বলছে না।

এই অবস্থায় অনেকেই মনে করেন, ‘থাক ওটা তার ব্যাপার’, ‘কী না কী বলবো শেষে বন্ধুত্বটাই যাবে। তাই চুপ থাকাই ভালো।’

বোকার মতো সহানুভূতি প্রকাশের চাইতে বিচক্ষণতার সঙ্গে সহানুভূতি প্রকাশের উপকারিতা বেশি। কেউ ভুল করছে বলে তাকে সেই বিষয়ে সাবধান না করে তার পাশে থাকটাই বোকার মতো সহানুভূতি প্রকাশের উদাহারণ।

তাই বিচক্ষণতার সঙ্গে সহানুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যাতে ভুল সহানুভূতি প্রকাশন না করা হয়।

শক্ত কথা বলা এড়িয়ে যাওয়া

বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখা, তাকে কষ্ট না দেওয়া, এটা আপনার বিষয় না মনে করে এড়িয়ে যাওয়া- এরকম বিভিন্ন কারণে অনেকেই হয়ত বন্ধুকে শক্ত কথা বলা এড়িয়ে যান।

তবে চুপ থাকাটাও ঠিক না।

এই বিষয়ে ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিউ হ্যাম্পাশারের মনোবিজ্ঞানি লিয়ানা স্টকার্ড বলেন, “লক্ষ করার পরও সেসব বিষয় নিয়ে কথা বলা এড়িয়ে গেলে, আপনার বন্ধু সেই কাজগুলো করেই যেতে থাকবে।”

যা করা উচিত: শক্তভাবে হলেও সহানুভূতির সুরে নিজের মনোভাব প্রকাশ করতে হবে।

স্টকার্ড বলেন, “যদিও এটা খুবই জটিল পন্থা। তারপরও সঠিক সিদ্ধান্ত হবে বন্ধুকে নিজের চিন্তার বিষয় জানানো। এক্ষেত্রে বন্ধুর দিকে থেকে নেতিবাচক ব্যবহার পেলেও সেটা মেনে নিয়েই আগাতে হবে।”

যেমন বলা যেতে পারে- বুঝতে পারছি কিছু একটা হচ্ছে, তোমাকে নিয়ে আমি চিন্তিত। সব কিছু কি ঠিক আছে? আমি কি কোনোভাবে তোমাকে সাহায্য করতে পারি?

সন্দেহজনক আচরণ এড়িয়ে যাওয়া

বন্ধুর কোনো বিষয় নিয়ে বিরক্ত বোধ করা, যেমন- কথার মাঝে ‘বাঁ হাত ঢোকানো’ বা তার যুক্তিহীন কথা বা কাজ করাতে হয়ত আপনি অস্বস্তিবোধ করছেন ঠিকই, কিন্তু বন্ধুইতো মনে করে বিষয়টা চেপে যাচ্ছেন।

ভাবছেন- সে তো আর কষ্ট দেওয়ার জন্য এসব করছে না।

এটাও এক ধরনের বন্ধুর প্রতি ভুল সহানুভূতির প্রকাশ। যা আপনার বন্ধুকে ‘বেনিফিট অফ ডাউট’য়ের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। তবে এই ক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত হবে নিজের কথাটা বলা।

ফ্লোরিডার ‘লাইসেন্সড মেন্টাল হেল্থ কাউন্সিলর’ উইলো গোল্ডফার্ব একই প্রতিবেদনে বলছেন, “আপনি হয়ত বন্ধুর প্রতি অমায়িক আচরণ দেখিয়ে বিষয়গুলো এড়িয়ে যাচ্ছেন। তবে দুই পক্ষের জন্যই এটা ক্ষতিকর।”

যা করা উচিত: নিজের অস্বস্তি বা উদ্বেগের বিষয়টা যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে হবে।

গোল্ডফার্ব বলেন, “নিজেই জিজ্ঞেস করুন ঠিক কীভাবে বললে সমস্যার সমাধান হবে। কোনো বিষয়টা কীভাবে করার কারণে বা বলার জন্য আপনার খারাপ লাগছে সেটা বন্ধুকে বুঝিয়ে বলতে হবে। এক্ষেত্রে কথা বলার মাধ্যমে নিজের পাশাপাশি বন্ধুর প্রতিও সহানুভূতি প্রকাশ করছেন।”

যে কোনো মূল্যে সমর্থন দেওয়া

সবসময় বন্ধুর ওকালতি করা মনে এই নয় তাকে সঠিকভাবে সমর্থন করা। এর ফলে বন্ধুটির চাকরি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক বা ব্যক্তি জীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

স্টকার্ড বলেন, “বন্ধুকে সমর্থন করাটা স্বাভাবিক। তবে কোনো কোনো সময় তার সিদ্ধান্তের বিপরীতে কথা বলাও এক ধরনের সহানুভূতি দেখানো হয়।”

ধরা যাক, আপনার কোনো বন্ধু অন্য বন্ধুর প্রাক্তনের সঙ্গে প্রেম করা শুরু করলো। আর আপনি ভাবছেন বিষয়টা ঠিক হচ্ছে না।

“স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয়টা অন্যান্য বন্ধুসহ নিজের বন্ধুত্বের সম্পর্কের মাঝেও আঘাত হানতে পারে। এমনকি এই বিষয় নিয়ে কথা না বলে শুধু নিজেদের নয়, ওই বন্ধুর সম্পর্কের ক্ষেত্রেও যে বিপদ হতে পারে সেই বিষয়টাও এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে” বলেন স্টকার্ড।

যা করা উচিত: এই ক্ষেত্রে বন্ধুর মুখোমুখি হয়ে জানাতে হবে বিষয়টা আপনি সমর্থন করছেন না। ব্যাখ্যা করতে হবে কীভাবে বিষয়টা সকলের ক্ষেত্রে আঘাত দিতে পারে।

স্টকার্ড বলেন, “হয়ত তারা প্রথম অবস্থায় আপনার কথা মানবে না। তবে এভাবে সঠিক সহানুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে তারা একসময় নিজেদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে দ্বিতীয়বার চিন্তা করবে। অন্যরা আঘাত পেতে পারে এই বিষয়টা একসময় তারা চিন্তা করে দেখবে।”

Pin It