মালয়েশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম। দেশটির রাজপ্রাসাদ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় তিনি শপথ নিয়েছেন। মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে শনিবার আনোয়ার ইব্রাহিমের দল পাকাতান হারাপান (পিএইচ) জোট ৮২টি আসনে জয় পায়।
অন্যদিকে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের দল পেরিকাতান ন্যাসিওনাল (পিএন) পায় ৭৩ আসন। কোনো দলই ২২২ আসনের পার্লামেন্টে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সমর্থন দেখাতে পারেনি। দেশটিতে সরকার গঠনে ১১২ আসন নিশ্চিত করতে হয়।
৭৩ বছর বয়সি নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমের জীবন রাজনৈতিক উত্থান-পতনে ভরা। ক্ষমতার খুব কাছে থেকে বারবার ফিরে আসতে হয়েছে তাকে। বারবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার হাতছানি পেলেও শেষ পর্যন্ত তা অধরা থেকেছে। তিনি ছাত্রনেতা থেকে সংস্কারপন্থি অর্থনীতিবিদ, মন্ত্রী থেকে উপপ্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়া, বারবার কারাবরণ এবং মালয়েশিয়ার কয়েক দশকের শাসনকারী দলকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের প্রতিটি পর্যায়ের নায়ক।
তুখোড় এ মালয় নেতা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে সামলে ২৮ বছর আগে ১৯৯৩ সালে উপপ্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯৭ সালে এশিয়ায় অর্থনৈতিক সংকট শুরু হলে মাহাথিরের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বিন মোহাম্মদ তাকে বরখাস্ত করলে আনোয়ার ও তার সমর্থকরা সংস্কার আন্দোলন ‘রিফর্মাসি মুভমেন্ট’ শুরু করেন।
মাহাথির দুই দশকের বেশি সময় দেশ শাসন করে অবসর নিলে নতুন একাধিক প্রধানমন্ত্রীও আনোয়ারের ওপর দমন-পীড়ন অব্যাহত রাখেন। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ও তার স্ত্রী ব্যাপক দুর্নীতি করলে মাহাথির দেশের অর্থনীতি রক্ষায় আবার নতুন দল করে রাজনীতিতে ফেরেন। তিনি সঙ্গে নেন সাবেক সহযোদ্ধা আনোয়ারকে। মাহাথির অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা চান, অতীতের গ্লানি ভুলে আনোয়ারও সম্মতও হন মাহাথিরের প্রস্তাবে। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে মাহাথির ও আনোয়ারের রাজনৈতিক জোট দেশটির সাত দশকের ক্ষমতাসীন দলকে পরাজিত করে জয় পায়। তিনি মাহাথিরকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ দেন। শর্ত থাকে, দুই বছর পর আনোয়ার প্রধানমন্ত্রী হবেন। ২০২০ সালে মাহাথির পূর্ব সমঝোতা অনুসারে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে গড়িমসি করতে থাকেন।
এ নিয়ে গত ফেব্র“য়ারিতে ক্ষমতাসীন জোটে ভাঙন দেখা যায়। এর জেরে মাহাথির পদত্যাগ করেন। এরপর রাজা মাহাথিরের আপত্তি উপেক্ষা করে মুহিউদ্দীন ইয়াসিনকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন। শেষ পর্যন্ত তিনিও পদত্যাগ করেন। এসব প্রশ্নের মধ্যেই এখন জানা যাচ্ছে, মাহাথির স্থিরচিত্ত ছিলেন যাতে আনোয়ার ইব্রাহিম দেশের প্রধানমন্ত্রী না হন। তবে এবার আর শেষ রক্ষা হলো না। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আনোয়ার ইব্রাহিমই মালয়েশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন।