রাঘব-বোয়ালদের তদবিরে স্থবির দুদক

image-532320-1647720405

২০১৯ সালে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ-সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

সংস্থাটির নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে রতন তার সম্পদ বিবরণী দুদকে জমা দেন। এরপরও রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান-পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ আটকে আছে।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে দুদক। ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তাকে তলবি নোটিশ দেয় সংস্থাটি। দুদকে হাজির হলে তাকে টানা ৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদকের তৎকালীন জনসংযোগ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এই প্রকৌশলীর বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য আছে দুদকের কাছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কক্সবাজার বিমানবন্দর নির্মাণসহ ৫টি প্রকল্পের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ফলে ওইসব প্রকল্প ও তার ব্যক্তিগত সব নথি তলব করা হয়েছে। এ অবস্থায় ৩৩ মাস পার হয়েছে। অনুসন্ধান এখনো চলছেই।

সংসদ-সদস্য রতন ও প্রকৌশলী হাবিবের মতো শতাধিক রাঘববোয়ালের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জন অভিযোগের অনুসন্ধান ঝুলে আছে বছরের পর বছর। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কারও বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়নি মামলা। অভিযোগ আছে, ছোট ছোট দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান ও মামলার তদন্ত কাজ নিজস্ব গতিতে চললেও

‘রাঘববোয়াল’দের বেলায় তদবিরে স্থবির দুদক। এ অবস্থায় আজ ৯ ডিসেম্বর অনাড়ম্বরভাবে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন করেছে দুদক। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য-‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিশ্ব’। ২০১৭ সাল থেকে দুদক দিবসটি পালন করে আসছে। এ উপলক্ষ্যে দুর্নীতিবিরোধী প্রচার-প্রচারণা, আলোচনা সভা, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি নিয়েছে দুদক।

ঢাকঢোল পিটিয়ে দিবস পালন করলেও নির্ধারিত সময়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষ করতে পারছে না সংস্থার কর্মকর্তারা। এই ব্যর্থতায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের সরিয়ে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটাও করা হয়নি। উলটো সাহসের সঙ্গে অনুসন্ধানে সত্য উদঘাটন করে ফেঁসে গেছেন কোনো কোনো কর্মকর্তা।

খোদ হাইকোর্ট দুদকের কাজের ধীরগতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। হাইকোর্ট বলেছেন, দুদক আইন অনুযায়ী কমিশনের উচিত নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অভিযোগের অনুসন্ধান বা তদন্ত শেষ করে অভিযুক্তকে বিচারের আওতায় আনা। সর্বশেষ বেসিক ব্যাংকের ৫৬ মামলার তদন্ত শেষ করতে ৩ মাস সময় বেঁধে দিয়েছে হাইকোর্ট।

জানতে চাইলে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘বড় মাছ ধরতে বড় জাল বা হাতিয়ার লাগে। আমাদের দেশে যারা বড় বড় জালিয়াতিতে জড়িত তাদের অনেক লম্বা ও অদৃশ্য হাত থাকে। তাদের ধরতে হলে আমাদেরও আটঘাট বেঁধেই নামতে হয়। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। এখানে কোনো ধরনের গাফিলতি নেই। কোভিডের কারণে দুই বছর কাজ অনেক বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এখন সেই অবস্থার উত্তরণ ঘটেছে। তবে সব মিলিয়ে আমরা প্রত্যাশার কাছাকাছি যেতে পারিনি। আমরা এ সংক্রান্ত আলোচনা, সমালোচনা ও মন্তব্য বিবেচনায় রাখছি এবং কাজের গতি বাড়াতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন. ‘আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই কেউ কেউ হয়তো ক্লিনচিট পেয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে অনেকেরই নাম আসে। তদন্তে যদি সঠিক সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া না যায় তাহলে তাদের আটকানো যাবে না-সেটাই স্বাভাবিক।’

অনুসন্ধান ও তদন্তে দুদক আইনের বিধান মানতে পারছে না কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে গিয়েই অনুসন্ধান ও তদন্ত বিলম্বিত হয়।’

প্রসঙ্গত, কমিশন আইনের ২০(ক) ১ ও ২ উপধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১৮০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত শেষ করতে ব্যর্থ হলে ৯০ দিনের মধ্যে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করতে পারবে দুদক। আর ২০০৭ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালার ৭ বিধিতে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ পাওয়ার পর সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করতে বলা হয়েছে।

এ সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করতে না পারলে যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আরও ৩০ দিন সময় নিতে পারবেন। ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ১৯ ও ২০ ধারায় অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষেত্রে দুদককে বিশেষ ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। তবে কমিশন ব্যর্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে নজির সৃষ্টি না করায় তদন্ত ও অনুসন্ধানে কেউই বেঁধে দেওয়া সময়ের বিধান মানছেন না।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও ব্যক্তি পর্যায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৯-র সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শেষে পর্যায়ক্রমে ২১ সংসদ সদস্যসহ ১১৮ জনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানে নামে দুদক।

এদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিতর্কিত ঠিকাদার জিকে শামীম, যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, প্রশান্ত কুমার হালদার, বজ গোপাল সরকার, ওমানে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী নাদিম, প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান মুন্সী, আবদুল হাই, মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, সংসদ-সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, সংসদ-সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ, সাবেক যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক চৌধুরী, আনিসুর রহমান, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি, কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ, সাবেক কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোল্লা আবু কাওসার, প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন, উৎপল কুমার দে, ফজলুল হক মধু, শওকত উল্লাহ, ফজলুল হক, রোকন উদ্দিন, আব্দুল কাদের, আফসার উদ্দিন, আব্দুল মোমেন চৌধুরী, ইলিয়াস আহমেদ, স্বপন চাকমা, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিল মঈনুল হক মঞ্জু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল আলম সিদ্দিকী, রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন প্রমুখ।

জানা গেছে, জিকে শামীম, প্রশান্ত কুমার হালদার, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ হাতেগোনা কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে মামলা দায়ের করা হলেও বাকিরা এখনো অধরা। তাদের অনেকেই তদবিরের মাধ্যমে অনুসন্ধান নথি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন। আবার কেউ কেউ ‘ক্লিনচিট’ নিয়েছেন।

২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সরকার দলীয় সংসদ-সদস্য ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. নজরুল ইসলাম বাবুর অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবও তলব করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের মাধ্যমে দুদক তার ব্যাংক হিসাব ও সম্পদের ফিরিস্তি সংগ্রহও করে। নির্বাচনি হলফনামায়ও তার সম্পদের অস্বাভাবিক উল্লম্ফন প্রকাশ পেয়েছে।

এরপরও ২০১৮ সালের ৫ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয়ের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ অনুসন্ধানে প্রমাণিত না হওয়ায় কমিশন কর্তৃক তা পরিসমাপ্ত করা হয়েছে।’ একই প্রক্রিয়ায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের যেসব প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল তাদের প্রায় সবাইকে ‘ক্লিনচিট’ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

আরও জানা গেছে, রাজশাহী-১ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি ও সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, খাসজমি ইজারায় দুর্নীতিসহ অন্তত ২০ ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির একটি অভিযোগ দুদকে জমা পড়ে। সেটি যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। কিন্তু তিন বছর হতে চললেও অনুসন্ধান প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।

ঠিকাদারি কাজে নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে চট্টগ্রাম-৩ আসনের এমপি ও স্থানীয় জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুর রহমান মিতার বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করছে দুদক। সংস্থাটি তার সম্পদ খতিয়ে দেখতে দরকারি নথিপত্র তলব করে। কিন্তু দীর্ঘদিন পার হলেও তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান-পরবর্তী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এছাড়া শরীয়তপুর-১ আসনের সাবেক এমপি বিএম মোজাম্মেল হক, পিরোজপুরের সাবেক এমপি এমএ আউয়াল, নরসিংদী-২ আসনের সাবেক স্বতন্ত্র এমপি কামরুল আশরাফ খান পোটন, ময়মনসিংহের নান্দাইলের এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন, চাঁদপুর-৪ আসনের সাবেক এমপি শামসুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলছে বছরের পর বছর ধরে। এ তালিকায় পুরান ঢাকার আলোচিত এমপি হাজী মো.সেলিমের নামও আছে। এদের মধ্যে অনুসন্ধান শেষে সাবেক এমপি এমএ আউয়ালের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।

জানতে চাইলে এমএ আউয়াল বলেন, ‘সরকার দলের একজন মন্ত্রীর ইন্ধনে দুদক আমার ও আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এটা ওপেন সিক্রেট। যেসব অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাতে আমার কোনো দায় নেই।’

সাবেক এমপি ও বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল আশরাফ খান টেন বলেন, ‘নির্বাচন ঘনিয়ে আসার কারণে একটি মহল তার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। দুদক অনুসন্ধান চালিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দিয়েছে।’

সংসদ-সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে সেগুলো সত্য নয়। দুদকও কিছু পায়নি। অভিযোগ নিষ্পত্তিও হয়নি।’

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম-৩ আসনের সংসদ-সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ছিল সেটা নিষ্পত্তি করে দুদক আমাকে চিঠি দিয়েছে। এখন আর আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান নেই।

সংসদ-সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ‘দুদক আমার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে। কোনো অঙ্গতি পেলে আমার কাছে কিছু জানতে চাইলে আমি জবাব দেব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কিছু না চাইলে আমি আগ বাড়িয়ে জানাতে যাব কেন।’

সংসদ-সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিনের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। শাওনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তুহিন কল রিসিভ করেননি।

বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপিদের মধ্যে রয়েছেন লালমনিরহাট-৩ আসনের আসাদুল হাবিব দুলু, নোয়াখালী-৪ আসনের মো. শাহজাহান, বগুড়া-৩ আসনের আব্দুল মোমিন তালুকদার ও ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক এমপি মো. শহিদুজ্জামান বেল্টু। এছাড়া মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের এমপি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব এবং পটুয়াখালী-১ আসনের সাবেক এমপি এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক।

তবে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সাবেক নারী সংসদ-সদস্য সেলিনা ইসলামসহ পরিবারের আরও দুই সদস্যের বিরুদ্ধে দ্রুত অনুসন্ধান শেষে মামলা করেছে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

পাপুল কুয়েতে গ্রেফতার ও সাজা হওয়ার পরই দুদকের অনুসন্ধানে গতি পায় বলে জানা গেছে। তবে পাপুলের অর্থ পাচারের সহযোগী হিসাবে সন্দেহের তালিকায় থাকা এনআরবিসি ব্যাংকের এমডি তমাল পারভেজ ও পরিচালক আদনান ইমামের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কাজ রহস্যজনক কারণে থেমে আছে। বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারের অভিযোগে তাদের দুদকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের পর অনুসন্ধানে আর গতি নেই।

জানা গেছে, শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরই নয়, অনেক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও আমলাদের দুর্নীতির তদন্তও এগোচ্ছে না। ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে তলব করা হয়। এর আগে তার অনিয়ম, দুর্নীতি ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক। এখন পর্যন্ত সন্ধান অব্যাহত।

এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন. তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় দুদকের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। পাশাপাশি অভিযোগের তালিকায় প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা আছেন বলে দুদক প্রভাবিত হচ্ছে-এমন প্রশ্নও উঠতে পারে। তাই আইনি কাঠামোর মধ্যে নির্ধারিত সময়ে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করা দরকার। বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাও কঠিন হয়।

Pin It