ডিজিটাল বাংলাদেশ : নতুন বাস্তবতায় করণীয়

image-623711-1670628752

২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনি ইশতেহার ‘দিন বদলের সনদ’ ঘোষণা করেছিলেন বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই ইশতেহারে বলা হয়, ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা সামনে নিয়ে আসেন, তখন পর্যন্ত বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে ছিল।

২০২১ সালের মধ্যে জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৯ সালের নভেম্বরে সাত দিনব্যাপী ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ সামিট’ শীর্ষক সম্মেলন আয়োজনের মধ্য দিয়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম শুরু করে সরকার। তিন মেয়াদে ১৩ বছর পেরিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সরকার কতটুকু সফল হয়েছে তার বিশ্লেষণ করলে আমাদের সামনে একটা স্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠবে।

আইসিটি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় দেশে ই-গভর্নমেন্ট সেবাপ্রাপ্তি ছিল শূন্যের কোঠায়, বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি ৫০ লাখে। গেল ১৩ বছরে আইসিটি খাতে প্রশিক্ষণ পেয়েছে ১৫ লাখ ১৫ হাজার, ১৩ বছর আগে দেশে ডিজিটাল ক্লাসরুম/ডিজিটাল ল্যাব একটিও ছিল না, সেই শূন্যতা কাটিয়ে দেশে এখন তা ৮৬ হাজারে দাঁড়িয়েছে। চলমান আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব নির্মাণ প্রকল্প।

দেশে ৭ হাজার ৬০২টি ডিজিটাল সেন্টার, ৮ হাজার ২০০ ডিজিটাল ডাকঘরের মাধ্যমে ৬০০ ধরনের ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। মোবাইল সিম নিবন্ধন হচ্ছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে, জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্টকার্ড আকারে প্রদান করা হচ্ছে, যা এক সময় ধারণারও বাইরে ছিল। ইতোমধ্যে দেশে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) যুগ পেরিয়ে ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে। ২০১৮ সালের ১২ মে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশ বিজ্ঞানের যুগে প্রবেশ করেছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে প্রায় সাড়ে ১২০০ ধরনের সেবা পাওয়া যাচ্ছে। ২০০৮ সালে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিলেন মাত্র ৮ লাখ, যা গত অক্টোবরে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৬১ লাখেরও বেশি। ২০১২ সালের জানুয়ারিতেও যেখানে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৬৫ লাখ, সেখানে গত অক্টোবরে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ১৬ লাখে। ২০০৮ সালে দেশে ৪-জি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল শূন্য, আর বর্তমানে দেশের ৯৮ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৪-জি মোবাইল প্রযুক্তির আওতায় এসেছে। গত বছর ১২ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলক ৫-জি চালুর মধ্য দিয়ে আমরা আরও গতিশীল যুগে প্রবেশ করেছি। আজ বাংলাদেশ ৫৭তম স্যাটেলাইট ক্লাবের সদস্য, পারমাণবিক ক্লাবের সদস্য।

দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়েছে অপটিক্যাল ফাইবার। গেল ১৩ বছরে দেশে গড়ে উঠেছে ৪৬টি হাইটেক পার্ক ও ইনকিউবিশন সেন্টার। ২০০৮ সালে দেশে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ছিল শূন্য, সেই সংখ্যা বর্তমানে সাড়ে ৬ লাখ ছাড়িয়েছে। বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৫ সালের মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য ৩০০টি স্কুল অব ফিউচার, ১৩০০০ শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, ৬৪টি জেলায় একটি করে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারসহ মোট ৯২টি হাইটেক পার্ক স্থাপন করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।

বাংলাদেশ আজ বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ডাটা সেন্টারের দেশ! আমরা আজ সুবিশাল ওয়েব পোর্টালের মালিক যেখানে যুক্ত আছে ৪৬ হাজারেরও বেশি সরকারি অফিস, ২০০৮ সালে যা ছিল শূন্যের কোঠায়। জাতীয় তথ্য বাতায়ন ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় তথ্য বাতায়নে ১ মিলিয়ন নাম্বার নিয়ে ই-ডিরেক্টরি করা হয়েছে। মাসে এ ই-সার্ভিস ব্যবহার করছে ২ মিলিয়ন মানুষ। ওয়েবসাইটে রয়েছে ৫০ লাখ কনটেন্ট। আর এসবের উন্নয়নে কাজ করছে এক হাজারেরও বেশি টিম। কনটেন্ট আপডেট করার জন্য আছেন এক লাখেরও বেশি প্রশিক্ষিত কর্মী।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ক্লাসরুম, ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সব কনটেন্ট ডিজিটাল করা, সরকারের অভ্যন্তরে সম্পূর্ণ ডিজিটাল রূপান্তর করা, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন থেকে শুরু করে পরীক্ষার ফলপ্রাপ্তি, চাকরির আবেদনসহ সরকারি প্রায় সব ধরনের সেবা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে মানুষ ঘরে বসেই জরুরি খাদ্য সহায়তা, করোনাবিষয়ক তথ্যসেবা, টেলিমেডিসিন সেবা পেয়েছেন।

ইন্টারনেট ব্যবহার সহজলভ্য হওয়ায় দেশে মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, ই-কমার্স খাতেরও দ্রুত জনপ্রিয়তা বেড়েছে এবং দ্রুতগতিতেই এ খাতের প্রসার হচ্ছে। অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই মানুষ বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদির বিল এখন পরিশোধ করতে পারছে।

করোনা মহামারিতে সারা দেশের মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহারের উপকারিতা পেয়েছে। আজ প্রত্যন্ত অঞ্চল একেবারে গ্রামে বসে কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ যে কোনো তথ্য পাচ্ছেন। করোনার সময়েও আমাদের অর্থনীতি অন্যান্য দেশের তুলনায় মজবুত অবস্থায় আছে। এটা শুধু ডিজিটালাইজেশনের কারণে সম্ভব হয়েছে। মোবাইলে আর্থিক সেবা, রাইড শেয়ারিং, ই-কমার্স, বাস- ট্রেন-বিমানের টিকিট ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি সেবা মিলছে। ই-পর্চা, ই-মিউটেশন, ই-পাসপোর্ট, ই-চালান, ই-টেন্ডার, ইএফটি, ই-নথি, অনলাইনে পেনশনভাতাসহ নানা সেবার কারণে মানুষের জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। ই-টেন্ডার, ই-নথির কারণে দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডে গতি ও স্বচ্ছতা এসেছে।

করোনা আতঙ্কের মধ্যে ভার্চুয়াল আদালত চালু করে বিচারিক কার্যক্রমও সচল রাখা গেছে। ইতোমধ্যে ৬০০ সেবা অনলাইনে এসেছে। পাঁচ হাজার ৬০০ ডিজিটাল সেন্টার থেকে ৬০০ ধরনের সেবা পাচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। জরুরি সেবা ‘৯৯৯’, সরকারি তথ্য সেবা হেল্প লাইন ‘৩৩৩’ থেকে মানুষ উপকার পাচ্ছে। ২০১৮ সালে যাত্রা করা ‘পরিচয়’-এর মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া সহজ হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকার যেসব সেবা ও অবকাঠামো ইতোমধ্যে তৈরি করেছে কিংবা যেসব বড় বড় পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো টেকসই ও সুসংহত করতে জরুরি ভিত্তিতে এখন যেসব কাজ করতে পারে তার দু-একটা উদাহরণ আমরা দিতে পারি :

১. করোনা মহামারিতে সারা দেশের মানুষ যখন গৃহবন্দি তখন আইসিটি অধিদপ্তরের কয়েকজন তরুণ প্রোগ্রামার সম্পূর্ণ বিনা খরচে করোনা টিকা পোর্টাল কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’ তৈরি করে, যা ব্যবহার করে কোটি কোটি মানুষ টিকা গ্রহণ করে এবং এখনো করে যাচ্ছে। ফলে একদিকে সরকারের যেমন শত কোটি টাকার সাশ্রয় হয়েছে, প্রকিউরমেন্টের সময় বাঁচানো গেছে এবং মানুষের জীবন বেঁচেছে তেমনি সরকারের একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে সামষ্টিক চেষ্টায় বৃহৎ অর্জন সম্ভব।

এখন প্রশ্ন হলো, আইসিটি অধিদপ্তরের এসব তরুণ কর্মকর্তা একত্রিত না হলে কিংবা একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ না পেলে কিংবা একই দপ্তরের আওতায় না থাকলে ‘সুরক্ষা’র মতো এত বড় অর্জন আমাদের দ্বারা অর্জন করা সম্ভব হতো কিনা? কিংবা বিষয়টা এভাবেও দেখা যেতে পারে যে শুধু আইসিটি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দ্বারাই যদি এত বড় অর্জন সম্ভব হয় তাহলে সারা দেশের সব আইসিটি কর্মকর্তাদের যদি সামষ্টিক ইফোর্ট পাওয়া যায় তাহলে এর চেয়েও বড় কিছু অর্জন করা সম্ভব কিনা? যদি তাই-ই হয় তাহলে সরকার যত দ্রুত সম্ভব সব আইসিটি জনবলকে একটা একক লাইন মিনিস্ট্রির আওতায় নিয়ে এলে এমন হাজারো অমিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে এবং ‘সুরক্ষা’র মতো আরও বৃহৎ লক্ষ্য অর্জন করা যে সম্ভব হবে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।

২. বাস্তবতার আলোকে দেখা যায়, সব দপ্তরের কাজের পরিধি এক নয়। ধরা যাক, পিএসসি চাকরি প্রার্থীদের নিয়ে কাজ করে সেখানে ডেটাবেজের কাজের গুরুত্ব বেশি, পিএসসিতে ডেটাবেজে দক্ষ একজন কর্মকর্তা পদায়ন পেলে পিএসসির কাজে যেমন গতিশীলতা আসবে তেমনি ডেটাবেজে দক্ষ কর্মকর্তার জব স্যাটিস্ফ্যাকশনও নিশ্চিত হবে; কিন্তু ওই কর্মকর্তা যদি অন্য কোনো দপ্তরে চাকরি পায় যেখানে ডেটাবেজের কাজ নেই, তাহলে একদিকে যেমন ওই কর্মকর্তা তার দক্ষতা হারাবে এবং তার কাছ থেকে ওই প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চটা নিতে পারবে না, তেমনি পিএসসি ও একজন ডেটাবেজে দক্ষ কর্মকর্তার অভাবে ভুগবে।

ফলে একদিকে যেমন রিসোর্স নষ্ট হবে অন্যদিকে রিসোর্স স্বল্পতার কারণে সরকারের ক্ষতি হবে। বর্তমানে যে সিস্টেমে আইসিটির জনবল বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা দপ্তরে নিয়োগ পাচ্ছে তাতে অবস্থাটা এমনই দাঁড়িয়েছে। আইসিটি জনবল বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এসব বিচ্ছিন্ন দ্বীপকে যদি শুধু কানেক্ট করা যায় তাহলে যে এনার্জি বা ইফোর্ট তৈরি হবে যা দিয়ে সরকার অনায়াসেই টেকসই ডিজিটাল বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণ করতে পারবে বলে আশা করা যায়।

৩. রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা ইরান-যুক্তরাষ্ট্র বৈরিতা থেকে এটা আমাদের কাছে আরও স্পষ্ট হয়েছে যে, আমরা এখন একটা গ্লোবাল ভিলেজে বাস করছি, যেখানে গ্রামের কোনো একটা জায়গায় সমস্যা হলে তা পুরো গ্রামকে প্রভাবিত করে ফেলছে। এ থেকে আমরা আন্দাজ করতে পারি, বর্তমান যুদ্ধ আর কামান, গোলা-বারুদ কিংবা অতীতের হস্তীবাহিনীর যুদ্ধ নেই। তার চেয়ে বরং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কিংবা সাইবার স্পেস দখল অনেক কার্যকর।

সংগত কারণেই আমাদের ডিজিটাল অ্যাসেট তথা ক্রিটিক্যাল আইসিটি ইনফ্রাস্ট্রাকচারগুলোর নিরাপত্তা বিধান, সাইবার ওয়ার মোকাবিলা কিংবা আমাদের সাইবার স্পেস সুরক্ষিত রাখার জন্য সিকিউরিটি রিসোর্স পুল কিংবা ডিজিটাল আর্মি দরকার। যারা আমাদের সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরীদের ন্যায় প্রিয় মাতৃভূমির সাইবার স্পেস পাহারা দেবে। এজন্য সারা দেশের সব আইসিটি জনবল যদি একটা সিঙ্গেল লাইন মিনিস্ট্রির আওতায় আসে তাহলে এদের মধ্য থেকে ডিজিটালি চৌকস কর্মকর্তাদের নিয়ে সরকার তার সাইবার সোয়াট গঠন করতে পারে যারা কিনা দেশের ভার্চুয়াল জগৎকে নিরাপদ রাখতে কাজ করতে পারবে।

৪. চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মেধার বিকল্প নেই। মেধার যথাযথ মূল্যায়ন ও মেধাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে মেধাবীদের ধরে রাখার উপায় তৈরি করতে হবে। আমাদের প্রকৌশল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হতে বের হওয়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। প্রতিবছর কিছু মেধাবী মুখ গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজনে চাকরি পাচ্ছে; তারা সেখানে কৃতিত্বের সঙ্গে দেশের মুখ উজ্জ্বল করলেও তারা চলে যাচ্ছে। এদের ধরে রাখার জন্য, এদের মেধার সর্বোচ্চটা পাওয়ার জন্য সরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আইসিটি সেক্টর বড় একটা সম্ভাবনার জায়গা।

কেননা আইসিটির কোনো বাউন্ডারি নেই। সরকার আইসিটি সেক্টরের কর্মপরিবেশের উন্নয়ন ঘটিয়ে মেধাবীদের ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে এসব মেধাবীরা বিদেশগামী না হয়ে আইসিটি সেক্টরে আসার আগ্রহ পাবে ফলে সরকারের ভার্চুয়াল জগৎ সুরক্ষিত হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাইবার থ্রেট থেকে দেশমাতৃকা নিরাপদ থাকবে। সরকারের উচিত ডিজিটাল বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্জনকে সুরক্ষিত করতে যত দ্রুত সম্ভব আইসিটি সেক্টরের কর্মপরিবেশের উন্নয়ন ঘটিয়ে এসব মেধাবীর জায়গা করে দেওয়া, যেন তারা একই মেধা বাইরে না দিয়ে দেশের জন্য কাজে লাগানোর ঠাঁই পায়; অন্যথায়, ডিজিটাল বাংলাদেশের মতো এত বৃহৎ ও মহৎ অর্জন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।

আমরা জানি, ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্জনগুলোকে সুসংহত ও সমুন্নত করতে সরকার নীতিনির্ধারণী অনেক কাজ করছে। এসব জনগুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের নেপথ্য কারিগর আইসিটি জনবলকে একত্রিত করে সেখান থেকে বেছে বেছে বিভিন্ন কাজের উপযোগী রিসোর্স ফোর্স যেমন সরকার তৈরি করতে পারে, তেমনি সরকার চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।

আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ২০০৮ সালে যখন আমাদের কিছুই ছিল না তখন যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন দেখিয়েছেন সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ফসল ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে যা হওয়া দরকার যা করা দরকার সরকার তাই-ই করবে সেটা আইসিটি ক্যাডার সৃজন করেই হোক কিংবা সব মন্ত্রণালয়/দপ্তরের আইসিটি জনবলকে আইসিটি ডিভিশনের প্রশাসনিক কাঠামোর আওতায় এনেই হোক। টেকসই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এটা যে এখন সময়ের দাবি তা বোধকরি পাঠকমাত্রই একমত পোষণ করবেন।

মো. মনিরুজ্জামান : প্রোগ্রামার, ডাক অধিদপ্তর, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ

Pin It