রাতে ঘুমানোর আগে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা ও সে অনুযায়ী চলা ঘুম ভালো করার পাশাপাশি শরীর সুস্থ রাখতেও সহায়তা করে।
নিউ ইয়র্ক’য়ের শরীরচর্চাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘রো’য়ের ‘বডি প্রোগ্রাম’য়ের সহকারী, নিবন্ধিত ব্যক্তিগত ব্যায়াম ও পুষ্টি প্রশিক্ষক মাইক বোল ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “রাতের রুটিনে স্থির থাকলে ভুল বশত ডায়েটে ব্যাঘাত ঘটার ঝুঁকি কম থাকে।”
ওজন কমাতে রাতের অভ্যাসগুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। ১) এমন কিছু অভ্যাস যা ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে গতিশীল করে। ২) এমন কিছু অভ্যাস যা রাতে ভালো ঘুমের উপকারী। এতে পরেরদিন সতেজ অনুভূতি হয়।
দৈনিক সাত থেকে নয় ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন ঘুম, পরের দিন কাজের শক্তি যোগায়।
ডা. বোল বলেন, “ওজন কমাতে দেহে জমে থাকা ক্যালরি খরচ করার মতো শক্তি থাকা প্রয়োজন। এটা হতে পারে নিয়ম বাঁধা কর্মকাণ্ড যেমন- জিম করা, বাইরে দৌঁড়ানো অথবা নিয়মিত ঘরের কাজ কর্ম বা বাজার করা ইত্যাদি।”
ওজন কমাতে সহায়ক এমন কয়েকটি রাতের অভ্যাস সম্পর্কে জানান তিনি। নিয়মিত এসব অভ্যাস অনুযায়ী চললে উপকার পাওয়া যাবে।
“যখনই খাবার খাওয়া হোক না কেনো শরীর একই প্রক্রিয়ায় তা পরিপাক করে থাকে। যারা বেশি রাতে, ক্যালরি বহুল অথবা কেবল মনের ক্ষুধা মিটাতে খাবার খান, তা এড়ানো উচিত। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খাবার খাওয়া এবং বাড়তি ক্যালরি বহুল খাবার না খাওয়া উচিত”, বলেন এই প্রশিক্ষক।
রাতে ঘুমানোর আগে হালকা নাস্তা খেতে চাইলে তা যেন ‘কেইসিন’ বা দু্গ্ধজাত প্রোটিন’ সমৃদ্ধ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ব্যাখ্যা করে বোল বলেন, “কেইসিন প্রোটিন ধীরে হজম হয়। তাই রাতে ঘুমানোর আগে এমন খাবার খাওয়া দেহ পুনর্গঠন ও পেশি তৈরিতে সহায়তা করে।”
শরীর চর্চা করা- সঠিক সময়ে
রাতে ঘুমানোর আগে ব্যায়াম করা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তবে ডা বোল বলেন, “শরীর চর্চার পরের সময়েই শরীরে ক্যালরি ভাঙতে থাকে।”
“তাই, যদি সঠিক সময়ে শরীরচর্চা করা হয় যেমন- বিকালে হাঁটা বা সন্ধ্যায় ব্যায়াম, তবে দেহের বাড়তি ক্যালরি ঘুমের সময়েও হ্রাস পেতে থাকে।”
রাতে ঘুমানোর আগে অ্যালকোহল না খাওয়া
রাতে ঘুমানোর আগে অ্যালকোহল গ্রহণ করা শরীরের জন্য খারাপ।
ডা বোল বলেন, “অ্যালকোহল বাড়তি ক্যালরিযুক্ত। তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এর থেকে বিরত থাকা ভালো। এতে করে বাড়তি মেদ জমায় ঝুঁকি কমে। তাছাড়া অ্যালকোহল ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই রাতে ঘুমানোর আগে অধিক অ্যালকোহল গ্রহণ সকালে অস্বস্তির সৃষ্টি করে।”
আরও জানান, অনেক গবেষণায় দেখা গেছে তাপমাত্রা ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে। রাতে অপেক্ষাকৃত শীতল ঘরে ঘুমানো সারারাত ক্যালরি কমাতে সহায়ক।
এছাড়া, শীতল আবহাওয়ায় ঘুম ভালো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন’য়ের করা পর্যবেক্ষণ থেকে জানা যায়, নিরবিচ্ছিন্ন ও ভালো ঘুমের অন্যতম শর্ত হল শীতল আবহাওয়া। ভালো ঘুমের জন্য ঘরের আদর্শ তাপমাত্রা হল ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
নীল আলো এড়িয়ে চলা
ব্যবহৃত সকল ধরনের স্ক্রিন যেমন- মোবাইল, ল্যাপটপ ও টিভি ইত্যাদি নীল আলো বিচ্ছুরণ করে। ফলে তা সার্কাডিয়ান বা ঘুম চক্রে ব্যাঘাত ঘটায়।
ঘুমের যত কাছাকাছি সময় পর্যন্ত বৈদ্যুতিক পর্দা ব্যবহার করা হবে ঘুমে তত বেশি সমস্যার সৃষ্টি হবে। ভালো ঘুমের জন্য রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে নীল আলো থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
তাছাড়া বলা বাহুল্য, রাতে বিছানায় শুয়ে টেলিভিশন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘স্ক্রল’ করা মোটেও আরামদায়ক রুটিন নয়।
এক রুটিনে স্থির থাকা
একটি রুটিনে স্থির থাকা কেবল কর্মক্ষেত্র না, রাতে ঘুমানোর আগের সময়ের জন্যও প্রযোজ্য।
ব্যাখ্যা করে ডা বোল বলেন, “প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও সকালে একই সময়ে ওঠা দেহেঘড়ির ছন্দ ঠিক রাখতে প্রয়োজন। এক্ষেত্রে প্রতিদিন রাতে পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখা আবশ্যক।”
রাতে ঘুমানোর আগে চা পান বা গোসল করে নেওয়া আরাম দেয়
সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততা ভুলে রাতে ভালো ঘুমের জন্য এক কাপ ক্যামোমাইল চা বা ‘বাথ সলট’ দিয়ে গোসল করে নেওয়া আরামদায়ক।
ডা বোল আরও বলেন, “অনিদ্রার সমস্যা থাকলে এই ধরনের আরামাদায়ক কোনো একটা অভ্যাস দৈনিক রুটিনে যোগ করে নিলে ফলাফল ভালো যাবে।”