রাজধানীর সড়কে স্বাভাবিক দিনেই চলাচলে বাড়তি সময় নিয়ে বের হতে হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে ভোগান্তির শেষ নেই নগরবাসীর।
এরমধ্যে কোনো উৎসব কিংবা আয়োজন উপলক্ষে সড়কে ভোগান্তিও বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
আর মাত্র দুই দিন পরেই শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। এ সময়টাতে বিশেষ করে বিকেলে ইফতারের আগেই নগরবাসীর ঘরে ফেরার তাড়া থাকে। স্বাভাবিক সময়েই যানজটের নগরী খেতাব পাওয়া এ ঢাকায় রমজান মাসে সড়কে বাড়তি চাপ কীভাবে সামলাবে ট্রাফিক পুলিশ?
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ বলছে, রমজানের সময় সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের বাইরে অন্য পুলিশ সদস্যদেরও সড়কে দায়িত্ব পালনে যুক্ত করা হবে। ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সবাই সড়কে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাভাবিক দিনেই সড়কের যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে। বিশেষ করে অফিসের সময় সকাল ও বিকেলে সড়কে আটকে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যানবাহনের চাপে প্রায় প্রতিটি সিগনালে আটকে থাকতে হয় বাড়তি সময়।
এরমধ্যে রমজান মাসে প্রায় বেশিরভাগ মানুষই বিকেলে ইফতারের আগে ঘরে ফিরতে চান। সবার একসঙ্গে ঘরে ফেরার তাড়ায় সড়কে আরও বাড়তি চাপ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক।
এছাড়া, ঢাকার বাইরে থেকে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ কেনাকাটাসহ নানা প্রয়োজনে ঢাকায় প্রবেশ করবেন। রমজানের মাঝামাঝি সময় থেকে রাজধানীর শপিংমলগুলো কেন্দ্রিক মানুষের আনাগোনা বাড়বে। সবকিছু মিলিয়ে রমজান ও ঈদ কেন্দ্রিক বাড়তি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে ট্রাফিক পুলিশের।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, স্বাভাবিক দিনেই যানবাহনের চাপ সামলাতে ট্রাফিক বিভাগ হিমশিম খাচ্ছে। আর রমজানে পরিস্থিতি সামলানো আরও চ্যালেঞ্জিং হবে এটাই স্বাভাবিক। তারপরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছি।
রমজানে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ইতোমধ্যে দুই দফা বৈঠক করেছেন। সার্বিকভাবে প্রস্তুতি নিতে তিনি ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
রাজধানীর বনানী এলাকায় দায়িত্বরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, রমজান মাসে আমাদের করনীয় কি হবে তা নির্ধারণ করতে ঊর্ধ্বতনেরা একাধিকবার বৈঠক করে নানা নির্দেশনা দিয়েছেন। অবৈধ পার্কিং করে সড়কে প্রতিবন্ধকতা এবং হকারদের ফুটপাত দখলের বিরুদ্ধে বাড়তি নজরদারি থাকবে।
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহেদ আল মাসুদ বলেন, রমজানে বাড়তি চাপ বিবেচনায় ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের পাশাপাশি ক্রাইম বিভাগের পুলিশ সদস্যরাও সড়কে দায়িত্ব পালন করবেন। ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতনেরাসহ প্রত্যেকে সড়কে থেকে দায়িত্বপালন করবেন। নগরবাসীকে ইফতারের আগে ঘরে ফেরাতে ট্রাফিক বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। এজন্য ট্রাফিক সদস্যরা পথেই ইফতার করবেন।
ট্রাফিক বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, রমজানের মাঝামাঝি থেকে ঢাকার শপিংমলগুলোয়ও ভিড় হবে। সেজন্য শপিংমল এলাকাতেও যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। সার্বিকভাবে রমজানে সড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডিএমপি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে, এজন্য বিশেষ ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে এ বিষয়ে আমরা প্রতিনিয়ত বৈঠক করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করছি।
গত রোববার (১৯ মার্চ) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দফতরে আসন্ন পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বিশেষ সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে সভায় ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ গোয়েন্দা সংস্থা, ফায়ার সার্ভিস, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থা, দোকান মালিক সমিতি, বাস-মালিক সমিতি, লঞ্চ মালিক সমিতি, বিজিএমইএ বিকেএমইএ, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সমন্বয় সভায় আসন্ন পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকার ব্যাংক, বিপণী বিতান, শপিংমলসমূহের নিরাপত্তা, সড়ক, রেল ও নৌ-যান চলাচল এবং যাত্রীদের সার্বিক সুবিধা-অসুবিধা মনিটরিং, ভেজাল খাদ্যদ্রব্য ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্তে আলোচনা করে করণীয় নির্ধারণ করা হয়।