পাকিস্তানি শাসকের মতো মানুষের রক্ত চুষে নিচ্ছে সরকার: মির্জা ফখরুল

image-659188-1679932282

বর্তমান সরকার ‘পাকিস্তান বাহিনীর প্রেতাত্মা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার মুক্তিযোদ্ধাদের এক সমাবেশে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা কী যুদ্ধ করেছিলেন আজকের এই বাংলাদেশের জন্য? আজকের বাংলাদেশ এখন একাত্তর সালের পাকিস্তান বাহিনীর ও পাকিস্তানি শাসকের প্রেতাত্মার বাংলাদেশ।

পাকিস্তানিরা যেভাবে গায়ের জোরে শাসন ও শোষণ করেছে, মানুষের রক্ত চুষে নিয়েছে, আজকে একইভাবে এ সরকার বাংলাদেশের মানুষ ও তাদের রক্ত শোষণ করছে এবং মানুষকে তারা ভয়ংকরভাবে নির্যাতন করছে।’

ফখরুল বলেন, এমন বাংলাদেশ আমরা চাইনি। আমাদের পূর্বপুরুষরা একটা স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। যেখানে সব মানুষ সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা নিয়ে বাস করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, ৫২ বছর পরও বলতে হচ্ছে আমরা সেই বাংলাদেশ পাইনি। তার অন্যতম কারণ যে দলটি দাবি করে তারা স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল তারা ক্ষমতায় আসার পর তাদের আসল চেহারা বেরিয়ে আসে। ১৯৭২ সালের মতো একইভাবে তারা জনগণের সম্পদকে লুট করেছে, দুর্নীতি করেছে।

মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করাই আওয়ামী লীগের একমাত্র কাজ-এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্নীতি আর লুটপাট করে দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার। রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে নয়, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে। দেশকে মধ্যযুগীয় বর্বর দেশে পরিণত করা হয়েছে। তারা বলে, এত উন্নতি চোখে দেখে না অথচ সাধারণ মানুষের পেটের উন্নতি হয়নি। ঘর দিয়েছে দুই-তিন দিন পরপর ঘর ভেঙে পড়ে বলে পত্রিকায় রিপোর্ট হচ্ছে। নতুন ইসি গঠন করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে।

নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে সংলাপের নাটক করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এখনো এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিইনি। নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা ছাড়া আমরা সংলাপ করব না।

মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন তাদের দায়িত্ব হচ্ছে নতুন প্রজাতন্ত্রের কাছে সেই বাণী পৌঁছে দেওয়া, আমাদের যখন যৌবন ছিল তখন লড়াই করে একটা স্বাধীন ভূখণ্ড নিয়ে এসেছি। আর এখন তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার রক্ষায় তোমাদের আরেকটা মুক্তিযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আজকে দেশ রক্ষা, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারকে হটাতে হবে।

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে এই মুক্তিযোদ্ধা গণসমাবেশ হয়। এতে সারা দেশের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন। তাদের হাতে ছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

গণসমাবেশে মঞ্চে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য একটি চেয়ার সংরক্ষিত রাখা হয়। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রজাতন্ত্রের সাতজনকে (তারেক রহমান, শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ইশরাক হোসেন, নিপুণ রায় চৌধুরী, সোনিয়া সান্তা, জামাল হোসেন টুয়েল) জাতীয় পতাকা পরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেওয়া বাংলাদেশের পতাকা গ্রহণ করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন, সিরাজুল হক, শাহ আবু জাফর, মুক্তিযোদ্ধা দলের আবদুল হালিম, কামাল উদ্দিন, নুরুল করিম, এবাদুল হক, আবদুল খালেক মন্ডল, আবদুল মান্নান, মোকসেদ আলী মোঙ্গলিয়া, আব্বাস উদ্দিন, জহিরুল আলম তালুকদার রুকু, ওয়াহিদুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধার প্রজাতন্ত্রের নেতা শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ইশরাক হোসেন, নিপুণ রায় চৌধুরী, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ও ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠান শুরুর আগে ইনস্টিটিউশনের বাইরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীর উত্তম এবং গণসমাবেশের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন আরেক ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম।

নওগাঁয় সরকারি অফিসের এক মহিলা সহকারীর মৃত্যুর তথ্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের বাংলাদেশে একজন মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। যে র‌্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, নির্যাতন করে এই নারীকে হত্যা করা হয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আরও দু-একটা ঘটনা এর মধ্যে হয়েছে। যদিও কিছু দিন আগে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার পর নাটকীয়ভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু আবারও কেন ঘটছে? যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং তাদের আরও পুরস্কৃত করা হচ্ছে। তারা আরও বড় বড় পদ পাচ্ছেন। তাদের বলা হচ্ছে যে, পরবর্তীতে তাদের এমপি নমিনেশন দেওয়া হচ্ছে, কাউকে কাউকে নাকি হোম মিনিস্টার করা হবে… ইত্যাদি খবর পত্র-পত্রিকায় দেখতে পাই।

ভিন্নমতের মুক্তিযোদ্ধারা বঞ্চিত-এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থাৎ ভিন্ন মত পোষণকারী মুক্তিযোদ্ধারা এখন ভাতা পাচ্ছেন না। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম ওঠেনি। ভিন্নমতের লোকদের অত্যাচার-নির্যাতন করে দমন করে রাখতে চায় সরকার।

Pin It