ঘুম থেকে জেগে ওঠার কারণ হিসেবে আনন্দদায়ক কোনো বিষয় থাকাটা জরুরি।
দীর্ঘায়ু সম্পর্কে জানতে হলে ‘ব্লু জোন’ অর্থাৎ গ্রিসের দ্বীপ ‘একারিয়া’, ক্যালিফোর্নিয়ার ‘লোমা লিন্ডা’, ইতালির ‘সার্ডিনিয়া’, জাপানের ‘ওখানাওয়া’ এবং কোস্টা রিকার ‘নিকোয়্যা’ অঞ্চলেরর মানুষদের সকালের অভ্যাসগুলো সম্পর্কে জানতে হবে।
এইসব অঞ্চলের মানুষ প্রায় শত বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন।
দীর্ঘায়ুর ওপরে চালানো গবেষণার পথপ্রদর্শক ও লেখক ড্যান বুয়েটনার ‘ব্লু জোন’ অঞ্চলের মানুষদের দীর্ঘায়ুলাভের কারণ ও জীবনযাত্রার ওপরের গবেষণা করেন।
কম প্রোটিন গ্রহণ থেকে শুরু করে সম্প্রদায় ও সংযোগের গুরুত্ব এবং জ্ঞান ভাগ করে দিয়ে অন্যদেরও দীর্ঘায়ু লাভে সহায়তা করে।
ঘুম থেকে উঠেই দিনের শুরুতে এই অভ্যাসগুলো চর্চা করা যেতে পারে।
বুয়েটনার ‘ব্লু জোন’ থেকে অণুপ্রাণিত হয়ে দীর্ঘায়ু লাভে সকালে চারটি অভ্যাসে নিজেকে অভ্যস্ত করার যেসব পরামর্শ দেন সেগুলো জানানো হল ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে।
পুলকিত করে এমন কারণ খুঁজে বের করা
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনকে চাঙা করে দেয় এমন কোনো কারণ খুঁজে বের করা বেঁচে থাকার আগ্রহ বাড়ায়।
জাপানের অধিবাসীরা ‘ইকিগাই’ ধারণায় বিশ্বাসী। এর অর্থ হল আত্মাকে পুলকিত করে এমন কোনো কিছু আবিষ্কার করা। ‘ব্লু জোন’ অনুসারে বেঁচে থাকার একটা সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য থাকা জরুরি যা দীর্ঘায়ুলাভের সঙ্গে জড়িত।
কোনো উদ্দেশ্য বয়স বাড়ার সাথে সাথে সকালে ঘুম থেকে ওঠার মূল্য সৃষ্টি করে, যা মনকে ভালো রাখে।
কোথা থেকে শুরু করতে হবে তা বুঝে উঠতে না পারলে করণীয় সম্পর্কে ওয়েলআন্ডগুড ডটকমকে ‘অ্যাওয়াকনিং ইয়র ইকিগাই’ বইয়ের লেখক কেন মগি বলেছিলেন ‘ইনার ম্যাজিক’ বা অভ্যন্তরীণ জাদুকে জাগ্রত করা।
মগির মতে, এই প্রক্রিয়া মূলত পাঁচটি স্তম্ভের ভিত্তিতে গঠিত- ছোট থেকে শুরু করা, নিজেকে গ্রহণ করা, আশপাশের পরিবেশ ও মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা, ছোট বিষয়েও আনন্দ খুঁজে নেওয়া এবং বর্তমানে বাঁচা।
স্বাস্থ্যকর নাস্তা বাদ দেওয়া যাবে না
দীর্ঘদিন বাঁচতে চাইলে সকালে স্বাস্থ্যকর নাস্তা কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না।
বুয়েটনার বলেন, “নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য পরিকল্পনা যেমন- উদ্ভিজ্জ খাবার বা মেডিটরিয়ান খাদ্যাভ্যাস শরীর সুস্থ রাখে ও আয়ু বাড়ায়। দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সকালের নাস্তা।”
ক্যালিফোর্নিয়ার লোমা লিন্ডাতে বসবাসকারী ১০৫ বছর বয়সি একজন বৃদ্ধ নারী, সকালে এক বাটি ধীরে রান্না করা ওটস খেয়ে দিন শুরু করেন। এর সঙ্গে তিনি খেজুর, আখরোট ও প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে সয়া দুধ যোগ করেন।
বুয়েটনার বলেন, “সকালে এমন এক বাটি নাস্তা করা রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।”
সকালে এক কাপ কফি পান
ব্লু জোনে থাকা মানুষেরা সকালে এক কাপ কফি পানে আনন্দ পান।
বুয়েটনার জানান, “এই অঞ্চলের মানুষেরা দৈনিক দুতিন কাপ কালো কফি পান করেন।”
‘দ্যা আমেরিকান হেল্থ অ্যাসোশিয়েশন’ অনুযায়ী, কফি পান ক্যাফেইনেইটেড বা ডিক্যাফ- দুভাবে গ্রহণ করাই মৃত্যু ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
তার মানে এই নয় যে, এক কাপ কফিতে ইচ্ছা মতো চিনি খাওয়া যাবে। এক কাপে এক চা-চামচ চিনি ও উদ্ভিজ্জ দুধ যেমন- ওটমিল্ক যোগ করা যেতে পারে।
বলা হয়, ব্লু জোনে কফি বা চা পানের রুটিন হল বন্ধু বা পরিবারের সাথে আড্ডা দিতে দিতে, আনন্দ, হাসি ও মুখোমুখি বসে বিকালে চা পান করা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
প্রথম যার সঙ্গে দেখা হবে তাকে ভালো কিছু বলা
অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিক এবং ‘ফার্স্ট, উই মেক দ্যা বিস্ট বিউটিফুল: এ নিউ স্টোরি অন অ্যাংজাইটি’ বইয়ের লেখক সারাহ উইলসন বুয়েটনারকে তার সকালের রুটিন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, ২০ মিনিট ব্যায়াম করা ছাড়াও, প্রতিদিন সকালে অন্যদের প্রশংসা করার মাধ্যমে দিন শুরু করি। প্রথম যার সাথে দেখা হয় তাকে ভালো কোনো কথা বলে থাকি।”
“হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়’য়র একটি গবেষণা অনুযায়ী, আচরণ একটি সংক্রমিত বিষয়। তাই প্রতিবেশির সঙ্গে যেমনটা করা হয় তেমনটাই ফেরত আসে।