বিএনপি সংলাপে রাজি হলে বিবেচনা করা হবে: ওবায়দুল কাদের

image-691634-1688331320

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংলাপে বসতে বিএনপি রাজি থাকলে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই হবে। কারও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী দেশে নির্বাচন হবে না। বিরোধী দলের কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ।

কুরবানির ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব বিষয়ে কথা বলেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী। বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো সম্ভাবনা আছে কি না-এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনি ফখরুলকে জিজ্ঞেস করেন তারা সংলাপ করতে রাজি আছে কি না। এরপর আমরা বিবেচনা করব। কারণ, আমাদের প্রেসিডেন্ট (রাষ্ট্রপতি) একবার ডেকেছিলেন, নির্বাচন কমিশন দুইবার তাদের ডেকেছে, তারা আসেনি। তাদের অ্যাটিচিউডটা কী, সেটা আগে জানান।

জুনে ১৪ দলের এক সমাবেশে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেন, যদিও একদিন পর তিনি বক্তব্য পরিবর্তন করেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তখন বলেছিলেন, সংলাপ নিয়ে এই মুহূর্তে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। আমাদের কোনো চিন্তাভাবনা নেই, সিদ্ধান্ত নেই। ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যতে বলতে পারব। এ মুহূর্তে নেই। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে বক্তব্য দিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে।

বিএনপি নির্বাচনে না এলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না, সেই প্রশ্নে কাদের রোববার বলেন, আমি বলেছি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। কত দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, সেটা দেখবেন। আমিই সবকিছু, এ কথা আমাদের কারোরই মনে করা ঠিক না। আমি এখনো চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। ইলেকশনটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হোক, সেজন্য আমরা চাই। সরকার পতনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলন নিয়ে এক প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন শুনছি ৩৬ পার্টি। ছিল ৫৪, তারপর ৫৪ থেকে ৫২, সর্বশেষ ৩৬ দলের রূপরেখা, একদফার আন্দোলন। ৩৬ দল একদফার আন্দোলন করবে। আন্দোলন তো এখনো শুরুই হয়নি। শুরু হতে হতে আবার কয় দল এখান থেকে কেটে পড়ে এবং কয় দল শেষ পর্যন্ত থাকে, সেটাও অবশ্য দেখার বিষয়।

কারণ, এর মধ্যে আমরা যে খোঁজখবার পাচ্ছি, পত্রপত্রিকায়ও খবর বেরিয়েছে যে এই যে শরিক ৩৬ পার্টি, এদের মধ্যে এখন দরকষাকষি চলছে একদফার আন্দোলন সফল হলে ক্ষমতার ভাগাভাগিতে কে কী পাবে, সেটি নিয়ে দেনদরবার চলছে। কাজেই সবকিছু মিলিয়ে এ আন্দোলনের পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় বলা মুশকিল। বিরোধী জোটগুলো আন্দোলনের নামে সহিংসতা চালালে তা দলীয়ভাবে মোকাবিলা করা হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান-আমরা রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। রাজনীতির সঙ্গে যখন সশস্ত্র বা সহিংস কিছু যোগ হবে, তখন পরিস্থিতিই বলে দেবে আমরা কী করব। সেটা তো আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না।

সেটা দেশের জনগণের জানমাল রক্ষার জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরাও (মাঠে) থাকব। আমরা তো অলরেডি শান্তি সমাবেশ করে যাচ্ছি এবং আমাদের ঘোষণাই আছে ইলেকশন পর্যন্ত আমরা মাঠে, রাজপথে সতর্ক থাকব। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, উন্নয়ন সহযোগীরা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে, আমরাও শুনছি। আমাদের সঙ্গেও তারা কথা বলছে। কথা আমরা শুনব, পরামর্শও শুনব। ভালো কথা হলে, ভালো পরামর্শ কেউ দিলে, সেটাও আমরা শুনব। তবে আমরা কারও নির্দেশ বা নিয়ন্ত্রণে থাকব-এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। কারও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বাংলাদেশে নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হবে বাংলাদেশের সংবিধানকে অনুসরণ করে। অন্যান্য দেশের মতো নির্বাচনকালীন সরকার রেখে নির্বাচন হবে।

নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে এক প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাজার পরিস্থিতির ওপর সরকারের সেভাবে হাত ছিল না। বাজার পরিস্থিতি ওঠানামা হবেই। আজকের সংকটে ওঠানামার মাত্রাটা আরও বাড়বেই, এটি খুব স্বাভাবিক। সবকিছু সরকারের বাঁধন-কষনের ওপর নির্ভর করে-এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে; কিন্তু মানুষের গরু কেনার সাধ্য তো আরও বেড়ে গেছে। কাজেই বাজারের ওঠানামাটা ভিন্ন জিনিস। আমরা তো খাদ্যে এখনো ভালো আছি। আমাদের কোনো খাদ্য সংকট এ মুহূর্তে নেই। অপেক্ষা করুন কিছু বিষয় আছে, ওঠানামার মধ্যেই একসময় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ফিরে আসবে, সেটা আমরা মনে করি। কিছু সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে, সেটি প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

কাদের বলেন, মানুষের কষ্ট হলে সেই বাধা দূর করতেই হবে। সিন্ডিকেটের কারণে মূল্যবৃদ্ধির বিষয় যখন ঘটবে, তখন সরকারের একটা দায়িত্ব আছে। সরকার খোঁজখবর নিচ্ছে না এমন নয়। এখানে সরকারের সংশ্লিষ্ট যে মন্ত্রণালয় তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করি এটা লাগামছাড়া থাকবে না। একসময় এটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে। সিন্ডিকেট বলেন আর যাই বলেন, সিন্ডিকেট তো আর সরকারের চেয়ে শক্তিশালী না। সরকার চেষ্টা করছে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমাতে। দেশের খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে সরকার ভুল তথ্য দিচ্ছে বলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যেরও জবাব দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, তাদের প্রধান নেতার মুক্তির ব্যাপারে দর্শনীয় একটি মিছিলও করতে পারেনি, এমন বিরোধী দল। তারা নির্বাচনে যেমন ব্যর্থ, আন্দোলন তো তারা ১০ ডিসেম্বরে দখলই করে ফেলছিল প্রায়-খালেদা জিয়ার হাতে ১১ তারিখ থেকে দেশ থাকবে, তারেক জিয়া বীরের বেশে ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করবে-এসব অনেক লাগামছাড়া কথা তারা অনেকবার বলেছেন। এটাই হলো বাস্তবতা। বাংলাদেশে এমন একটি সরকার এখন ক্ষমতায়, যে সরকার সত্যকে লুকাচ্ছে না। আমরা সত্যকে লুকিয়ে কোনো ফায়দা তুলতে চাচ্ছি না। বাংলাদেশে অভাবে-কষ্টে একটি মানুষও কি মরেছে?

Pin It