ঈদের ছুটি শেষে রোববার (৯ জুলাই) খুলছে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু ইতোমধ্যে ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিস্ফোরণ ঘটেছে। গত ২৫ জুন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। দীর্ঘ এই ছুটিতে পরিচ্ছন্নতার অভাবে খেলার মাঠ, আশপাশ এলাকা এমনকি খোদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে ডেঙ্গু মশার বংশ বিস্তারের শঙ্কা আছে। আর তেমনটি হলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারির আকার ধারণ করতে পারে। এ অবস্থায় ডেঙ্গুভীতির মধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে ছাত্রছাত্রীরা।
অবশ্য সরকারি তরফে বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার বিষয়টি সামনে রেখে ইতোমধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ছুটির শুরুতে একদফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। তখনই ছুটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশনা হয়। আর এখন স্কুল খোলার বিষয়টি সামনে রেখে ইতোমধ্যে দেওয়া নির্দেশনায় ভালো করে ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, খোলার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার করার ব্যাপারে ইতোমধ্যে নির্দেশনা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। শনিবারের মধ্যে সবাই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস উপযোগী করে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা প্রস্তুত করবেন বলে আশা রাখছি। পাশাপাশি সুনামগঞ্জের নিমাঞ্চলে যে বন্যা শুরু হয়েছিল, সেখান থেকে পানি নেমে গেছে। সেখানে ২-৩টি প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। তবে বানভাসিরা নিজ নিজ বাসা-বাড়িতে চলে গেছেন। ফলে সেসব প্রতিষ্ঠানও এখন ক্লাস শুরুর জন্য প্রস্তুত আছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে ২ হাজার ১৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী আছে। তাদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৭২ জন ও ঢাকার বাইরে ১১০ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ সময় একজন মারা গেছে। আর গত জানুয়ারি থেকে মারা গেছে ৬৫ জন। ডেঙ্গুতে এই মৌসুমে এই মৃত্যুর ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে একটি ঘটনা। সেটি হচ্ছে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ইলমা জাহানের মৃত্যু। যদিও ঘটনাটি স্কুলে নয়, কিন্তু এ ঘটনার পরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে। কেননা, শিক্ষার্থীরা একটা লম্বা সময়ের জন্য স্কুলে গিয়ে থাকে। আর তখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অনেকেই উদাসীন থাকে। ফলে মশায় কামড়ালে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা যেমন থাকে, তেমনি পরিবারের অন্য সদস্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। কেননা, ডেঙ্গু রোগীকে সাধারণ মশা কামড়ালেও তা এডিস মশায় রূপান্তরিত হয় এবং সেই মশা যাকে কামড়াবে সেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, ডেঙ্গু কেবল ঢাকা নয়, প্রায় সারা দেশেই বিস্তার লাভ করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার পর্যন্ত ময়মনসিংহ বিভাগে ৩২ জন, চট্টগ্রামে ২৪৩ জন, খুলনায় ৫৫ জন, রাজশাহীতে ১৪ জন রংপুরে ৩৩ জন, বরিশালে ৫২ জন ও সিলেটে ১১ জন আক্রান্ত আছে। সুতরাং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডেঙ্গু বিস্তারের বড় উৎস হতে পারে বলে মনে করেন তারা।
মাউশি মহাপরিচালক বলেন, ডেঙ্গু আর বন্যার ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘স্টান্ডিং অর্ডার’ (সর্বদা পালনীয়) দেওয়া আছে। এর আগে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব ঘটে। তখন ঈদুল আজহায়ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাতিল করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, তখন দেওয়া নির্দেশনাগুলোই পালন করতে বলা হয়েছে। সেগুলো অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোর লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে কর্মচারী, স্কাউটস, বিএনসিসি ও শিক্ষার্থী সমন্বয়ে এক বা একাধিক টিম গঠন করতে হবে। ওই টিম ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম চালাবে। বিদ্যালয় ও আশপাশে যেসব জায়গায় স্বচ্ছ পানি জমার সম্ভাবনা থাকে সেসব স্থান চিহ্নিত করে পরিষ্কার করবে; যেহেতু খোলা পাত্রে জমাট পানিতে ডেঙ্গু ডিম ছাড়ে। তাই বাথরুমের বদনা ও বালতি যাচাই করতে হবে। হাইকমোডে হারপিক ঢেলে ঢাকনা বন্ধ করে রাখতে হবে; বাথরুমের প্যানে হারপিক ঢেলে বস্তা বা অন্য কিছু দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে হবে; কোনো স্থানে জমাটবদ্ধ পানি থাকলে লার্ভিসাইড স্প্রে করতে হবে অথবা জমাট পানি নিষ্কাশন করতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) উপপরিচালক নুরুল আমিন জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্ট চালানোর লক্ষ্যে ঈদের ছুটির শুরুতেই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। তাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সুরক্ষার লক্ষ্যে ঈদের ছুটির আগে ও পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেননা, মশাবাহিত রোগ বিশেষ করে এডিস মশার প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে এডিস মশার লার্ভা জন্মদান করতে না পরে সেজন্য ঈদুল আজহার ছুটির পরবর্তী অফিস/বিদ্যালয় খোলার আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিপালিত হয়েছে। এরপরও শনিবার সব প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতা চলবে।