জেলার সখীপুর উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পাল্টে দিয়েছে ভূমিহীন-গৃহহীনদের জীবন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর অনেকেরই জীবন পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। গৃহহীনদের জীবনের বেশী ভাগ সময় কেটেছে ভাসমান অবস্থায়, তাদের ছিলনা কোন স্থায়ী ঠিকানা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরসহ জমির মালিকানা পেয়ে খুঁজে পেয়েছেন তাদের আসল ঠিকানা। অন্য মানুষের বাড়িতে সারাদিন কাজ শেষে এখন আর অন্যের বাড়ি পাহারা দিতে হয় না।
জানা যায়, দীর্ঘ ৩০ বছর পর নিজের নামে পেলেন জমির দলিল ও ঘরের কাগজ। তাই উচ্ছ্বাস যেন কমছে না আশ্রয় প্রাপ্তদের। এদের একজন লাল বানু। বাড়ি উপজেলার কালিদাস গ্রামে। নতুন পাওয়া ঘরের চারপাশ ঘুরে আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে বললেন, আধা পাকা ঘরটি তাঁর খুব পছন্দ হয়েছে। থাকার কক্ষের সঙ্গে রান্নাঘর। পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও ভালো। বিদ্যুৎ ও পানি আছে। সে বেড়বাড়ি কলাবাগান আশ্রয়ণ প্রকল্পে খুব ভালোভাবে রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সারাদেশের মতো সখীপুরেও আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারদের মধ্যে নতুন ঘর উপহার দেওয়া হচ্ছে। সখীপুরে মোট ২শত ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর দেওয়া হয়েছে। নতুন ঘর পাওয়া এসব ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষগুলোর চোখে মুখে এখন সীমাহীন স্বপ্ন। বাড়ি পাওয়ার আনন্দে বেড়বাড়ি গ্রামের ভূমিহীন লাইলী বেগমের চোখেও ভেসে আসছে আনন্দ অশ্রুর বান। ঘর পেয়ে কেমন লাগছে, জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, আমি ছেলে, নাতি ও বোনকে নিয়ে মানুষের জায়গায় কুঁড়েঘর তুলে থাকি। স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি এ বয়সে ইটের ঘরে থাকতে পারবো। আমি ভীষণ খুশি হয়েছি ঘর পেয়ে। দোয়া করি শেখ মুজিবের বেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য।
আকলিমা নামের আমতৈল আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক উপকারভোগী বলেন, আমার জায়গা-জমি ছিল না। শেখ হাসিনা ঘর দিছে, জমি দিছে। স্বামী-সন্তান নিয়্যা সুখে আছি। মনে হচ্ছে আমি যেন “মা” শেখ হাসিনার বুকে রয়েছি। লালু মিয়া উচ্ছ্বাস ভরা কণ্ঠে বলেন, এতো দিন খুব কষ্ট করে ছিলাম। আজ আমরা ঘর পেয়েছি, বিদ্যুৎ পেয়েছি, পাকা রাস্তা সবই আমাদের আছে। আমরা খুব খুশি।
সখীপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার চৌধুরী জানান, সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি ঘরের জন্য ২ শতাংশ খাসজমির বন্দোবস্তসহ দুই কক্ষের সেমিপাকা ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এসব ঘরের প্রতিটিতে একটি রান্না ঘর, টয়লেট ও সামনে খোলা বারান্দা রয়েছে। ঘর গুলোর পাশেই সবজি বাগান হচ্ছে। সখীপুর উপজেলায় ২’শটি পরিবারকে জমি ও ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বহেড়াতৈল ইউনিয়নের আমতৈল ২৭, যাদবপুর কলাবাগান ২৯, হাতিবান্ধা ইউনিয়নের কামালিয়া চালা ১৯, জামলহাটখুরা ১২, কুতুবপুর ৬, বড় মৌশা ১২ এবং একক ঘর ৯৩। প্রতিটি ঘরে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। পরে এক লাখ নব্বই হাজার, পরে দুই লাখ ৪০ হাজার, দুই লাখ ৫৯ হাজার ৫শ’, বর্তমানে প্রতিটি ঘরের নির্মাণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৫শ’ টাকা।
এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আলম বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য চমৎকার পরিবেশে মানসম্মত টেকসই ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এসব ঘরে আশ্রয় পাওয়াদের অধিকাংশই রাস্তার ধারে ফুটপাত বা কারও আশ্রয়ে বসবাস করতেন। তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর উপহার পেলেন। এর ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার শতভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাদের জমি ও ঘর নাই, তাদের বসবাসের জন্য বাড়ি করে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক চাহিদা ও কর্মসংস্থানের বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। সব মিলিয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর দীর্ঘদিনের দুঃখ-কষ্ট লাঘব হবে।