সদ্যসমাপ্ত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে এসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সম্মেলন শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান। তবে সেই বৈঠকের পর কোনো সংবাদ সম্মেলন হয়নি। পরে দিল্লি থেকে ভিয়েতনামে গিয়ে সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বাইডেন। সেখানেই ভারতের গণমাধ্যম, মানবাধিকার ও বাক-স্বাধীনতা ইস্যুতে মোদিকে খোঁচা দেন বাইডেন।
দিল্লি সফর শেষে রোববার ভিয়েতনামে পৌঁছে সংবাদ সম্মেলন করেন বাইডেন। সেখানে তিনি জানান, মানবাধিকার রক্ষা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো সংবেদনশীল ইস্যু নিয়ে তার কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। তাকে তিনি মানবাধিকার রক্ষা করার গুরুত্বের বিষয়ে বলেছেন। পাশাপাশি মোদির সামনে নাকি তিনি শিক্ষিত সমাজের ভূমিকার কথা তুলে ধরেছেন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলেছেন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার ভারতে পা রাখার পর মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন জো বাইডেন। রীতি অনুযায়ী, এই ধরনের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর মার্কিন সাংবাদিকরা উভয় রাষ্ট্রনেতাকেই কিছু প্রশ্ন করে থাকেন সংবাদ সম্মেলনে। যুক্তরাষ্ট্রে যখন মোদি গিয়েছিলেন, তখনও তাকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তবে বাইডেনের ভারত সফরকালে মার্কিন সাংবাদিকদের নাকি প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
ওয়াশিংটনের দাবি, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সফররত মার্কিন সাংবাদিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, মোদি-বাইডেন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর কোনো সওয়াল-জবাব পর্ব থাকবে না। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে একাও সংবাদ সম্মেলন করতে দেওয়া হয়নি। পরে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছিল ভিয়েতনামে পৌঁছে বাইডেন সংবাদ সম্মেলন করবেন।
ভিয়েতনাম-যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহাসিক চুক্তি : ভিয়েতনামের সঙ্গে নতুন এক ঐতিহাসিক চুক্তি সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই চুক্তির নাম ‘দ্য কমপ্রিহেনসিভ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ’। এর উদ্দেশ্য ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের সম্পর্ক গড়ে তোলা। বলা হয়েছে, সাবেক বিরোধী এ দুদেশ এই চুক্তির মাধ্যমে নতুন করে ঘনিষ্ঠ হবে। চুক্তি সইয়ের পর জো বাইডেন বলেছেন, চীনের আন্তর্জাতিক প্রভাব খর্ব করার কোনো চেষ্টা করছে না যুক্তরাষ্ট্র। বিবিসি।
দিলিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষ করে রোববার তিনি ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে যান। ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শেষ সেনা সদস্য ত্যাগ করার কমপক্ষে ৫০ বছর পর দেশটি সফরে গেলেন জো বাইডেন। দুবছর ধরে ভিয়েতনামের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার জন্য অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। এশিয়ায় চীনের প্রভাবকে মোকাবিলায় এ দেশটিকে ওয়াশিংটন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। এটাকে ছোট কোনো কৃতিত্ব হিসাবে দেখা ঠিক নয়। ভিয়েতনাম এমনিতেই চীনের সবচেয়ে পুরোনো এবং কট্টর বন্ধু। তাদের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে কূটনৈতিক সম্পর্কের হাত প্রসারিত করা ওয়াশিংটনের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের এক অংশীদারত্ব। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হ্যানয়ে পৌঁছে সাংবাদিকদের বলেন, চীনকে নিয়ন্ত্রণ বা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার জন্য কোনো কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র।
আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে তারা স্থিতিশীলতা বজায় রাখছেন। তিনি বলেন, আমরা শীতল যুদ্ধের টার্ম নিয়ে অনেক চিন্তা করেছি। ওদিকে ভিয়েতনামের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের ফলে এরই মধ্যে বেইজিংয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। একে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ‘শীতল যুদ্ধ মানসিকতা’ বলে বর্ণনা করেছে। চুক্তির শিরোনামকে প্রতীকী মনে হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের মধ্যে এর অর্থ হবে ব্যাপক অর্থে বাণিজ্যিক চুক্তি। এর ফলে চীনের ওপর ভিয়েতনামের নির্ভরতা কমে আসবে। দেশটিতে আছে যুব ও উচ্চশিক্ষিত কর্মশক্তি। আছে উদ্যোক্তা মানসিকতার লোকজন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণের স্থানে পরিণত হতে পারে দেশটি। বিশেষ করে যেসব বিনিয়োগকারী চীনের বাইরে তাদের কারখানা সরানোর কথা ভাবছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বড় বড় কোম্পানি তাদের ব্যবসার অংশবিশেষ বা সরবরাহ চেইন সরিয়ে নিয়েছে ভিয়েতনামে। এর মধ্যে আছে জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান ডেল, গুগল, মাইক্রোসফট ও অ্যাপল। যুক্তরাষ্ট্র সেখানে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের বাজারের প্রতিশ্রুতির কথাও বিবেচনায় নিয়েছে।