চট্টগ্রামে সরকারবিরোধী আন্দোলনে গতি আনতে পারছে না বিএনপি। গত এক মাসে একের পর এক হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়া হলেও তা দাবি আদায়ে সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
বিএনপিদলীয় সূত্র জানায়, গ্রেফতার আতঙ্কে সিনিয়র নেতারা আত্মগোপনে থাকায় আন্দোলন জোরদার হচ্ছে না। গত এক মাসে চট্টগ্রামে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৬০টি মামলা হয়েছে। এ সময়ে গ্রেফতার হয়েছে এক হাজার ২০০ নেতাকর্মী। আপাতত কৌশল হিসেবে গাঢাকা দিয়েছেন সিনিয়র নেতারা। আরও কঠোর আন্দোলনের দিকে গেলে হয়তো তারা প্রকাশ্যে আসতে পারেন।
এদিকে আন্দোলনের মাঠে নেতাদের দেখা না পেয়ে অনেকটাই দিশাহীন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। সাহস করে তারা বড় পরিসরে রাস্তায় নামতে পারছেন না। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে কিছু মিছিল বের করা হলেও তা ফটোসেশনেই সীমাবদ্ধ থাকছে। বিশেষ করে পুলিশের নজর এড়াতে সকালের দিকে বিভিন্নস্থানে বের করা হয় ঝটিকা মিছিল। তবে গ্রেফতারের ভয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই মিছিল শেষ করে চলে যান নেতাকর্মীরা। অনেক ক্ষেত্রে ফটো তোলা ও ভিডিও করতে যে কয়েক মিনিট সময়ের প্রয়োজন হয়, সে পর্যন্ত থাকছে মিছিলের স্থায়িত্ব। রাস্তায় নামার জন্য সকাল ৬টা থেকে ৯টার মধ্যের সময়টুকু বেছে নেওয়া হচ্ছে। ওই সময় রাস্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল তুলনামূলক কম থাকে। তাই সকালে আলো-অন্ধকারের মধ্যে কিছু কিছু এলাকায় মিছিল বের করে ছবি তুলে সটকে পড়েন নেতাকর্মীরা।
দলীয় সূত্র জানায়, ২৯ অক্টোবর থেকে বিএনপির হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। এর পর থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও নগর সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের নেতৃত্বে কয়েক দফা মিছিল বের হলেও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুলাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনসহ সিনিয়র নেতারা মাঠে অনুপস্থিত। এ অবস্থায় দলের ভেতরেই আন্দোলন নিয়ে তৈরি হয়েছে এক ধরনের আস্থাহীনতা। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নেমে পড়েছে নির্বাচনের মাঠে। মনোনয়নপত্র দাখিল শেষ। প্রতীক বরাদ্দ হলেই শুরু হবে প্রচার। অপর দিকে বিএনপি নির্বাচনে নেই। আন্দোলনেও প্রায় নেই বললেই চলে। অন্য দলগুলো যখন ভোটের হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত বিএনপি নেতাকর্মীরা তখন আত্মগোপনে থেকে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আশঙ্কা-বর্তমানে যেভাবে শ্লথগতিতে হরতাল-অবরোধ চলছে, এভাবে চলতে থাকলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে সরকারকে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, আন্দোলন এই গতিতে চলবে নাকি সামনে কৌশলে কোনো পরিবর্তন আসবে, সে বিষয়ে তারা এখনো স্পষ্ট কোনো ধারণা পাননি। সিনিয়র নেতারা আত্মগোপনে থাকায় ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে সরাসরি কোনো দিক-নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে না।
নগর বিএনপি’র দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মো. ইদরিস আলী বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে মাঠে নামলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়। পুলিশ নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে। টার্গেট নেতাকে না পেলে পরিবারের সদস্যদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একের পর এক দায়ের করা হচ্ছে গায়েবি মামলা। এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও চট্টগ্রামে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হরতাল-অবরোধে রাস্তায় নামছেন। প্রতিদিনই নগরী ও জেলায় বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ হচ্ছে।’ তিনি জানান, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের পর থেকে গত এক মাসে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলায় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ৬০টি মামলা হয়েছে। এই সময়ে গ্রেফতার হয়েছে এক হাজার ২০০ নেতাকর্মী। এ অবস্থায় আন্দোলনের কৌশলে পরিবর্তন আসছে কিনা জানতে চাইলে নগর বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো আমাদের কাছে কোনো দিকনির্দেশনা আসেনি।’