সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে সোমবার ৮ম দিনের মতো কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ফলে বন্ধ রয়েছে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম।
শিক্ষকদের আন্দোলনকে সরকার কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তারা। শিক্ষকরা বলেছেন, তাদের চলমান সর্বাত্মক আন্দোলন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: অষ্টম দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি। সোমবার বেলা ১২টায় ঢাবির কলা ভবনের সম্মুখ গেটে শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এদিন সকাল থেকেই কর্মবিরতির অংশ হিসাবে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকেন শিক্ষকরা। ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেন ঢাবি শিক্ষকরা।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ৩ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি পালন করে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের দাবি মানার কোনো অবস্থা আমরা দেখছি না। আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি- আমাদের দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আমরা পিছু হটব না। বিজয় নিয়েই আমরা ক্লাসরুমে ফেরত যাব।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা শিক্ষক প্রতিনিধিরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা বলেছিলাম এই স্কিম বাতিল করুন না হলে আমরা কর্মবিরতি শুরু করব। কিন্তু তারা দাবি মানেননি। ফলে আমরা অর্ধদিবস কর্মবিরতি করেছি, পরে পূর্ণ দিবস করেছি। এরপর আমরা এই সর্বাÍক কর্মবিরতি শুরু করেছি। যেহেতু আমরা এই আন্দোলন শুরু করেছি, সফলতা আসার আগে আমরা ক্লাসে ফিরব না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রত্যাহারের দাবিতে চলমান রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতি। সোমবার সকাল ৯টা থেকে কর্মবিরতি শুরু হয়। অন্যান্য দিনের মতো এদিনও সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নিচ তলায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: সোমবারও পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে এ কর্মবিরতি শুরু হয়ে চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। কর্মবিরতির কারণে ববির ক্লাস, পরীক্ষা, সভা, সেমিনার সবকিছু এখনো বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানান, এর ফলে তারা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। ববি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আবদুল বাতেন চৌধুরী বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: নবম দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে এ কর্মসূচির অংশ হিসাবে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, সরকার শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে চিন্তিত নন বরং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে চিন্তিত। এগুলো
শিক্ষকদের জন্য হতাশাজনক। এই আন্দোলন শিক্ষকদের ব্যক্তিগত কোনো আন্দোলন নয়। তারা এ আন্দোলন করছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যারা এ মহান পেশায় আসতে চায়।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বকুল বলেন, আপনি যখন একটা রাষ্ট্রকে গড়ে তুলতে চাচ্ছেন, রাষ্ট্রকে স্বনির্ভর এবং উন্নত করে তুলতে চাচ্ছেন, তখন সেটা শিক্ষকদের খাটো করে কখনো করা সম্ভব নয়। আজকে যারা রাষ্ট্র চালাচ্ছেন, রাষ্ট্রের আমলাতন্ত্রে বা সরকারে যারা আছেন তারা অবশ্যই মেধাবী। এই জায়গায় যে মানুষগুলো যাচ্ছেন তাদের শিক্ষকরাই তৈরি করে পাঠাচ্ছেন। যদি সোনার বাংলা গড়তে হয় তাহলে প্রথমে শিক্ষকদের মর্যাদার আসনে বসাতে হবে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের ওপর নিয়মতান্ত্রিকভাবে যে মানসিক নির্যাতন তারা করে যাচ্ছে, একটার পর একটা যে আঘাত আমাদের দিয়ে যাচ্ছে, আমরা তার অবসান চাই। অনেক জায়গায় কিছু মানুষ বলে যাচ্ছেন শিক্ষকদের গায়ে যখন আঘাত লাগে ঠিক তখনই তারা কথা বলে। হয়তো কিছুটা সত্য থাকতেও পারে। এটা যদি আংশিক সত্য হয় তাহলেও আমাদের
ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এই আন্দোলন শিক্ষকদের ব্যক্তিগত কোনো আন্দোলন নয়।
তারা এ আন্দোলন করছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যারা এ মহান পেশায় আসতে চায়। কর্মসূচিটি সঞ্চালনা করেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আফরোজা সুলতানা চূড়া। আরও বক্তব্য দেন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এসএম একরাম উল্লাহ, ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাংগুয়েজ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন। কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের অর্ধশতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়: সোমবার অষ্টম দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেছেন হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দুপুর ১২টায় অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে প্রভাষক ইফতেখার আহমেদ ফাগুনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সহযোগী অধ্যাপক ড. অরুণ চন্দ্র বর্মণ, সহকারী অধ্যাপক আইনুদ্দীন হক, প্রভাষক ডা. জাকিয়া সুলতানা কলি প্রমুখ।
বশেমুরবিপ্রবি: তিন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে না ফেরার ঘোষণা দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষক সমিতি। এ সময় সব ধরনের পাঠদান ও পরীক্ষা নেওয়া থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেন শিক্ষকরা। সোমবার সর্বাÍক বিরতি পালনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন সংলগ্ন অবস্থান কর্মসূচিতে এ ঘোষণা দেন শিক্ষক সমিতির নেতারা। শতাধিক শিক্ষক এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ফায়েকুজ্জামান মিয়া বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি চাই না। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা শ্রেণিকক্ষে যেতে পারছি না। দাবি পূরণ না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে।