প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জোরালো হচ্ছে। আন্দোলনে নেমেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল। পদত্যাগের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে রাষ্ট্রপতি নিজ থেকে পদত্যাগ না করলে কীভাবে অপসারণ করা হবে, তা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কী ভাবছে, তার ওপর ভিত্তি করে দুয়েক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ‘সিদ্ধান্ত হয়নি’ বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হলে তা সাংবাদিকদের জানানো হবে।
বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরাকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শফিকুল আলম।
রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্য এবং সরকারের একমত পোষণের পরবর্তী ধাপে সরকারের কী পদক্ষেপ নিচ্ছে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, কেউ যেন কোনোভাবে দেশে নতুন করে সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এ ধরনের সংকট তৈরির চেষ্টা করা হলে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করা হবে। রাষ্ট্রপতির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও তিনি তা এড়িয়ে যান।
বিএনপি এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির অপসারণ চায় না বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। এতে নির্বাচন বিলম্বিত হবে। তাই বিএনপি এই মূহুর্তে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চায় না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘শিক্ষাজীবনে ছাত্রলীগ করা রাষ্ট্রপতি পলাতক শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছেন’।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, রাষ্ট্রপতি নিজেই বলেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র তিনি পেয়েছেন আর পরে সাংবাদিকদের বলছেন পাননি। এর অর্থ হলো এখন তিনি মিথ্যা বলছেন, যা শপথ ভঙ্গের নামান্তর। এর মাধ্যমে তিনি ওই পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন,’
গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, রাষ্ট্রপতি দেশের প্রধান অভিভাবক। কিন্তু তার ভূমিকা রাজনৈতিক ও নৈতিক স্খলনের শামিল। এমনকি শপথ লঙ্ঘনের শামিল। আমরা মনে করি তার এ পদে থাকা উচিত নয়।
বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, আমরা মনে করি এটি মীমাংসিত বিষয়। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। শপথ গ্রহণ করে উপদেষ্টারা দায়িত্ব নিয়েছেন। আমরা মনে করি অন্তর্র্বর্তী সরকার ও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব হবে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। সংস্কারের বিষয়ে একমত হয়ে নির্বাচনে যাওয়াটা জরুরি মনে করি।
গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা এবং রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজেদুর রহমান। তাঁরা বলেছেন, আগে রাষ্ট্রীয় ভাষণে রাষ্ট্রপতি সাবেক অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর কথিত পদত্যাগপত্র প্রাপ্তির কথা দেশবাসীর সামনে স্বীকার করলেও সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি তা অস্বীকার করেছেন। এটা স্ববিরোধিতা এবং তাতে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, রাষ্ট্রপতি থাকবেন-কি থাকবেন না এ প্রশ্নটি এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আইনি বা সাংবিধানিক প্রশ্ন নয়। এটি একেবারেই একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
রাষ্ট্রপতিকে কীভাবে সরানো সম্ভব?
সংবিধানে রাষ্ট্রপতি অভিশংসন বা পদত্যাগের বিধান রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দুটি উপায়েই জটিলতা আছে। সংবিধানের ৫২(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাতীয় সংসদকে রাষ্ট্রপতির অভিশংসনের ক্ষমতা দেওয়া আছে। কিন্তু ৬ আগস্ট সংসদ বিলুপ্ত করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সুতরাং সেখানে বাধা আছে।
অন্যদিকে সংবিধানের ৫৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি চাইলে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। তা গ্রহণের পরে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন স্পিকার।
কিন্তু গত ২ সেপ্টেম্বর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও পদত্যাগ করেছেন এবং ডেপুটি স্পিকারও কারাগারে থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণ সংবিধান অনুযায়ী হওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করেন সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক।