আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বলেছেন, আসন্ন বিচারপ্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং অতীতের দ্বন্দ্বের প্রতিশোধ গ্রহণের সময় ও সুযোগ নেই। এখানে প্রসিকিউটোরিয়াল যেসব সিদ্ধান্ত হবে, সেগুলো অবশ্যই প্রতিহিংসা বা রাজনৈতিক সুবিধার ভিত্তিতে নয়, পুরোপুরি তথ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে হবে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনবিশেষজ্ঞ টবি ক্যাডম্যান বলেন, ‘অপরাধের সংজ্ঞা যথাযথভাবে নির্ধারণ এবং সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য ট্রাইব্যুনাল যে আইন ও বিধি দ্বারা পরিচালিত হয়—উভয় ক্ষেত্রে ‘উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন’ আনা দরকার। কী কী পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, সে বিষয়ে বলিষ্ঠ পরামর্শ দিতে তিনি পিছপা হবেন না।
গত সোমবার নিয়োগ পেয়েছেন টবি ক্যাডম্যান। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩–এর সংশোধনীর খসড়া দেখার ও পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ট্রাইব্যুনাল ১৩ জন রাজনীতিবিদ এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ৮ জন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। গত ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিক্ষোভকারী ও অন্যদের নিহত হওয়ার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগের মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
জুলাই–আগস্টের ওই তিন সপ্তাহে সহিংসতায় ১ হাজার ৫০০ জনের মতো নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকারের আইনবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, (ট্রাইব্যুনালের) প্রসিকিউশন টিমকে সহায়তা করতে ক্যাডম্যানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে প্রসিকিউশনকে শক্তিশালী করতে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আসামিপক্ষেরও বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার অধিকার রয়েছে।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২০১১ সাল থেকে অনুষ্ঠিত বিচারকাজের কঠোর সমালোচনা করে ক্যাডম্যান বাংলাদেশে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তাকে বাংলাদেশে এসে আইনি লড়াইয়ে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ওই বিচারে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্তদের বিচার ও সাজার সম্মুখীন করা হয়।
কথা বলার সময় টবি ক্যাডম্যান অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘(ট্রাইব্যুনালের) বিচারকাজে এখন সবকিছু থাকবে, যা আগে ছিল না। বিবাদীদের অবশ্যই সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার সব ধরনের নিশ্চয়তা দিতে হবে, ইতিপূর্বে বিবাদীরা যা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বিচার অবশ্যই ন্যায়বিচারের স্বার্থে হতে হবে, প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য নয়।’
ক্যাডম্যান উল্লেখ করেন, ‘যদিও এটা (বিচারকাজ) যথাযথভাবে ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া করা অনেক কঠিন, অধিকতর সময়সাপেক্ষ ও আরও বেশি ব্যয়বহুল হতে পারে; কিন্তু এই বিচার করার এটাই একমাত্র পথ। বিচার হতে হবে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের মাধ্যমে এবং অবশ্যই স্বীকৃত পন্থার অধীনে।’
ক্যাডম্যান বলেন, ‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে এই কাজটা যথাযথভাবে হওয়া এবং প্রসিকিউটররা তাদের কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে ভূমিকা রাখবেন। এটা আমার অঙ্গীকার। এতে (বিচারকাজ প্রভাবিত করা) আমার কোনো স্বার্থ নেই এবং ব্যক্তিগত অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যে রাজনৈতিক দল বা অন্য যেকোনো স্বার্থসংশ্লিষ্টই হোন না কেন, তিনি যেন যথাযথ ও সুষ্ঠু বিচার পান, আমি সেটি নিশ্চিত করব।’
গত সেপ্টেম্বরে এ ব্রিটিশ আইনজীবী বাংলাদেশ সফর করেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, আইন উপদেষ্টা ও অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের সঙ্গে আলাপে ‘বিচার বিভাগ সংস্কার ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তিনি আলোচনা করেন’ বলে জানান ক্যাডম্যান।
টবি ক্যাডম্যান বলেন, ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রবল আকাঙ্ক্ষা আমাকে প্রভাবিত করেছে। আন্তর্জাতিক মানবিক ও মানবাধিকার আইনের গুরুতর লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা এবং তা ঠিকভাবে করার দৃঢ় আকাঙ্ক্ষাও প্রভাবিত করেছে আমাকে।’