বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত করে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে যেতে চাই আমরা। কারণ, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য প্রধান ফটক হলো নির্বাচন ।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সংস্কারের বিষয়ে বিএনপি অত্যন্ত আন্তরিক বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ২০১৬ সালে বিএনপির ভিশন ২০৩০, ২০২২ সালে প্রথমে ১০ দফা ও পরে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সংস্কারের পক্ষে আমরা প্রথম থেকেই। বিএনপির সংস্কার চায় না, এ কথাটি সঠিক নয়। প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত করে একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে যেতে চাই আমরা। আমরা নির্বাচনের কথা বলছি কেন? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য নির্বাচন হলো প্রধান ফটক, দরজা। আর এটিই ডেমোক্রেসি।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ এখন একটা জটিল রাজনৈতিক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের যে কাজটি করতে হবে তা হলো, অবশ্যই বাংলাদেশকে আমরা যেন স্বপ্নের মতো করে গড়তে পারি। ৫৩ বছর পর সংস্কার-নির্বাচন নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হচ্ছে। ভালো হতো আমরা যদি এ বিষয়গুলো নিয়ে একসাথে কাজ করতে পারতাম। এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারতাম।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমিসহ আমার দল ২০১২ সাল থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম শুরু করি। সেই সময়ে অনেক রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা করা হয়েছে গুম করা হয়েছে, কারাগারে নেওয়া হয়েছে। আমার দলের ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমাদের সাতশ’র বেশি নেতাকর্মীকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। ২০ হাজারও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আয়নাঘরের কথা আপনারা সবাই জানেন। ফাঁসি দেওয়া হয়েছে বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের। এরপরও আমরা কিন্তু থেমে থাকিনি। আজ যে সোচ্চার, আমরা প্রথম থেকেই ছিলাম। তখন আমরা অনেককেই আমাদের সঙ্গে পাইনি, এখন তাদের দেখছি, ভালো লাগছে! আমরা আরও অনুপ্রাণিত হচ্ছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা- এদেশে গণতান্ত্রিক চর্চা হয়নি। এখানে সে সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। সেই কালচার না থাকায় আমাদের বারবার বলতে হচ্ছে, এ করতে হবে, ও করতে হবে। এটা ডেমোক্রেসি, এভাবে যেতে হবে। ডেমোক্রেসি কিন্তু বারবার চর্চা প্র্যাকটিস ছাড়া গড়ে উঠবে না। হুট করে কোনোকিছু করা সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, আমি কোনো রাজনৈতিক তাত্ত্বিক বা বিশেষজ্ঞ নই। আমি মাঠ থেকে রাজনীতি শুরু করেছি। আমি পৌরসভার চেয়ারম্যান থেকে এখানে এসেছি, তৃণমূল থেকে কাজ করেই এ পর্যায়ে এসেছি। জনগণকে বাদ দিয়ে কোনোকিছু করা সম্ভব হবে না। এখানে যারা আছেন, তারা জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক করার চেষ্টা করবেন।
বিএনপির সঙ্গে এলডিপির বৈঠক, যে বিষয়ে ঐকমত্য
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
এলডিপির পক্ষে দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেন। এর আগে গত কয়েকদিনে ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, এনডিএমসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে মত দেন বৈঠকে অংশ নেওয়া দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সার্বিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার- তা করবে বলেও মত দেন নেতারা।
সূত্র আরও জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমার বিষয়ে জোট নেতাদের মতামত জানতে চায় বিএনপি। এ সময় মিত্র দলগুলোর নেতারা অভিন্ন সুরে বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনোভাবেই ২০২৫ সাল অতিক্রম করতে পারে না। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশে অস্থিরতা বাড়বে। ফ্যাসিবাদের দোসররা আরও শক্তি সঞ্চয় করে গভীর ষড়যন্ত্র করতে সক্ষম হবে। এতে দেশ ও জাতির বড় ক্ষতি হবে।’





