জীবনের অনিয়ন্ত্রিত বিষয়গুলো নিয়ে অযথা চিন্তা করলে মানসিক চাপ বাড়ে।
জীবনের চাপ, কাজের ব্যস্ততা এবং ব্যক্তিগত সমস্যার মধ্যে প্রায়ই মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পড়তে হয়।
এমন অবস্থায় একটি প্রাচীন দর্শন ‘স্টোয়িসিজম’ ব্যবহার করা যায়।
যদিও অনেকেই মনে করেন যে, এর মানে হল নির্দয়ভাবে অনুভূতি অমান্য করা বা নিজের কোনো আবেগ প্রকাশ বন্ধ করা। তবে বাস্তবে এটি এমন এক প্রাচীন দর্শন, যা শেখায় একজন কী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং কী পারে না।
আরও শেখায় কীভাবে আলাদা করে এর জন্য মানসিক ভারসাম্য তৈরি করতে হয়।
প্রায় ৩শ’ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিসে স্টোয়িসিজম ধারণাটির জন্ম হয়, যা আজও ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে প্রযোজ্য। এটি আধুনিক স্টোয়িসিজম নামেও পরিচিত।
যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না তা গ্রহণ করা
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইকোথেরাপিস্ট মেগ গিটলিন রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা কোনো বিষয় চিহ্নিত করতে শিখবেন, তখন অনাবশ্যক শক্তি ব্যয় না করে বাস্তবিকভাবে যা পরিবর্তন করতে পারেন তার দিকে মনোযোগ দিতে পারবেন। এভাবে জীবন অনেক সহজ এবং কম চাপের মনে হবে।”
যেমন- আবহাওয়া, যাত্রাপথে ট্রাফিক, বিশ্ব ঘটনা বা অন্য মানুষের চিন্তা ও কাজ- এগুলো নিজে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। এগুলোর প্রতি অযথা লড়াই করা কেবল ক্লান্তি এবং হতাশা বাড়ায়।
যা পরিবর্তন করা যায় তা চিহ্নিত করা এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়:
স্টোয়িসিজম শুধু ত্যাগ নয়, বরং সক্রিয় মনোযোগও শেখায়।
মেগ গিটলিন বলেন, “যদি শৈশবের অভিজ্ঞতা হয় যেটি পরিবর্তন করা যায়নি, তাহলে বড় হয়ে নিজের সন্তান বা প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করতে পারেন।”
এতে হয়ত পেশাদার পরামর্শ নেওয়া, বই পড়া বা নিজের অভিভাবকত্বের দক্ষতা বাড়ানো অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। অর্থাৎ, যা পরিবর্তনযোগ্য তা নিয়ে যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ নেওয়া স্টোয়িসিজমের একটি মূল শিক্ষা।
দ্বিমুখী চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসা
স্টোয়িসিজম’য়ে ধরা হয়েছে যে- জীবন সব সময় সব ভালো বা সব খারাপ নয়।
মেগ গিটলিন বলেন, “যখন নিজেকে ‘পরিপূর্ণভাবে ভালো’ হতে বলবেন না, তখন কালো-সাদা চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসবেন। এটি জীবনে ভারসাম্যপূর্ণ এবং চাপ কমানোর সুযোগ দেয়।”
যদি একটি প্রকল্পে ভুল করেন বা বন্ধুকে হতাশ করেন, তবে মনে রাখবেন এটি নিজের সমগ্র পরিচয় নির্ধারণ করে না। ভুল করা স্বাভাবিক। আর তারপরও ভালো থাকা সম্ভব।
নিজের চিন্তার প্রতি সংশয়ী হওয়া
স্টোয়িসিজম শেখায় যে বেশিরভাগ চিন্তা বাস্তব নয় বা সহায়ক নয়।
মেগ গিটলিন বলেন, “‘আমি কখনও কাউকে পাব না’ বা ‘আমি মিটিং-এ ভয়াবহ কাজ করেছি’— এগুলো প্রায়শই সত্য নয়। এই ধরনের চিন্তা সত্যি মনে করলে আমরা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ি।”
চিন্তাগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তিনি পরামর্শ দেন, “এই চিন্তা শতকরা কত ভাগ সত্য?” অথবা “বন্ধু যদি এমন বলত, আমি তাকে কী বলতাম?” এইভাবে চিন্তাকে যুক্তিসঙ্গতভাবে পুনর্মূল্যায়ন করা যায়।
লেখা তারপর বাস্তবায়ন
স্টোয়িসিজম’য়ে লেখা এবং তারপর বাস্তবায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
মেগ গিটলিন বলেন, “জার্নালিং বা কাজের তালিকা তৈরি করলে অভ্যন্তরীণ মনোভাব পরিষ্কার হয়। আর সেগুলোর বাস্তবে রূপান্তর করা যায়।”
লেখার অভ্যাস মূল্যবোধের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে এবং জীবনে বাস্তব সুখের সহায়ক হয়।
মুহূর্তকে উপভোগ
স্টোয়িসিজম’য়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হলো ‘মেমেনটো মরি’ ল্যাটিন এই শব্দের অর্থ ‘মৃত্যু স্মরণ করুন।’
এটি মনে করায় জীবন সীমিত, তাই প্রতিটি দিনকে গুরুত্ব দিয়ে বাঁচতে হবে।
‘স্টোয়া কনভারসেইশনস পডকাস্ট’য়ের সহ-উপস্থাপক মাইকেল ট্রেম্বলে বলেন, “এতে মূল্যবোধ অনুসারে জীবন যাপন করতে শেখা যায় এবং ছোট ক্ষুদ্র বিরক্তিকর বিষয়ের মধ্যে আটকে থাকা থেকেও মুক্তি মেলে।”
এভাবে প্রিয় মানুষ এবং জিনিসকে ভালোবাসা যায় এবং নিজেদের প্রতিও সহানুভূতি আসে।
প্রতিকূলতার জন্য প্রস্তুতি
স্টোয়িসিজম’য়ে নেতিবাচক কল্পনাও শেখানো হয়। অর্থাৎ সম্ভাব্য প্রতিকূল পরিস্থিতি কল্পনা করে তার জন্য প্রস্তুত হওয়া।
মাইকেল ট্রেম্বলে বলেন, “এতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়া যায় এবং ধৈর্যসহকারে প্রতিক্রিয়া জানানো সম্ভব হয়।”
এই প্রক্রিয়া ভবিষ্যতের জন্য আত্মবিশ্বাসী এবং প্রস্তুত রাখে।





