প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নারীরা পূজার সাজকে দিয়েছে দেবীর ছোঁয়া।
লাল টিপের জ্যোতি, ঠোঁটে সিঁদুরে রং, চোখে কাজলের গভীরতা— সব মিলিয়ে মুখ হয়ে ওঠে ভক্তির প্রতিচ্ছবি।
এই মেইকআপে প্রতিধ্বনি শোনা যায় দেবীর। সাজে থাকে না বাড়াবাড়ি আড়ম্বর, থাকে না অতি আধুনিকতার ঝলক বরং পাওয়া এক চিরন্তন রূপ।
দেবীর রূপে পূজার মেইকআপ
প্রথমেই আলোচনায় আসে বেইস মেইকআপ। পূজার সময় আবহাওয়া সাধারণত কিছুটা উষ্ণ থাকে, তাই ভারী ফাউন্ডেশন বা অতিরিক্ত স্তর এড়িয়ে যাওয়া উত্তম।
বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের প্রধান ও রূপ বিশেষজ্ঞ শারমিন কচি বলেন, “হালকা ফাউন্ডেশন বা বিবি ক্রিম দিয়ে সমান ত্বকের আভা তৈরি করলেই যথেষ্ট। এর সঙ্গে খুব সামান্য ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার দিলে ঘাম বা তেলতেলে ভাব কমে যায়।”
পূজার দিনভর দৌড়ঝাঁপের মাঝে মেইকআপ দীর্ঘস্থায়ী রাখতে চাইলে প্রাইমার ব্যবহার করাও ভালো। তবে সবচেয়ে জরুরি হল- ত্বক যেন স্বাভাবিক আভা হারিয়ে না ফেলে।
তাই ভারী কনট্যুরিং না করে বরং প্রাকৃতিক কাঠামোকে ফুটিয়ে তোলাই ঐতিহ্যবাহী সাজের মূলমন্ত্র।
চোখ
চোখের মেইকআপে পূজার আবহ সবচেয়ে বেশি ফুটে ওঠে। বাঙালি নারীর ঐতিহ্যবাহী সাজে কাজল বা কাজলের রেখা এক বিশেষ পরিচায়ক। তাই চোখে গাঢ় কাজল টেনে দেওয়াই পূজার সাজের আসল রূপ।
“অনেকে লিকুইড আইলাইনার ব্যবহার করেন, তবে ঘন কালো কাজলই পূজার লুককে অন্য মাত্রা দেয়। চোখের পাতায় হালকা বাদামি বা গোল্ডেন শেইড দিলে চোখে উজ্জ্বলতা আসে। তবে তা যেন কখনই অতিরিক্ত না হয়” বলেন এই শারমিন কচি।
পাপড়িতে সামান্য মাসকারা ব্যবহার করলে চোখ আরও গভীর ও প্রাণবন্ত দেখায়। পূজার সাজে ঝলমলে আইশ্যাডোর চেয়ে সাধারণ কিন্তু গভীর দৃষ্টি আনা অনেক বেশি মানানসই।
ভ্রু
ভ্রু মুখের সৌন্দর্য নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। খুব মোটা বা বেশি আঁকা ভ্রু পূজার ট্র্যাডিশনাল সাজের সঙ্গে খাপ খায় না। তাই ভ্রু আকারে প্রাকৃতিক রেখা বজায় রেখে সামান্য ভরাট করে নিলেই যথেষ্ট। এতে পুরো সাজে একেবারে দেশীয় ঢঙ পায়।
ঠোঁট
ঠোঁটের সাজ পূজার মেইকআপের কেন্দ্রবিন্দু বলা যায়। পূজার দিনে লাল রংয়ের লিপস্টিক এক অনন্য ঐতিহ্য বহন করে। শাড়ির রং যাই হোক, গাঢ় লাল বা সিঁদুর লাল ঠোঁট মুখে এনে দেয় এক অনন্য দীপ্তি।
“যারা হালকা কিছু পছন্দ করেন, তারা মেরুন বা ব্রিক রেড ব্যবহার করতে পারেন। তবে ট্র্যাডিশনাল পূজার সাজে নিউড বা ফ্যাকাশে শেইড একেবারেই মানায় না”- মন্তব্য করেন কচি।
ঠোঁটের রং যেন দেবী আরাধনার উজ্জ্বলতা প্রতিফলিত করে, সেটাই মূল লক্ষ্য।
ব্লাশ
ব্লাশ ব্যবহারও পূজার সাজে গুরুত্বপূর্ণ। গাল হালকা টকটকে গোলাপি বা পিচ টোনে রাঙালে স্বাভাবিক আভা পাওয়া যায়। তবে এটি যেন কখনই অতিরিক্ত না হয়, নইলে সাজ কৃত্রিম মনে হবে।
মূল লক্ষ্য হল- মুখে প্রাকৃতিক দীপ্তি আনা, যা সারাদিনের পূজার উৎসবের ক্লান্তির মাঝেও প্রাণবন্ত ‘লুক’ বজায় রাখে।
লাল টিপ
পূজার ট্র্যাডিশনাল মেইকআপের অন্যতম অংশ হল লাল টিপ। সিঁদুরের মতো টকটকে লাল টিপ বাঙালি নারীর পূজার সাজকে সম্পূর্ণ করে তোলে। এটি শুধু ফ্যাশনের নয়, বরং সংস্কৃতির প্রতীক।
টিপ ছাড়া পূজার মেইকআপ যেন পূর্ণতা পায় না। বড় লাল গোল টিপই ট্র্যাডিশনাল সাজের মূল বৈশিষ্ট্য, যা কপালে শোভা পায় এবং সঙ্গে সঙ্গে মুখমণ্ডলকে আলাদা দীপ্তি দেয়।
হাইলাইটার
“হাইলাইটার ও শিমারি পণ্য পূজার মেইকআপে খুব বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। সামান্য নাকের উঁচু অংশ বা চিবুকে হাইলাইট করা যেতে পারে, তবে পুরো সাজে জৌলুস না এনে বরং নরম আভা রাখা শ্রেয়”- বলেন কচি।
পূজার ট্র্যাডিশনাল মেইকআপে শোভনতা ও উজ্জ্বলতা দুটিই সমানভাবে থাকতে হবে।
শেষে ‘ফিক্সিং’ জরুরি। সারাদিন পূজামণ্ডপে যাতায়াত, আলো, ভিড় আর ঘামে মেইকআপ টিকিয়ে রাখা কঠিন।
তাই একটি হালকা ‘সেটিং স্প্রে’ ব্যবহার করলে মেইকআপ দীর্ঘ সময় সুন্দর থাকে।





