প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যে কোনো মূল্যে সর্বস্তরে শতভাগ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে বলে বিশ্বাস করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। সমকালের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, কোনোভাবেই অন্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতি মেনে নেওয়া হবে না। দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের সব অর্জন ধরে রাখতে সর্বস্তরে শতভাগ স্বচ্ছতার পাশাপাশি জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে। দেশজুড়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতার পাশাপাশি জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের চলমান যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। সরকারের অর্জনকে সামগ্রিকতা দিতে কৃষি মন্ত্রণালয়কেও শতভাগ জবাবদিহির আওতায় আনার চেষ্টা করবেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি জনস্বার্থে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি স্তরে দক্ষতা, সততা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেবেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মনোযোগী থাকবেন। দুর্নীতিমুক্ত কৃষি প্রশাসন গড়ে তুলবেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক তার মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি কর্মীকে সততা এবং দক্ষতার পরীক্ষায় সবার শীর্ষে নিয়ে যেতে চাইছেন। এরই মধ্যে তিনি কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণের ঘোষণা দিয়েছেন। রফতানি খাতকে বহুমুখী করার ক্ষেত্রে কৃষির অবস্থান শতভাগ নিশ্চিত করতে চাইছেন। কৃষি খাতে এর উজ্জ্বল সম্ভাবনাও রয়েছে বলে মনে করছেন ড. রাজ্জাক। সেই সঙ্গে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশকে খাদ্যে উদ্বৃত্ত করতে চাইছেন ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা বর্তমান কৃষিমন্ত্রী।
ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (বাকসু) সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস), চারবারের সংসদ সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) যুব ফ্রন্টেরও সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনায় দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম পুনর্গঠনেও তার ভূমিকা ঈর্ষণীয়।
ড. আবদুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন, বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। কৃষিকে কেন্দ্র করে এ দেশের সমাজ-সংস্কৃতিরও বিকাশ ঘটছে। এ কারণে অর্থনীতিতে কৃষির অবদান কিছুটা কমলেও গুরুত্ব কমেনি। অবশ্য জমি উর্বর হলেও জনসংখ্যার কারণে কৃষি খাতে আশানুরূপ উন্নয়ন না হওয়ায় কিছুটা হতাশ কৃষিমন্ত্রী জানান, দীর্ঘ ২০০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক এবং ২৩ বছরের পাকিস্তানি প্রায়-ঔপনিবেশিক শাসনে উন্নয়নের ক্ষেত্রে কৃষি খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার জন্য যে ধরনের বিনিয়োগ প্রয়োজন ছিল, তাও হয়নি। ‘৭০-এর দশকের প্রথম দিকে নানা দেশে সবুজ বিপ্লব হলেও বাংলাদেশ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারকে ব্যতিক্রম হিসেবে দেখছেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষিতে ভর্তুকি দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় গিয়ে দেশকে খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন। পরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসনে খাদ্য উৎপাদন কমে আসে। প্রবৃদ্ধির হারও খুব কম ছিল তখন। প্রতি বছরের আর্শ্বিন-কার্তিকে উত্তরাঞ্চলের রংপুরের নদীভাঙা চরাঞ্চলে ‘মঙ্গা’ দেখা দিত। খাদ্য সংকট থাকায় মানুষ দিনের পর দিন না খেয়ে থাকত। অর্ধাহারে থাকত। তীব্র অর্থনৈতিক মন্দার কারণে মানুষ কাজও পেত না। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই দুঃসহ পরিস্থিতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে।
কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক জানান, খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৮ সালে জনগণের ভোটে আবারও ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই প্রতি কেজি টিএসপি সার ৭২ টাকা থেকে কমিয়ে ২২ টাকা এবং পটাশিয়াম সার ৬০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫ টাকায় নির্ধারণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি কৃষি ঋণ বাড়িয়েছিলেন; তাই কৃষি উৎপাদনও বেড়েছিল। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দানাজাতীয় খাদ্যে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছিল। কোনো মানুষ না খেয়ে মরেনি। সবাই কাজ পেয়েছে। অর্থনীতিতে সুবাতাস বইছে।
কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, সংখ্যায় হাতেগোনা হলেও এখনও কম আয়ের মানুষজন প্রয়োজনমতো আমিষজাতীয় খাবার কিনতে পারছেন না। সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, সবার জন্য পুষ্টিজাতীয় নিরাপদ খাবারের নিশ্চয়তা দেওয়া। কৃষিমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছেন। তবে তার দুশ্চিন্তা, খাদ্য উৎপাদন বাড়লেও তৃণমূল পর্যায়ের কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। তিনি এই বিরূপ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে চাইছেন। এ জন্য তিনি কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত করার বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন এবং বিশেষ করে ডিম, দুধ, মাছ ও মাংসের ব্যবসায়ীদের কর কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছেন। তাদের ব্যাংক ঋণ সহজ করার পথ খুঁজছেন। খাদ্য রফতানি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের সব সমস্যা সমাধানের কথা ভাবছেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে জাতীয় রাজনীতিতে উঠে আসা মুক্তিযোদ্ধা ড. আবদুর রাজ্জাক তিন দফায় আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তার দৃষ্টিতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উন্নয়নের পক্ষে গণজোয়ার বয়েছে বলেই আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। মানুষ শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি-উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে স্বাধীনতার প্রতীক নৌকায় ভোট দিয়েছে। সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থা ও ভরসা রেখেছে।
একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, বিএনপির জনসমর্থন আছে। দেশ পরিচালনায় তাদেরও নতুন চিন্তা থাকতে পারে। তাই তাদের উচিত হবে, বর্তমান সরকারকে পরামর্শ দেওয়া। তারা জাতীয় সংসদে এসেও দেশ পরিচালনায় ভূমিকা রাখতে পারে। সংখ্যায় কম হলেও বিএনপির পরামর্শ যৌক্তিক হলে অবশ্যই তা সাদরে গ্রহণ করা হবে।
দশম জাতীয় সংসদে অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দক্ষতা দেখিয়েছেন ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, গত অর্থবছরে জাতীয় প্রবৃদ্ধি সাত দশমিক ৮৬ ভাগে উন্নীত হয়েছিল। আগামী পাঁচ বছরে এ প্রবৃদ্ধি ১০ ভাগে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সরকার মূল্যস্ম্ফীতি পাঁচ দশমিক চার ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে বলেই জনগণ অর্থনীতির সুফল ভোগ করছে। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতির এ সাফল্য আরও উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন ড. আবদুর রাজ্জাক।