একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় নাগরিক সংলাপ করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
বিকালে জাতীয় ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকের পর জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব সাংবাদিকদের এই কর্মসূচি জানান। ওই বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বা দলটির কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না।
রব বলেন, “আমরা নাগরিক সংলাপের কথা আগেই ঘোষণা করেছিলাম। আগামী ২৮ তারিখের জন্য হলও বুকিং করেছিলাম। এই তারিখটা পরিবর্তন করা হয়েছে। আমাদের নেতা ড. কামাল হোসেন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে বিদেশে যাবেন। উনি ফিরে আসলে আমরা আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি এই সংলাপ করব।”
সমাজের সব স্তরের এবং শ্রেণি-পেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ধাপে ধাপে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণের ‘ভোটের অধিকার এবং মানবিক ও নাগরিক অধিকার’ প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
জেএসডি সভাপতি বলেন, “অস্থির হয়ে তাড়াহুড়া করে আমরা কোনো কর্মসূচি দিতে চাচ্ছি না। আমরা চিন্তা-ভাবনা করে জনগণকে সাথে নিয়ে পর্যায়ক্রমে কর্মসূচি দেব।”
মির্জা ফখরুল বা দলটির কোনো প্রতিনিধি বৈঠকে না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, “আমি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের সাথে কথা বলেছি। উনি অসুস্থ সেজন্য আসতে পারেননি।
“বৈঠকে আসার কথা ছিল ড. আবদুল মঈন খান ও গয়েশ্বর বাবুর (গয়েশ্বর চন্দ্র রায়)। উনারা একটা জায়গায় আটকা পড়েছেন। আগামী মিটিংয়ে আমরা একসাথে হব।”
ঐক্যফ্রন্টের সাথে বিএনপির টানাপড়েন চলছে কি না প্রশ্ন করা হলে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “না, না। আমরা প্রথমে যে অবস্থায় শুরু করেছি আমরা এখনো ঐক্যফ্রন্ট একই জায়গায় আছি। আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই।”
জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে কোনো মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে কি না জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “জামায়াত এখানে বড় ইস্যু হল কী রকম করে? বড় ইস্যু এখন আমাদের কাছে ৩০ তারিখের ভোট, ২৯ তারিখে যে ডাকাতি হয়ে গেল তার বিরুদ্ধে।
“জামায়াতের সাথে আমরা কখনো ছিলাম না, এখনো নাই। এটা আলোচ্য বিষয় হিসেবে আমাদের কাছে খুব প্রাধান্য পাচ্ছে না।”
আ স ম রব বলেন, “এটা একটা পুরনো প্রশ্ন। আমরা তিনজন মুক্তিযোদ্ধা। মাঠে সরাসরি জীবন দিতে গিয়েছি আমি ও মন্টু। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই প্রশ্নের (জামায়াতে ইসলামী) সমাধান হয়ে গেছে পারমানেন্টলি। আমরা মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে আ স ম আবদুর রব, মন্টু, মান্না যেতে পারে না।”
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আগ্রহ প্রকাশের খবরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ ক্ষেত্রে ঐক্যফ্রন্টের অবস্থান জানতে চান সাংবাদিকরা।
জবাবে মন্টু বলেন, “কোন প্রধানমন্ত্রী? আমরা তো নির্বাচনই স্বীকার করছি না।”
গণফোরামের এই নেতা বলেন, “ভোটারবিহীন একটা নির্বাচন। তাহাজ্জুতের নামাজের যে নির্বাচন যেটাকে জাতি হতবাক করে দিয়েছে। এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। আমরা মনে করি, এর বিরুদ্ধে যারা আছেন, যারা মত প্রকাশ করবেন এবং আমরা মনে করি, যারা একটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পথ খুঁজে দেবেন আমাদের। সেই ধরনের মানুষ ও বাংলাদেশের মানুষের সাথে আমরা আছি।”
কামাল হোসেন কবে বিদেশে যাচ্ছেন জানতে চাইলে মান্না বলেন, “উনি পরশু দিন (শনিবার) যাচ্ছেন।”
কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে রব, মান্না, মন্টু ছাড়াও গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ অন্যরা ছিলেন।
স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী এই বৈঠকে ছিলেন না।