পারমাণবিক শক্তি-মহাকাশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে হাত ধরাধরি করে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ-ভারত

dc0730d23e281db42f87793f46b32c08-5c5d768535c5f

ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ ও ভারত দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার পরিধি বিস্তার করছে। যেসব বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা চলছে, তার বাইরে গিয়ে উচ্চপ্রযুক্তি ক্ষেত্রগুলোয় দুই দেশ হাত ধরাধরি করে এগিয়ে যাবে। এই ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে মহাকাশ, পারমাণবিক শক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি এবং ইলেকট্রনিকস।

দুই দেশের পঞ্চম যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকের পর শুক্রবার বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষ থেকে প্রচারিত যৌথ প্রেস বিবৃতিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন অধ্যায় রচনার এই কথা বলা হয়েছে।

এই বৈঠকে মোট চারটি বিষয়ে দুই দেশ চুক্তিবদ্ধ হয়েছে—১. বাংলাদেশের ১ হাজার ৮০০ আমলাকে ভারত বিশেষ প্রশিক্ষণ দেবে। ২. বিকল্প চিকিৎসার বিকাশে ঔষধি গাছগাছড়া তৈরিতে ভারতের আয়ুষ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ৩. বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা সিবিআইয়ের সঙ্গে ৪. মোংলায় ইন্ডিয়ান ইকোনমিক জোনে লগ্নি আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষ চুক্তিবদ্ধ হলো ভারতের হীরানন্দনী গোষ্ঠীর সঙ্গে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও ভারতের প্রসার ভারতীর মধ্যে একটি চুক্তি বিবেচিত হচ্ছিল। কিন্তু কেন তা হলো না, সে বিষয়ে কোনো দেশ কোনো মন্তব্য করেনি।

রাজধানী নয়াদিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জওহরলাল নেহরু ভবনে শুক্রবার সকালে জেসিসির এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। জেসিসির বৈঠকের আগে জওহর ভবনেই দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী একান্তে সাক্ষাৎ করেন। আধা ঘণ্টার ওই আলোচনায় পারস্পরিক চেনাজানার পাশাপাশি দুজনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়েও কথা হয়।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সম্পর্ককে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যা উন্নতমনা ও সুদূরপ্রসারীই শুধু নয়, যেখান থেকে পিছু হটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরকারি কর্তাদের বলেন, সম্পর্ককে এমন উচ্চতায় স্থাপন করতে হবে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সঙ্গে মানানসই হয়। ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বর্ষপূর্তি।

বৈঠকের শুরুতেই সুষমা স্বরাজ অভিনন্দন জানান আবদুল মোমেনকে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে বাংলাদেশ যে বিশেষ গুরুত্ব দেয়, সে কথা উল্লেখ করে মোমেন বলেন, প্রথম সফর হিসেবে ভারতকে বেছে নেওয়া তার প্রমাণ। দুজনেই বলেন, সম্পর্কের সূত্রপাত মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে। আজ ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি উভয়ের বিশ্বাস এবং উন্নয়ন আঁকড়ে এই সম্পর্ক এগিয়ে চলেছে।

দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, এই বৈঠকে তা পর্যালোচনা করা হয়। দুই দেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর সফরে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর রূপায়ণ কতটা হয়েছে এবং ২০১৭ সালের অক্টোবরে ঢাকায় জেসিসির বৈঠকের পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার ছবি কেমন, তা পর্যালোচিত হয়। নিরাপত্তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে বাণিজ্য, লগ্নি, বিদ্যুৎ ও শক্তি, নদীর পানি বণ্টন, যোগাযোগ, সংস্কৃতি ও মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক স্থাপনে সহযোগিতার গতিতে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীই সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গও ওঠে। যুক্ত বিবৃতি অনুযায়ী, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে চলে আসা মানুষজনকে বাংলাদেশ যেভাবে মানবিক দৃষ্টিতে দেখেছে, সুষমা তার প্রশংসা করেন। আবদুল মোমেনকে তিনি বলেন, এই মানুষজন যাতে দ্রুত, নিরাপদভাবে মিয়ানমার ফিরে যেতে পারে, ভারত সে জন্য সব রকমভাবে সচেষ্ট থাকবে। এই মানুষদের মানবিক সাহায্যের জন্য ভারতকেও ধন্যবাদ জানান আবদুল মোমেন।

আবদুল মোমেনের সম্মানে শুক্রবার রাতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী এক নৈশভোজ দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার রাতে দেখা করেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ভারতরত্ন প্রণব মুখার্জির সঙ্গে।

Pin It