তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতৃত্ব নির্বাচনে বড় দুই পক্ষ—সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম সমঝোতার দিকেই হাঁটছে। আগামী নির্বাচনে যৌথভাবে প্রার্থী দেবে তারা। তবে স্বাধীনতা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী দিলে শেষ পর্যন্ত ভোট হবে। সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
২০১৯-২১ মেয়াদে সংগঠনটির ৩৫ পরিচালক নির্বাচনের জন্য আগামী ৬ এপ্রিল ভোট গ্রহণের কথা রয়েছে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল আগামী বৃহস্পতিবার। কিন্তু সেদিন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ায় মনোনয়নপত্র জমার সময় শনিবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গতকাল রোববার নির্বাচন বোর্ড সিদ্ধান্তটি নেয়। এদিকে বিজিএমইএর নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন বোর্ড। মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৯৫৫ জন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার ১ হাজার ৫৯৭ জন। বাকি ৩৫৮ জন চট্টগ্রামের। ২০১৩ সালে ভোটার ছিলেন ৩ হাজার ১৯৬ জন। ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন ২ হাজার ৮১৩ জন ভোটার। তার মানে ছয় বছরের ব্যবধানে ভোটার কমেছে ১ হাজার ২৪১ জন।
জানতে চাইলে সম্মিলিত পরিষদের নেতা ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি আছে, সে অনুযায়ী হবে। আমাদের দিক থেকে ভিন্ন চিন্তা নেই।’
স্বাধীনতা পরিষদের বিষয়ে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘যে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারে। গণতান্ত্রিক ব্যাপার। তবে বড় দুই দল একসঙ্গে থাকলে মনে হয় না, কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। করলেও খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় যেতে পারবে না। কারণ, সম্মিলিত পরিষদ ১০ বার ও ফোরাম ৩ বার বিজিএমইএকে নেতৃত্ব দিয়েছে।’
অন্যদিকে ফোরামের নেতা ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘সমঝোতা অনুযায়ী যৌথভাবে প্যানেল দেবে সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম। পোশাকশিল্পের স্বার্থে সংগঠনের সাবেক সভাপতিরা সমঝোতাটি করেছিলেন।’
অবশ্য বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান দাবি করেন, ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। টিপু ভাই (বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি টিপু মুনশি) ঢাকার বাইরে। তিনি ফিরলেই বৈঠক করে কাল-পরশুর মধ্যে সিদ্ধান্ত হবে।’ ভোটার কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
মো. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে বিজিএমইএর বর্তমান কমিটি ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করে। ২০১৩ সালে সাধারণ সদস্যদের ভোটে সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচিত হলেও ২০১৫ সালে তা হয়নি। সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের নেতারা সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেন। দুই মেয়াদের জন্য সেই সমঝোতা হয়েছিল। তার ভিত্তিতে প্রথমবার সম্মিলিত পরিষদ সভাপতি, ৪ সহসভাপতিসহ ১৪ পরিচালক এবং ফোরাম তিন সহসভাপতিসহ ১৩ পরিচালক পদ পেয়েছে। পরের মেয়াদে সভাপতিসহ অন্য পদগুলো দুই পক্ষের মধ্যে অদলবদল হবে। উভয় পক্ষের শীর্ষ নেতারা সেই সংখ্যক প্রার্থী বাছাই করে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
বিজিএমইএর একেকটি কমিটির মেয়াদ সাধারণত দুই বছর হয়। তবে বর্তমান সভাপতি তিন দফায় ১৯ মাস মেয়াদ বাড়িয়ে নেন। শেষ দফায় গত ডিসেম্বরে এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ করেন সিদ্দিকুর রহমান। আবেদনও করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। তবে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের কাছে নালিশ জানান ফোরামের নেতারা। পরে বিজিএমইএর বর্তমান কমিটির মেয়াদ এক মাস বৃদ্ধি করে মন্ত্রণালয়। তাতে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে ২২ এপ্রিল। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।
সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, আগামী মেয়াদে ফোরামের পক্ষ থেকে সভাপতি হবেন। শুরুতে ফোরামের নেতারা সংগঠনের বর্তমান সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খানকে সভাপতি পদের জন্য নির্বাচিত করেছিলেন। তবে বিভিন্ন কারণে দুই দফায় তাঁদের প্রার্থী বদল করা হয়। বর্তমানে মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হককে সভাপতি পদের জন্য নির্বাচিত করেছেন ফোরামের শীর্ষ নেতারা। রুবানা হক ফোরামের প্যানেল লিডার।
বিজিএমইএর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত বছরের জানুয়ারিতে স্বাধীনতা পরিষদ নামে একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। গত মাসে তারা ঘোষণা দেয়, বিজিএমইএর নির্বাচনে অংশ নেবে স্বাধীনতা পরিষদ। তারা ব্যবসায়ীদের সংগঠনটির নেতৃত্ব বাছাইয়ে নির্বাচনের ধারা ফিরিয়ে আনতে চায়। তবে প্রয়োজনে অন্য দুই সংগঠনের মধ্যে একটির সঙ্গে প্যানেল ভাগাভাগি করেও নির্বাচনে যেতে পারে তারা।
জানতে চাইলে ফোরামের প্যানেল লিডার রুবানা হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফোরাম থেকে ১৯ এবং সম্মিলিত পরিষদ থেকে ১৬ জন দিয়ে যৌথ প্যানেল করা হবে। আমরা আমাদের প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতা পরিষদের সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতায় যাব না।’ অন্যদিকে সম্মিলিত পরিষদের একাধিক নেতা জানান, তাঁদের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। তবে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
জানতে চাইলে স্বাধীনতা পরিষদের আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঢাকায় ২০-২৫ জন প্রার্থী দেব। চট্টগ্রামে কেউ নির্বাচন করতে চাইলে আমরা সমর্থন দেব।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচনে আমরা যাতে অংশগ্রহণ করতে না পারি, সে জন্য নানামুখী প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। তবে আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাব।’