গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৪ হাজার ১৮৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ৬টি ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি। এ ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ থাকা ব্যাংক হলো জনতা ব্যাংক লিমিটেড। এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ২২ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সাংসদ হাজী মোহাম্মদ সেলিমের প্রশ্নের লিখিত জবাবে এসব তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বেসিক ব্যাংক লিমিটেডে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আট হাজার ৪৪১ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকে পাঁচ হাজার ৬৮৪ কোটি, রূপালী ব্যাংকে চার হাজার ৮৭০ কোটি এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডে ৭৭৯ কোটি টাকা।
আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনগুলো পর্যালোচনা ও সংস্কারের নিমিত্তে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠিত হয়েছে। ঋণঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সংশ্নিষ্ট নীতিমালাগুলো পুনঃ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। নতুন নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে খেলাপি ঋণ অনেকাংশেই কমবে বলে আশা করা যায়।
দেশের ২০ শীর্ষ ঋণ খেলাপি : সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, দেশে বর্তমানে (ডিসেম্বর, ২০১৮ ভিত্তিক) ঋণ খেলাপির সংখ্যা দুই লাখ ৬৬ হাজার ১১৮। দেশের শীর্ষস্থানীয় ২০ ঋণ খেলাপির মধ্যে রয়েছে- কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম লি., সামানাজ সুপার অয়েল লি., বি আর শিপিং মিলস, সুপ্রভ ফুটওয়ার, রাইজিং স্টিল, কম্পিউটার সোর্স লি., বিনিটেপ ইন্ডাস্ট্রিজ, ম্যাপ শিপিং মিলস, এসএ অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড, রুবিয়া ভেজিটেবল অয়েল, আনোয়ারা শিপিং মিল, ক্রিসেন্ট লেদার মিলস, সুপ্রভ রোটর শিপিং, ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী নিটওয়ারস, সিদ্দিক ট্রেডার্স, রুপালী কম্পোজিট লেদার ওয়্যার, অ্যালপা কম্পোজিট টাওয়েলস এবং এমএম ভেজিটেবল অয়েল প্রডাক্টস লিমিটেড।
তিনি জানান, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকায় এ তালিকায় অন্তর্ভুক্তির যোগ্য কিছু ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা :আরেক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, গত অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ বাবদ এক হাজার ৪০৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ১১ হাজার ৬১০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। পরিশোধিত অর্থের মধ্যে রয়েছে আসল বাবদ নয় হাজার ১৪৩ কোটি এবং সুদ বাবদ দুই হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।
বৈদেশিক ঋণ সাড়ে ৩৩ হাজার মিলিয়ন ডলার : সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলামের প্রশ্নের লিখিত জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতির মোট পরিমাণ ৩৩ হাজার ৫১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ২০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
এ ছাড়া এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক আট হাজার ৮৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, জাপান চার হাজার ৭১৫ মিলিয়ন, ইসলামী ব্যাংক ৫২১ মিলিয়ন, আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল ৪৫৩ মিলিয়ন, চীন এক হাজার ৯৯৭ মিলিয়ন, রাশিয়া এক হাজার ২০৫ মিলিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া ৪৩০ মিলিয়ন, ভারত ৩২৪ মিলিয়ন এবং অন্যান্য সংস্থার কাছে বৈদেশিক ঋণ স্থিতির পরিমাণ ৮২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।