রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, উন্নয়নের জন্য দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের বিকল্প নেই। তাই তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে হবে। নেতৃত্ব নির্বাচনে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হচ্ছে ভোট।
রাষ্ট্রপতি আজ শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আয়োজিত রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় ভোটার দিবসের অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ। গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় একজন ভোটার তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেন এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হলেও নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে দলমত-নির্বিশেষে সবাইকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে ভোটারদের। এ প্রেক্ষাপটে জাতীয় ভোটার দিবস পালন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই দিবসটিকে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তৃণমূল পর্যায়ে যথাযথভাবে পালন করা হলে দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক সাড়া পড়বে। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করব দেশের সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এ লক্ষ্যে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তাহলেই দেশে দোষারোপের রাজনীতির পরিবর্তে শান্তি, সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা ও পরমতসহিষ্ণুতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। গণতন্ত্র ও উন্নয়ন এগিয়ে যাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।’
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ প্রবাসী বাংলাদেশিরা যাতে প্রতিটি নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তার জন্য নির্বাচন কমিশনকে তাঁদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি লোক প্রবাসে অবস্থান করেন এবং তাঁরা বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু এদের অনেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিরা যাতে জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে পারেন, তার বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’ তিনি বলেন, এটা সম্ভব হলে প্রবাসীদের নাগরিকত্বসহ তাঁদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি সহজতর হবে। তা ছাড়া প্রবাসীদের ভোটাধিকারের দাবিও ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। প্রবাসে অবস্থান করে যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ পৃথিবীর প্রায় ১২০টি দেশের প্রবাসী নাগরিকগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও যাতে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পান, সে বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় ভোটার দিবসের এ বছরের বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ভোটার হব, ভোট দেব’, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি তরুণদের ভোটার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ভোট দেওয়ার মানসিকতা তৈরিতে এটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, বায়োমেট্রিক ফিচারসমৃদ্ধ এনআইডি ডেটাবেইসে সব ভোটারের আঙুলের ছাপ এবং চোখের আইরিশ গ্রহণ করা হয়েছে। আমি জেনে খুশি হয়েছি যে, নির্বাচন ব্যবস্থায় আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভোটার তালিকাভুক্তকরণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে। ভোটার তালিকাভুক্তকরণের সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কেও সচেতন করে তুলতে হবে। ভোটাররা যত বেশি সচেতন হবে, নির্বাচনও তত সুষ্ঠু হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী, নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।