রাজধানীর বনানীর ফারুক রূপায়ণ (এফআর) টাওয়ারে আগুন লেগেছে। সেই ভবনের আক্রান্ত মানুষজন বাঁচার আশায় জানালার ফাঁক দিয়ে হাত বাড়িয়ে আকুতি জানাচ্ছেন। দূর থেকে শোনা না গেলেও সেই আকুতির ভাষা সবারই জানা—আমাদের বাঁচাও।
ভবনে যাঁরা আটকে ছিলেন, তাঁরা অসহায়। নিচের সড়কে দাঁড়িয়ে আত্মীয়স্বজন ও উৎসুক জনতা, তারাও অসহায়। সূর্যাস্তের পর জানা গেল, আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে ২৫ জনের তাজা প্রাণ।
আজকের দিনটা এমনই অপয়া যে মৃত্যুর সংবাদ শুধু শহরেই নয়। এসেছে সড়ক দুর্ঘটনায় একের পর এক মৃত্যুর খবর। সেখানেও ২০ জন। বাদ যায়নি ছাদ থেকে পড়ে এবং ছুরিকাঘাতে মারা যাওয়ার খবরও। এ যেন দেশজুড়ে মৃত্যুর মিছিল। দিন শেষে নিদারুণ ও নিষ্ঠুর এই অঙ্কের যোগফল ৪৭। আর আহতের সংখ্যা শতাধিক।
মৃত্যুর এই মিছিলের সূচনা চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতির জাঙ্গালিয়া এলাকায়। সেখানে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মা-মেয়েসহ আটজন নিহত হন। আহত হন ২০ জন। বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এরপর অব্যাহতভাবে আসতে মৃত্যুর খবর।
বনানীর বহুতল এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার সূত্রপাত হয় দুপুর ১২টার দিকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, আগুন লাগার পর ভবন থেকে নামতে গিয়ে অনেকেই আহত হন। আগুন থেকে বাঁচতে বেশ কয়েকজন ভবন থেকে লাফ দেন। এতে নিহত হয়েছেন শ্রীলঙ্কার এক নাগরিক। অনেকে ভবনের পাশে ঝুলে থাকা তার ধরে নামতে গিয়ে নিচে পড়ে আহত হন। সরকারি উদ্ধারকর্মীরা অনেককেই উদ্ধার করতে সক্ষম হন। তখন ধারণা করা হয়েছিল, মৃতের সংখ্যা খুব বেশি হবে না। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে উদ্ধারকর্মীরা যখন ভেতরে গেলেন, তখনই বের হতে থাকে একের পর এক লাশ। রাতে জানা গেল, মৃতের সংখ্যা ২৫। আর আহত ৭০ জন।
পুলিশের বয়ান থেকে জানা যায়, আগুনে আক্রান্ত ভবন থেকে উদ্ধার পেলেও শেষ যাত্রায় উদ্ধার পাননি অন্তত সাতজন। আমেনা মারা গেছেন অ্যাপোলো হাসপাতালে। পারভেজ সাজ্জাদ বনানী ক্লিনিকে, নিরস দিগ্নে রাজা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এবং মামুন, মাকসুদুর ও মনির ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা গেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন আবদুল্লাহ আল ফারুক।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, অ্যাপোলো হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ আরও অনেক হাসপাতাল-ক্লিনিকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন অনেকে।অন্যান্য দুর্ঘটনা
আজকে আরও একটি বড় দুর্ঘটনা ঘটে মাদারীপুরের সদর উপজেলার কলাবাড়ি এলাকায়। সেখানে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একটি যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে সাতজনের প্রাণহানি ঘটে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, ফরিদপুরের চন্দ্রপাড়া এলাকায় ওরস মাহফিল শেষে যাত্রীরা মাদারীপুর সদরের ভাঙা ব্রিজ এলাকায় ফিরছিলেন। এ ঘটনায় আহত হন অর্ধশত।
যশোর সদর উপজেলার চাউলিয়া এবং যশোর শহরের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডের পাশে যশোর-খুলনা মহাসড়কে দুটি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন চারজন। নারী-পুরুষ-শিশুসহ আহত অন্তত ১৫ জন। বগুড়ার ধুনটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আহসান হাবিব নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা। বুধবার দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জে জাকির হোসেন (৩৬) নামের এক অটোরিকশাচালকের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর মরদেহে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ সচিবালয়ের নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে পড়ে মারা গেছেন একজন শ্রমিক।