স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, স্বাধীনতার ৪৮তম বার্ষিকীতে এসে তারা এখন ‘স্বাধীন নন’।
এক যুগের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় সাজা নিয়ে এখন কারাবন্দি। দলীয় সরকারের অধীনে গত ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে গিয়ে ভরাডুবি হয়েছে তাদের, মাত্র আটটি আসনে জয়ী হন বিএনপি জোটের প্রার্থীরা।
ওই নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ করে বিএনপি পুনর্নির্বাচনের দাবি করলেও তাতে ‘গা’ করছে না ক্ষমতাসীনরা। এক বছরের বেশি কারাবান্দি খালেদা জিয়ার জামিন না হওয়ার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে তাদের।
এই প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস উপলক্ষে বুধবার নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শোভাযাত্রা বের করে নাইটেঙ্গেল মোড় ঘুরে পুলিশি বাধার মুখে শান্তিনগর মোড়ে এসে শেষ করে বিএনপি।
শোভাযাত্রা শুরুর আগে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে আমাদের স্বাধীনতাকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে, আমাদের মানুষের মুক্তচিন্তা করবার যে স্বাধীনতা, কথা বলার যে স্বাধীনতা, লেখবার যে স্বাধীনতা- সেই স্বাধীনতাকে হরণ করেছে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে এই আওয়ামী লীগ।”
বিকাল ৩টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এই শোভাযাত্রা বের হয়। মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিণ, মুক্তিযোদ্ধা দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, ছাত্রদল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে ফকিরাপুল থেকে নাইটেঙ্গল রেস্তোরাঁ পর্যন্ত গোটা সড়ক জনসমুদ্রে পরিণত হয়। নেতা-কর্মীরা লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় বড় প্রতিকৃতি হাতে নিয়ে ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম’, ‘রক্ত দিয়ে এনেছি স্বাধীনতা, রক্ত দিয়ে রাখব’, ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, গণতন্ত্রের মাতা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ স্লোগান দেন তারা।
মিছিলের সম্মুখভাগ যখন শান্তিনগরের মোড়ে পুলিশ বেষ্টনীর কাছে আসে, তখন মিছিলের শেষ ভাগ ছিল কাকরাইলের নাইটেঙ্গেল রেস্তেরাঁর মোড়ে।
শোভাযাত্রা শুরুর আগে ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আজকে দেশ স্বাধীনতা অর্জন করলেও আমরা স্বাধীন নই, আমরা মুক্ত নই। একটা পাথর আমাদের বুকের ওপর চেপে বসেছে।”
“আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী যিনি সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন সেই নেত্রীকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ, তাকে চিকিৎসা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না।”
স্বাধীনতা দিবসের এই কর্মসূচিতে দলমত নির্বিশেষে ঐক্য সৃষ্টি করে ‘দেশনেত্রী ও গণতন্ত্র মুক্ত করার’ শপথ নিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
শোভাযাত্রা শুরুর আগে মির্জা ফখরুল ছাড়াও দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বক্তব্য রাখেন।
অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আমিনুল হক, আবদুস সালাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, আবু আশফাক খন্দকার, কাজী আবুল বাশার, আসানউল্লাহ হাসান, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, সাইফুল আলম নিরব, মোরতাজুল করীম বাদরু, নুরুল ইসলাম নয়ন, মামুন হাসান, আনোয়ার হোসাইন, নুরুল ইসলাম খান নাসিম, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, জেবা আমিন খান, হেলেন জেরিন খান, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবুল কালাম আজাদ, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা শোভাযাত্রায় অংশ নেন।