দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে জাহিদুর রহমান শপথ নেওয়ার পর বিএনপি থেকে নির্বাচিত বাকি এমপিদের ঠেকাতে চলছে জোর তৎপরতা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর টেলিফোনে বিজয়ী চার এমপিকে শপথ না নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। তবে এ বিষয়ে কৌশলী বক্তব্য দিচ্ছেন বিজয়ী নেতারা। সরাসরি শপথ নেওয়া বা না নেওয়ার কথা বলছেন না তারা। তার পরও হাল ছাড়ছে না বিএনপি হাইকমান্ড। বাকিরা শপথ নেবেন না বলে আশাবাদী তারা।
দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেওয়ার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে আজ শনিবার বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে জাহিদের বিষয়ে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত ছাড়াও দলের বৃহত্তর স্বার্থে অন্য এমপিদের শপথ নেওয়া থেকে বিরত রাখার কৌশলও নির্ধারণ করা হবে। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসবেন দলের শীর্ষ নেতারা।
অবশ্য সরকার চাপ দিয়ে বিএনপিদলীয় নেতাদের শপথ নিতে বাধ্য করছেন বলে গতকালও অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্যদিকে, সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাহিদুর রহমান শপথ নিয়েছেন দলের সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে। এটা তিনি অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছেন। অন্যায় করেছেন, অপরাধ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দল অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।
নীতিনির্ধারকদের এসব উদ্যোগের পরও দু’জন এমপির বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারছেন না বিএনপি নেতারা। তাদের মধ্যে একজন নেতা ও তার পরিবার অতীতে অবমূল্যায়িত হয়েছেন বলে ক্ষুব্ধ দলের ওপর। অন্যজন ক্ষুব্ধ ওই নেতার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে এখনও একমত অন্য এমপিরা।
গত মঙ্গলবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের এমপি এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বৈঠকে জেলা বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন না। তবে উপস্থিত ছিলেন জেলা কমিটি থেকে পদত্যাগ করা প্রথম যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট ময়েজউদ্দিনসহ সদর থানা বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা। সদর থানা বিএনপির সভাপতি তসিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে শপথ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মতি সমকালকে বলেন, তাদের বৈঠকে সংসদে যাওয়ার বিষয়ে মতামত দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছেন, জনগণ ও নেতাকর্মীরা হারুনুর রশীদকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছেন সংসদে যাওয়ার জন্য। সেখানে তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কথা বলবেন। এলাকার সমস্যার বিষয়ে কথা বলবেন। এ জন্যই তাকে ভোট দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, তাদের এ সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় বিএনপিকে জানানো হবে বলে হারুনুর রশীদ তাদের আশ্বস্ত করেছেন। তবে সংসদে না যাওয়ার বিষয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত থাকলে সে অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে।
বৈঠক হওয়ার কথা নিশ্চিত করে অ্যাডভোকেট ময়েজউদ্দিন বলেন, তিনি এতে উপস্থিত ছিলেন না। সেখানে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাও জানেন না।
হারুনুর রশীদের স্ত্রী ও সাবেক এমপি সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক। তবে তাকে অবমূল্যায়নের অভিযোগ করে ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে দলের কোনো কার্যক্রমে না থাকলেও তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন।
সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়ার ঘনিষ্ঠরা জানান, দলের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন বলেই তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় আকস্মিকভাবে তাকে বাদ দিয়ে এবং তার অনুসারীদের না রেখে জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ ক্ষোভ থেকেও সংসদে যাওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
এ ছাড়া হারুনুর রশীদের প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ তার আপন চাচাতো ভাই। একসময়ে হারুনের সঙ্গেই ওদুদ রাজনীতি করতেন। সম্পর্কে ঘনিষ্ঠ হলেও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। হারুন শপথ না নিলে শূন্য আসনে ওদুদ এমপি নির্বাচিত হবেন বলেও তার মধ্যে আশঙ্কা কাজ করছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির এক নেতা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের এমপি ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামকে অনেকেই হারুনুর রশীদ ও পাপিয়ার ঘনিষ্ঠ মনে করেন। শপথ নিলে তারা দু’জন একসঙ্গেই নেবেন।
এ বিষয়ে হারুনুর রশীদ জানান, শপথের বিষয়ে ৩০ এপ্রিলের আগে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। সংসদে না যাওয়ার দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানালে তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্ত থাকলেও তিনি নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।
বগুড়া-৪ আসনের এমপি মোশারফ হোসেন বলেন, জাহিদুর রহমান শপথ নেওয়ার পর তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুল ইসলাম তাকে ফোন দিয়েছিলেন। তাদের স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। দলের পক্ষ থেকেও নেতারা তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানান তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের এমপি উকিল আব্দুস সাত্তার জানান, তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের মধ্যেই রয়েছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে বিজয়ী ছয়জন হলেন- বগুড়া-৬ আসনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বগুড়া-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে হারুনুর রশীদ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উকিল আব্দুস সাত্তার।