মাধ্যমিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিকেও এবার পুরনো সিলেবাসের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার দেশজুড়ে শুরু হওয়া উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ২০১৯ সালের প্রশ্নের পরিবর্তে ২০১৬ সালের পুরনো সিলেবাসের প্রশ্নপত্র নিয়মিত পরীক্ষার্থীদেরও সরবরাহ করা হয়। কোথাও কোথাও ভুল ধরা পড়ার ৩০ মিনিট পর প্রশ্ন বদলে নতুন প্রশ্ন দেওয়া হয়। তবে এতে পরীক্ষার্থীরা চাপে পড়ে যায়। রাজধানীর পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর কলেজে পরীক্ষার্থীদের পুরনো প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়। সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীন হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মিরপুর আলিফ সুবহান চৌধুরী কলেজেও পরীক্ষার্থীদের ২০১৬ সালের প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। ভুল ধরা পড়ার ৩০ মিনিট পর তাদের নতুন প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। একই ঘটনা ঘটেছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডে। মোট কতটি পরীক্ষাকেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও একই ঘটনা ঘটেছিল। সে সময়েও পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন গতকাল সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, এবার এইচএসসি পরীক্ষায় দু-একটি স্থানে ২০১৯ সালের পরিবর্তে ২০১৬ সালের প্রশ্নপত্র বিতরণের ঘটনা ঘটেছে। কেন, কীভাবে, কার জন্য এমনটি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে এরই মধ্যে বোর্ড চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে। একইসঙ্গে মোট কতটি কলেজে এমনটি হয়েছে, তার পরিসংখ্যানও জানাতে বলা হয়েছে। এই পরীক্ষার্থীদের খাতা আলাদা করে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পরীক্ষার্থীরা কেউ এ ঘটনায় কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে গতকাল সোমবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা একযোগে শুরু হয়েছে। এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৫০৫ জন। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২ হাজার ৫৭৯টি কেন্দ্রে। ২৭৫ শিক্ষার্থী দেশের বাইরের আটটি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর বেইলি রোডের সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্র্র পরিদর্শন করেন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আশা প্রকাশ করেন, এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে না।
এদিকে, পরীক্ষার মনিটরিং কক্ষের দেওয়া প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পরীক্ষার প্রথম দিন ১৪ হাজার ৯৮৮ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। পরীক্ষায় অনিয়মের জন্য ২৭ শিক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়েছে।
পরীক্ষার সূচি অনুযায়ী, গতকাল প্রথম দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এইচএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথমপত্র, বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্র (ডিআইবিএস) ও আলিমে কোরআন মাজিদ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এইচএসসি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায় সকালে বাংলা-২ (নতুন সিলেবাস), বাংলা-২ (পুরনো সিলেবাস); বিকেলে বাংলা-১ (সৃজনশীল নতুন সিলেবাস), বাংলা-১ (সৃজনশীল পুরনো সিলেবাস) ও ডিপ্লোমা ইন কমার্সে সকালে বাংলা-২, বিকেলে বাংলা-১ (সৃজনশীল) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল সকালে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্র্র পরিদর্শন করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের জানান, তিনি আশা করছেন এসএসসি পরীক্ষার মতোই এবারের এইচএসসি পরীক্ষাও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। সবার সহযোগিতায় প্রশ্ন ফাঁসহীনভাবেই পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হবে। শিক্ষক, পরীক্ষার্থী, অভিভাবক, গণমাধ্যমসহ সবার সহযোগিতা চান শিক্ষামন্ত্রী। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাই সহযোগিতা করছেন।
শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষাস্তর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা বাদ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। এটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে। আমরা শিক্ষানীতি অবশ্যই বাস্তবায়ন করব। তবে একবারে তো সব করা সম্ভব হবে না, পর্যায়ক্রমে করা হবে।
এসএসসি পরীক্ষার সময় প্রশ্নপত্র ভুল ছাপা ও বিতরণে সমস্যার জন্য যে পরীক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে প্রতিবেদন দিয়েছে। আমরা সেটি দেখছি, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়নেও কোনো সমস্যা হবে না। এর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে।
প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নজরদারি করছে। কেউ যদি কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকে, প্রতারণা করে, গুজব ছড়ায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একই সঙ্গে তিনি অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান, কোনো রকম গুজবে কান দেবেন না। কারও ফাঁদে পা দেবেন না। কোচিং সেন্টার বন্ধের বিষয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, ১ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। বিভিন্ন রকমের কোচিং আছে, এগুলোকে আমরা আলাদা করতে পারছি না। কিছু অসাধু চক্র নানা নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে যায়, সে জন্য আমরা সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করছি জেলা ও উপজেলার সর্বোচ্চ প্রশাসন বিষয়টি মনিটর করবে। কোচিং সেন্টারগুলো সত্যি সত্যিই বন্ধ থাকছে, তা তারা নিশ্চিত করবে।
সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে অভিভাবকরা মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। পরীক্ষার্থীদের সাধারণ হাতঘড়ি নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেওয়ায় অভিভাবকরা ক্ষুুব্ধ হন। এ বিষয়ে তারা মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কোনো উত্তর না দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী গাড়িতে উঠে চলে যান।