অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সচল হওয়ার দুই মাস পূর্ণ হয়েছে বৃহস্পতিবার, তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার এই ছাত্র সংসদ নিয়ে হতাশার কথাই জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
নির্বাচনের সময় ছাত্রদের আবাসন সমস্যার সমাধান, হল থেকে বহিরাগতদের বের করা, শিক্ষার বাণিজিকীকরণ বন্ধ, স্বাস্থ্যবীমা চালু, ক্যাম্পাসে বহিরাগত যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ, কেন্দ্রীয় ও হল লাইব্রেরিতে আসন সংখ্যা বাড়ানোসহ বিভিন্ন আশ্বাস দেওয়া হলেও কার্যত তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিকে ডাকসু নেতারা শিক্ষার্থীদের এই সব সমস্যা নিয়ে তৎপরতা দেখালেও ধীরে ধীরে তা স্তিমিত হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে ডাকসু নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, তহবিল সংকটে চাইলেও কিছুই করতে পারছেন না তারা। আবার কেউ বলছেন, নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কথা।
এই দুই মাসে ডাকসুর কার্যক্রম নিয়ে নেতারাও সন্তুষ্ট হতে না পারলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলছেন ভিন্ন কথা। পদাধিকার বলে ডাকসুর সভাপতির দায়িত্বে থাকা উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের মতে, ভালোই করছে তারা।
প্রায় তিন দশকের অপেক্ষার পর গত ১১ মার্চ ডাকসু ও ১৮টি হল সংসদের নির্বাচন হয়। অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় পাঁচটি প্যানেল।
ভোটে ডাকসুতে মোট ২৫টি পদের মধ্যে জিএস-এজিএসসহ ২৩টি পদে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ। আর বর্জনের মধ্যেও ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা নুরুল হক নূর ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে জয়ী হন একই প্যানেলের আখতার হোসেন।
২৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ডাকসুর নেতারা। এরপর দুই মাসে কয়েকটি হলে ক্যান্টিনের খাবারের মান বৃদ্ধির চেষ্টা এবং মেয়েদের রাতে হলে প্রবেশের সময় কিছুটা বাড়ানো ছাড়া আরও কোনো অগ্রগতি দেখছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আনিকা আনজুম অর্ণি।
তিনি বলেন, “ডাকসু নির্বাচনের সময় মেয়েদের যে স্পর্শকাতর বিষয়গুলো সামনে এনে নির্বাচনী ইশতেহারগুলো দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
“ডাকসু নেতারা নির্বাচনের আগে আগে শিক্ষার্থীদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ রক্ষা করেছিল, কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষার্থীদের সাথে আর কোনো যোগাযোগ করে বলে মনে হয় না।”
ডাকসু নেতাদের কার্যক্রম নিয়ে অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ঊষা।
তিনি বলেন, “ডাকসু নেতারা শুধু খাবারের দাম আর মান নিয়ে পড়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মৌলিক সমস্যা সে ব্যাপারে তারা কানে টিস্যু গুজে বসে আছে। তাদের এত এত নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এখন হারিকেন জ্বালিয়ে খুঁজতে হয়। নেতা হয়ে গেলে যা হয় আরকি!”
ডাকসুর ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে আছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনের দুই নেতা নুরুল হক নূর ও আখতার হোসেন, বাকি ২৩টি পদে আছেন ছাত্রলীগ নেতারা
ডাকসু নেতারা শিক্ষার্থীদের মূল বিষয়গুলো যেমন- গেস্টরুম ও গণরুম বন্ধ করা, শিক্ষার্থীদের সিট বণ্টনের বিষয়ে ‘ভূমিকা না রেখে’ কেউ কেউ অন্য সংগঠনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ করেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ।
তিনি বলেন, “ওই সব সমস্যার সমাধানে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। ডাকসুর নেতারা যে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি, সেই প্রতিনিধির ভূমিকায় আমরা ডাকসুর নেতাদের পাচ্ছি না।
“অথচ দেখা যাচ্ছে আমরা একটা ছাত্র সংগঠন হিসেবে আমাদের প্রোগ্রাম করতেছি, সেখানে ডাকসুর জিএস এসে বাধা দিচ্ছে। সময় নির্ধারণ করে দিচ্ছে। আমরা কী করব না করব, সেটা নির্ধারণ করে দিচ্ছে।”
শিক্ষার্থীদের এই মনোভাবের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, ঈদের পরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসতে চান তিনি।
“তারা যদি আমাকে সহযোগিতা করে তাহলে শিক্ষার্থীদের মৌলিক দাবিগুলো পূরণে বিশেষ করে হল থেকে অছাত্র, বহিরাগত বিতাড়ন এবং কোনো শিক্ষার্থীকে যেন জোর করে মিছিল-মিটিংয়ে নেওয়া বন্ধ করার লক্ষ্যে আমি কার্যকর পদক্ষেপ নেব।”
এই সব বিষয়ে সুরাহার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকও বাধা মনে করছেন ভিপি নূর।
“কেননা হলে প্রাধ্যক্ষ রয়েছেন, হাউজ টিউটর রয়েছেন অথচ হল চালায় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের ছেলেরাই হলে সিট দেয়, হলে তোলে, রুম থেকে নামায়, জোর করে মিছিল-মিটিংয়ে নিয়ে যায়। সুতরাং প্রশাসনও ছাত্রলীগের এই অশুভ তৎপরতার সাথে জড়িত।”
ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ছাত্রলীগেরও সাধারণ সম্পাদক।
ডাকসুর কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যেসব অসামঞ্জস্য আছে সেগুলো প্রশাসনকে দেখিয়ে দেওয়া, এটার জন্য কথা বলা। হল সংসদ এবং আমরা সেই কাজগুলো করছি।
“কিন্তু আমাদের কাছে পাঁচটি টাকাও নেই যে রাতারাতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিবর্তন করে দেব। তাই শিক্ষার্থীদেরও এটা বুঝতে হবে।”
ডাকসু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা দাবি করেছিলাম যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের দুইশ ভাগের একভাগ ডাকসুকে দেওয়া হোক। কিন্তু তারা সেটাতেও রাজি হননি। কারণ কাজ করার জন্য আর্থিক সাপোর্টটাও তো দরকার। আর ডাকসুর ফান্ডেও কোনো টাকা নেই।”
ভিপি-জিএস নিজেদের কার্যক্রমের সীমাবদ্ধতা নিয়ে এই ব্যাখ্যা দিলেও ডাকসুর বিভিন্ন কার্যক্রমে তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার বিষয়টিও স্পষ্ট হয়েছে।
গত ৩১ মার্চ ভিপি নুরুল হক নূরকে না জানিয়েই ডাকসুর জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করার অভিযোগ উঠে জিএস গোলাম রাব্বানী ও এজিএস সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন পদে নয়জনকে নিয়োগের জন্য একটি আবেদন তারা ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ বরাবর করেন, সেখানে জিএস ও এজিএসের স্বাক্ষর থাকলেও ভিপির সই ছিল না। নূরও বলেছেন, তাকে না জানিয়েই করা হয়েছে এই আবেদন।
এর আগে গত ২৭ মার্চ ডাকসুর প্যাডে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের জুনিয়র সব কোর্সের আবেদন ফি কমানোর দাবিতে করা আবেদনেও জিএস ও এজিএসের স্বাক্ষর থাকলেও ভিপির স্বাক্ষর ছিল না। এই বিষয়টিও তাকে জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন নূর।
ডাকসুর দায়িত্ব নেওয়ার আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে এভাবেই ক্যামেরাবন্দি হয়েছিলেন জিএস গোলাম রাব্বানী ও ভিপি নুরুল হক নূর
ওই দুই চিঠির পর বিষয়টি ডাকসুর সভাপতি ও উপাচার্যকে মো. আখতারুজ্জামানকে জানান নূর। এরপর তার আর পুনরাবৃত্তি হয়নি বলেন জানান তিনি।
এ বিষয়ে নূর বলেন, “ডাকসুর গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, ভিপি চিফ এক্সিকিউটিভ, সেই হিসেবে আমাকে না জানিয়ে তো কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু তারপরও ছাত্রলীগের সংখ্যাগরিষ্ঠরা এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা থেকে তাদের সংগঠনের একটা প্রভাব খাটিয়ে চায় যে কিছু একটা করতে, কিন্তু সেটা তো সম্ভব না।”
তবে এরপর গত ৬ মে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ডাকসুর পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়ে যে বার্তা দেওয়া হয়, সেখানে নূরের স্বাক্ষর থাকলেও জিএস-এজিএসের সই দেখা যায়নি।
সমন্বয়হীনতার বিষয়ে জানতে চাইলে জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, “ডাকসু নির্বাচনে ভিপি এবং সমাজসেবা সম্পাদক বাদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আমাদের। সেক্ষেত্রে শুরুতে আমরা কিছুটা অসহযোগিতার মুখোমুখি হয়েছিলাম, কিন্তু সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠে প্রতিটি হল সংসদ এবং ডাকসু কমিটির অনেকগুলো উদ্যোগের ফলে ইতিবাচক পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে।
“এটা ঠিক যে শুরুতে সমন্বয়হীনতার একটা বিষয় থাকলেও তা এখন আর নেই। এখন সেই সমন্বয়হীনতা কেটে গেছে। এখন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবেই ভিপি, জিএস, এজিএসসহ ২৫ জনকে নিয়েই সমন্বয় করে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি।”
তবে এই রাব্বানীর ‘উদাসীনতাই’ ডাকসুর ২৫ জন নেতা এখনও নিজেরা বসতে পারেননি বলে অভিযোগ নূরের।
তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত ডাকসুর সভাপতি এবং কোষাধ্যক্ষের সাথে দুটি আনুষ্ঠানিক সভা হয়েছে। আর অনানুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত আমরা সবাই একসাথে বসতে পারিনি। যেহেতু মিটিং কল করার ব্যাপারটি জিএসের বিষয় আমি তাকে একাধিকবার বলেছি, কিন্তু তার কাছ থেকে মিটিং করার বিষয়ে ওই ধরনের সহযোগিতা আমি পাইনি।
“যেহেতু ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা, সুতরাং তাদের যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়বদ্ধতা বা কাজের প্রতি আন্তরিকতা না থাকে তাহলে আমার পক্ষে তো সম্ভব না যে তাদেরকে জোর করে মিটিং করানো। কিন্তু আমি একাধিকবার বললেও তারা ওইভাবে আগ্রহ নিয়ে এখনও একটা মিটিংও আয়োজন করতে পারেনি। সেইখান থেকে সমন্বয়হীনতা একটু রয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।”
নূর বলেন, “নির্বাচনের ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে বাজেট পেশ করতে হবে এমন বলা থকলেও এখন পর্যন্ত আমরা বাজেট মিটিংই ঠিক করতে পারিনি। এই ব্যাপারে জিএসকে পাওয়া যায় না বেশিরভাগ সময়। জিএস না থাকলে এজিএস তার দায়িত্ব পালন করতে পারে কিন্তু তাকে নিয়োজিত করতে হবে, এখন সেটাও সে করতেছে না। যে কারণে একটু সমন্বয়হীনতার সমস্যা হচ্ছে।”
তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন বৈঠকে ভিপি-জিএসকে ডাকলেও সেখানে রাব্বানী উপস্থিত হননি বলে জানান তিনি।
গত ২ এপ্রিল এক ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করার প্রতিবাদে মিছিল নিয়ে এসএম হলে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন ভিপি নূর, এরপর উপাচার্যের বাসার সামনে অবস্থান নেন তিনি
এ বিষয়ে জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, “আমি ডাকসুর জিএস এবং একইসাথে ছাত্রলীগের সেক্রেটারি। ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে আমি কিছুটা সময় ডাকসুতে অনুপস্থিত ছিলাম। কিন্তু ডাকসুর জিএসের অনুপস্থিতিতে এজিএসকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সকল ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আমি এতদিন অনুপস্থিত ছিলাম, কিন্তু এজিএসকে পূর্ণ দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি এবং আমার অনুপস্থিতিতে এজিএস কাজ করেছে। সুতরাং এখানে অসহযোগিতা বা সমন্বয়হীনতার কোনো সুযোগ নেই।”
তবে এরমধ্যেই কিছু কিছু কাজ করছেন ডাকসুর নেতারা।
ছাত্র পরিবহন সম্পাদক শামস ঈ নোমান তার দুই মাসের কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, “প্রত্যেক রমজানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের ট্রিপের সংখ্যা কমিয়ে দিলেও এবার আমি শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষার কথা চিন্তা করে রমজান মাসেও বাসের ট্রিপের সংখ্যা কমাতে দেইনি।
“আর আমার দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, অ্যাপভিত্তিক বাইসাইকেল সার্ভিস নিয়ে কাজ চলছে। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনুমতি দিলে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগেই এই সার্ভিস উদ্বোধন করতে পারব। এছাড়াও আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর প্রতিটি প্রবেশপথে দারোয়ান নিয়োগ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছি, যাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বহিরাগত যান চলাচল সীমিত করা বা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।”
তবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ডাকসুর সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিতি না থাকার ফলে কাজ করার ক্ষেত্রে বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লাগছে বলে জানান তিনি।
হল ছাত্র সংসদের কার্যক্রম
বেশ কয়েকটি হল সংসদ ক্যান্টিনের খাবারের মান উন্নয়নসহ কিছু বিষয়ে উদ্যোগী হলেও শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি গেস্টরুম-গণরুম বন্ধ, বহিরাগতদের বের করার মতো বিষয়গুলোতে দৃশ্যত চুপই রয়েছে।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী সাদনান সাকিব বলেন, “কিছু ক্ষেত্রে হলের উন্নয়ন করা হলেও হলের মধ্যে সব ধরনের রাজনৈতিক মতাদর্শের ছাত্রদের অবস্থান, এই জিনিসটা আমি এখনও দেখতে পাচ্ছি না। ডাকসু বা হল সংসদ নির্বাচনের পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা তো এই বিষয়টি আশা করে। কিন্তু এই বিষয়টি এখনও দৃশ্যমান না।
“এছাড়া নির্বাচনের আগে আগে বা নির্বাচনের কিছু দিন পর পর্যন্ত তারা গেস্টরুম করে নাই। কিন্তু এখন সেই আগের প্র্যাকটিসে ফিরে গেছে। হয়ত আগের চেয়ে কিছুটা তীব্রতা কমেছে। কারণ এগুলো তো আবার নির্বাচনে ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।”
তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে জগন্নাথ হল সংসদের জিএস কাজল দাস বলেন, “হলের শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতেই আমরা সংসদের পক্ষ থেকে হল প্রশাসনকে বলে হলের লিফটের সময় বৃদ্ধি, হল মাঠের বাণিজ্য বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের জন্য সব সময় উন্মুক্ত রাখা, হল মন্দিরের পাশে জিমনেশিয়ামের ব্যবস্থা করাসহ কিছু কাজ ইতোমধ্যে করেছি। হল প্রশাসনের সহযোগিতায় হল বহিরাগত মুক্তকরণে আমরা ছুটির পরেই পদক্ষেপ নেব।”
তবে হল সংসদের জন্য এখনও কোনো বরাদ্দ না পাওয়ায় অনেক কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জিয়া হল সংসদের ভিপি শরিফুল ইসলাম শাকিল বলেন, “আমাদের হলে ক্যাম্পাসের সর্বপ্রথম শীততাপ নিয়ন্ত্রিত সেলুন করা হয়েছে, অতিথি কক্ষকে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে, খাবারের মান উন্নয়নে আমরা প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি।
“আর অছাত্র-বহিরাগতদের বিষয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বিসিএস পরীক্ষার জন্য কিছু করা হয়নি। ঈদের পর এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও বাকি কার্যক্রমগুলো আমরা প্রভোস্ট স্যারের কাছে জানিয়েছি, সেগুলোর বাজেট এখনও আসেনি।”
শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘গেস্টরুম’ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “হলে পলিটিক্যাল গেস্টরুম আর হয় না। এটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এমনিতেই বিভিন্ন গ্রুপ গেস্ট রুমে বসে। কিন্তু গেস্টরুমে অন্য কিছু হয় না।”
সার্বিক বিষয়ে এই দুই মাসে ডাকসুর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “তারা ভালো করছে। প্রত্যাশা করি, সামনে আরও ভালো কিছু করবে।”
সাত দিনের তদন্ত হয়নি দুই মাসেও
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে গত ২১ মার্চ সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। প্রথমে কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও পরে ১৫ কার্যদিবস অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়। কিন্তু দুই মাসে সেই তদন্ত প্রতিবেদন এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
এই বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই একটা খসড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। শিগগিরই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারব বলে আশা করছি।”
তদন্তে এত সময় লাগার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা সেই সময় নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ করেছিল, তাদের সঙ্গে আরও কেউ অভিযোগ করতে চায় কি না তা উন্মুক্ত করে দেওয়ার ফলেই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে এত বেশি সময় লাগছে।
এদিকে গত ২ এপ্রিল এসএম হলে ভিপি নূরসহ অন্যরা মিছিল নিয়ে গেলে তাদের উপর হামলার ঘটনায় পরদিন ৩ এপ্রিল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে নিলেও সেই তদন্ত প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান ওই হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদন আমরা গত ৭ মে উপাচার্যের কাছে জমা দিয়েছি।”
পরে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, “তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেয়েছি। সেই রিপোর্ট ডিবিকে (বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি বোর্ড) দেওয়া হয়েছে। সেখানে সেই রিপোর্ট উপস্থাপিত হবে।”