বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেছে দেশটির বিচার বিভাগ।
বুধবার ইনকোয়ারারসহ ফিলিপাইনের কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে এ তথ্য জানানো হয়।
২০১৬ সালে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার (৬৮০ কোটি টাকা) রিজার্ভ হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা। এখন পর্যন্ত মাত্র দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
ফিলিপাইনের বিচার বিভাগের তদন্তে দেখা গেছে, আরসিবিসির মাকাতি সিটির জুপিটার শাখার মাধ্যমে এই তহবিল হস্তান্তরের বিষয়টি জানতেন ওই পাঁচ কর্মকর্তা। তারা তহবিল হস্তান্তর ষড়যন্ত্রেও জড়িত ছিলেন। তাদের প্রচেষ্টাতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি সম্ভব হয় বলে জানিয়েছেন দেশটির সরকারি কৌঁসুলি।
অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন- রাউল ভিক্টর ট্যান, ইসমাইল রেয়েস, ব্রিজিত কাপিনা, রোমুয়াল্ডো আগারাদো ও অ্যাঞ্জেলা রুথ টরেস।
ফিলিপাইনের বিচার বিভাগের তদন্তে দেখা যায়, আরসিবিসির মানি লন্ডারিং (অর্থপাচার) কমিটির সদস্য ও ট্রেজারি বিভাগের প্রধান ভিক্টর ট্যান রহস্যময় একটি অ্যাকাউন্টের ওপর লেনদেনের বিধিনিষেধ তুলে নেন। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ হস্তান্তর করার পথ খুলে যায়। এ বিষয়ে তিনি অর্থ পাচার কমিটির কাউকে অবহিত করেননি।
ইসমাইল রেয়েস ছিলেন আরসিবিসির ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার (জাতীয় বিপণন কর্মকর্তা)। তার দায়িত্ব ছিল কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের লেনদেন সম্পর্কে অবহিত করা। তবে তিনি লেনদেনের তথ্য গোপন করেন। কাপিনা ছিলেন আরসিবিসির রিটেইল ব্যাংকিংয়ের সেলস ডিরেক্টর (বিপণন পরিচালক)। তিনিও তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি।
রহস্যময় ডলার অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছিলেন রোমুয়াল্ডো আগারাদো। সিনিয়র কাস্টমার রিলেশন্স অফিসার টরেস ফিলরেম সার্ভিসেস করপোরেশন ও আবা কারেন্সি এক্সচেঞ্জকে এ বিপুল অর্থ তুলে দেন।
মাকাতি সিটির আঞ্চলিক বিচারিক আদালতে মামলাটি করা হয়েছে। গত জানুয়ারিতে মাকাতির একটি আদালত আরসিবিসির ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার মায়া দেগুইতোকে অর্থ পাচারের আট অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। তাকে ১০ কোটি ডলার জরিমানা ও সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এক বিবৃতিতে আরসিবিসি বলেছে, তাদের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হবে বলে তাদের বিশ্বাস। তারা নিরপেক্ষ পক্ষকে দিয়ে তদন্ত চালিয়ে দেখেছেন যে, এসব কর্মকর্তা অর্থ পাচারের বিষয় জানতেন না।
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক নিউইয়র্কে আরসিবিসির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ফিলিপিনো ব্যাংকটি পাল্টা মানহানি মামলা করেছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে।