ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে কয়েক দিন ধরে অসন্তোষ জানিয়ে আসা নেতারা সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রসমাবেশ করে ছাত্রলীগ, সেখানে ওই বিক্ষুব্ধ নেতাদের প্রায় সবাইকে দেখা যায়।
ছাত্রলীগ নেতৃত্বের প্রতি নানা অভিযোগের মধ্যে হঠাৎ করে তাদের সঙ্গে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন কেন, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল বিক্ষুব্ধদের অন্যতম মুখপাত্র হয়ে ওঠা সাঈফ উদ্দিন বাবুর কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, “আপা (শেখ হাসিনা) আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি আমাদের বিষয়টি দেখবেন। তাই আমাদের সবাই আজকে সমাবেশে অংশগ্রহণ করি।”
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়েছিল এক বছর আগে। গত সোমবার ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পরই অসন্তোষ শুরু হয়।
কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন অর্ধশত নেতাকর্মী; যাদের কেউ পদ পাননি, কেউবা কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে ক্ষুব্ধ।
সংবাদ সম্মেলন শুরুর পরপরই সেখানে হামলা চালিয়ে তা পণ্ড করে দেয় আগে থেকেই সেখানে অবস্থান নেওয়া পদ পাওয়া শতাধিক নেতা। হামলায় ছয় নারী নেত্রীসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন।
এরপর কমিটি পুনর্গঠন চেয়ে ‘একযোগে পদত্যাগের’ ঘোষণা দেন বিক্ষুব্ধরা। কমিটিতে স্থান পাওয়া বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন তারা।
তাদের ওই প্রতিক্রিয়ার পর ১৭ জনকে ‘দাগি’ হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানান ছাত্রলীগের শীর্ষনেতারা। এরপর বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নানা অভিযোগবিদ্ধ ৯৭ জনের তালিকা প্রকাশ করে আর কর্মসূচিতে না যাওয়ার ঘোষণা দেন বিক্ষুব্ধরা।
এর একদিন পর শনিবার সংগঠনের কর্মসূচিতেও গেলেন তারা। বিক্ষুব্ধদের মধ্যে বিগত কমিটির প্রচার সম্পাদক সাঈফ বাবু ছাড়াও কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন, সমাজসেবা সম্পাদক রানা হামিদ উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও নবগঠিত কমিটির উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক ডাকসুর সদস্য তিলোত্তমা শিকদার, কুয়েত-মৈত্রী হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও নবগঠিত কমিটির উপ পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক ফরিদা পারভীন, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও নতুন কমিটির উপ-ছাত্রবৃত্তি সম্পাদক শ্রাবনী শায়লা, বিগত কমিটির উপ-স্কুল বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির উপ আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক খাজা খয়ের সুজন, শামসুননাহার হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও নবগঠিত কমিটির উপ সাংস্কৃতিক সম্পাদক নিপু ইসলাম তন্বী দেখা গেছে সমাবেশে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এই কর্মসূচিতে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল শাখা এবং রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ শাখার নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
সমাবেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, “আজকে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, যারা ষড়যন্ত্র করে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায় তাদের প্রতি দৃঢ় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলতে চাই, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শুধু দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড।
“আমরা এক হয়ে তার চলার পথ মসৃণ হওয়ার জন্য কাজ করব। আর কোনো শক্তি ছাত্রলীগের মধ্যে যেন বিভেদ তৈরি করতে না পারে, আপনারা সবাই সজাগ থাকবেন। আপনারা সকল ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবেন।”
ছাত্রলীগে আস্ফালনকারী ও বিশৃঙ্খলাকারীদের জায়গা হবে না বলে সতর্ক করে দেন তিনি।
সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, “বাংলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি এখনও বেঁচে আছেন বলেই আজ দেশের এত সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।”
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম খলিল, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ প্রমুখ।