অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই শাহ নেওয়াজ রিফাত ওরফে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল শের- ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জামিল হোসেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রিফাতের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত শেষে সাংবাদিকদের এতথ্য জানান তিনি।
বরগুনায় প্রকাশ্যে বুধবার সকালে রিফাতকে তার স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
অধ্যাপক ডা. জামিল হোসেনবলেন, নিহত রিফাত শরীফের গলায়, মাথায়, বুকে ও হাতে ৮টি ধারালো অস্ত্রের কোপ ছিল। এগুলোর মধ্যে বুক, মাথা ও গলার আঘাত ছিল গুরুতর।
তিনি আরও বলেন, গলার আঘাতের কারণে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রগ কেটে যাওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে। রক্তক্ষরণের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যা রিফাতকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।
বেলা ১১ টার দিকে নিহত রিফাতের ময়নাতদন্তের জন্য সহকারী অধ্যাপক ডা. জামিল হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. মাইদুল হোসেন ও ডা. সোহেলী আক্তার তন্বী।
বেলা ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত চলে ময়নাতদন্ত কার্যক্রম। ময়নাতদন্ত শেষে রিফাতের মরদেহ নিয়ে বেলা ১ টায় স্বজনরা সড়ক পথে বরগুনার উদ্দেশ্যে রওনা হন।
বুধবার রিফাতের মৃত্যুর পরপরই মরদেহের সুরাতহাল রিপোর্ট করেন বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক সাইদুল ইসলাম।
চিৎকার করেছি, কেউ এগিয়ে আসেনি: মিন্নি
বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মিন্নি। তিনি বলেন, ‘বিয়ের দুই মাস হয়েছে। বিয়ের আগে থেকেই ও (নয়ন) আমাকে ডিস্ট্রাব করত। হুমকি-ধামকি দিত যে- আমার সাথে রিলেশন না করলে বা ছবি না তুললে ঘুরতে না গেলে আমি মেরে ফেলব।’
প্রায়ই নয়ন এ রকম ভয় দেখাতো জানিয়ে রিফাতের স্ত্রী বলেন, ‘নয়ন বলতো- বাসার কাউকে বললে তোমার বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি রিক্সায় উঠলে লাফ দিয়ে রিক্সায় উঠত। কোথাও গেলে ঝামেলা করত।’
তিনি বলেন, ‘বিয়ে হওয়ার পরও নয়ন আমাকে ডিস্ট্রাব করতেই থাকে। আমার স্বামীও জানত। এই নিয়ে ঝামেলা হয়েছে কিনা সেটা আমি জানি না।’
হামলার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মিন্নি বলেন, ‘আমি কলেজে গিয়েছিলাম। কলেজ থেকে ও আর আমি বের হচ্ছিলাম। তখন কিছু ছেলে এস ওকে(স্বামী) মারা শুরু করে। পরে আমি থামানোর চেষ্টা করি কিন্তু পারি না।’
তিনি বলেন, ‘এরপর নয়ন আসে। রিফাত ফরাজি, সিরাজ ফরাজি ওরা এসে কোপানো শুরু করে। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করি। চেষ্টা করেছি; চিৎকার করেছি। একটা লোকও এগিয়ে আসে নাই।’
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে (২২) প্রকাশ্যে তার স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পাশে থাকা অনেকে এ তাণ্ডব দেখলেও কেউ সন্ত্রাসীদের ঠেকানোর চেষ্টা করেনি।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, দুই মাস আগে রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নি নামের ওই তরুণীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই পৌরসভার ক্রোক এলাকার নয়ন বন্ড নামে এক যুবক তাকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে।
ওই যুবক নিজেকে তরুণীর সাবেক স্বামী এবং প্রেমিক হিসেবে পরিচয় দিতে থাকে। এ নিয়ে রিফাতের সঙ্গে নয়নের বচসা হয়। এরই জেরে বুধবারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বলে ধারণা পুলিশের।