শেষ হলো ছুটি। এবার আবারও কর্মমুখর হওয়ার পালা। প্রিয়জনের সান্নিধ্যে মধুময় কয়েকটি দিন পার করে রাজধানীর অস্থায়ী বাসিন্দারা তাই ঢাকামুখো।
কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এবং গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালে বয়ে চলেছে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টানা নয় দিনের ছুটির ফাঁদে পড়েছিল রাজধানী- যার শেষ দিন ছিল শনিবার।
শুক্রবার বিকেলের পর থেকেই মানুষজন ফিরতে শুরু করে রাজধানীতে। তবে তাদের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। শনিবার শেষ ছুটির দিনে অধিকাংশ মানুষই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আবারও ঢাকায় ফিরে এসেছেন। রোববার থেকে আবারও কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে দেশের এই প্রাণকেন্দ্র।
বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শনিবার খুললেও, রোববার থেকে পুরোদমে উন্মুক্ত হবে রাজধানীর সব অফিস-আদালত। ফাঁকা ফুটপাতে বসবে হকার, শুরু হবে যানজট। ঈদের সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার থেকে। অনেকেই এর আগের দিন (সোমবার) ছুটি নিয়ে তার আগের শুক্র, শনি ও রোববারের লাইলাতুল কদরের ছুটিকে যুক্ত করে নয় দিনের টানা ছুটি কাটিয়েছেন এবার।
শনিবার সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে ঢাকামুখী যাত্রীর ভিড়। কমলাপুরে প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে অনেক মানুষ। দুর্ভোগ, ভোগান্তি সহ্য করে ঢাকায় ফিরেছেন তারা।
রংপুর এপপ্রেসের যাত্রী মালিহা ইকবাল বলেন, স্টেশনে ট্রেন দেরিতে আসায় ঢাকায় ফিরতে দেরি হয়েছে তাদের। তবে সব কিছু শেষ করে নিরাপদে পৌঁছাতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন এ তরুণী।
এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক আমিনুল হক জানান, শনিবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬৯টি ট্রেন ঢাকায় ফিরেছে এবং ৬৯টি ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে। এগুলোর প্রতিটিই যাত্রীপূর্ণ। ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার যাত্রীও প্রচুর। কারণ, যারা ঈদে যেতে পারেননি বা যাননি, তারা এখন ধীরেসুস্থে বাড়ি যাচ্ছেন। এসব ট্রেনে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ ঢাকা ফিরবে।
আমিনুল হক জানান, যাত্রী চাপের কারণে ঢাকার উদ্দেশে খুলনা ছেড়ে আসা সুন্দরবন এক্সপ্রেস, রংপুর থেকে আসা রংপুর এক্সপ্রেস ও দিনাজপুর থেকে আসা একতা এক্সপ্রেস গন্তব্যে খানিকটা দেরিতে পৌঁছেছে। কমলাপুর থেকে এগুলো যাতে যতদ্রুত সম্ভব ছেড়ে যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। শনিবার দুপুর ১২টায় তার সঙ্গে কথা বলার সময় ২২টি ট্রেন ঢাকা ছেড়েছে বলে জানান তিনি।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গতকাল ছিল ঢাকাফেরত যাত্রীর উপচেপড়া ভিড়। দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা প্রতিটি লঞ্চের ডেক থেকে কেবিন কোথাও ফাঁকা জায়গা ছিল না।
ঢাকা-মনপুরা-হাতিয়াগামী লঞ্চ এমভি ফারহান-৩ এর ম্যানেজার আব্দুর রহিম বলেন, গত দুই দিনের তুলনায় শনিবার অনেক বেশি যাত্রী ঢাকায় ফিরেছে। অনেক জায়গায় বৃষ্টি হলেও, মানুষ সে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ঢাকায় ফিরছে।
একই লঞ্চে ঢাকায় আসা যাত্রী তানজিমুল ইসলাম বলেন, ভিড়ের কারণে চেষ্টা করেও কেবিন পাননি তিনি। সঙ্গে স্ত্রী-সন্তান থাকায় লঞ্চের ডেকে করে ঢাকা ফিরতে যথেষ্ট দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে বলে জানান তিনি।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেও শনিবার ছিল যাত্রীর ভিড়। শনিবার সুনামগঞ্জ থেকে আসা যাত্রী আমিনুল ইসলাম বলেন, সকাল ৭টার বাস ছেড়েছে ৮টায়। সে সঙ্গে ভাড়াও বাড়তি রেখেছে ১০০ টাকা। এরপরও রাস্তায় বিভিন্ন কাউন্টারে বাসগুলো অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে লোক ভর্তি করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গাবতলী বাস টার্মিনালেও ছিল ঢাকাফেরত যাত্রীর ভিড়। বাসগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ঢাকায় পৌঁছেছে। তবে ঢাকা থেকে যাত্রী যাচ্ছে কম। বাসযাত্রীরা জানান, আসার সময় পথে কোনো যানজট ছিল না। ফেরিঘাটও ছিল অনেকটা ফাঁকা।
কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় ফেরা যাত্রী ইউনুস মোল্লা বলেন, রাস্তায় নানা ভোগান্তি হয়েছে তার। যেমন, ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। তারপরও নিরাপদে ঢাকায় ফিরতে পেরে আনন্দিত তিনি।
গাবতলী বাস টার্মিনালে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার শওকত আলী বলেন, এবারের ঈদে নয় দিন ছুটি ছিল। অনেকে আগেই পরিবার-পরিজনকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এ জন্য ঈদের আগে একসঙ্গে যাত্রীর চাপ পড়েনি।