বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা বাড়াতে চীনের সঙ্গে পাঁচটি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ওই পাঁচটি চুক্তির পাশাপাশি তিনটি সমঝোতা স্মারকে সই এবং একটি লেটার অব এক্সচেঞ্জ বিনিময় হয়।
এর মধ্যে তিনটি চুক্তির আওতায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ১৪০ কোটি ২৯ লাখ ডলার ঋণ পাবে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) অধীনে ২৮ কোটি ৪ লাখ ডলার ব্যয়ে গ্রিড নেটওয়ার্কের উন্নয়নে একটি কাঠামো চুক্তি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে।
এছাড়া অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার অনুদান পাবে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পাঁচ চুক্তি
# ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করতে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট।
# ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করতে গভার্নমেন্ট কনসেশনাল লোন এগ্রিমেন্ট।
# ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করতে প্রেফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট লোন এগ্রিমেন্ট।
# পিজিসিবি প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ গ্রিড নেটওয়ার্ক জোরদার করতে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট।
#বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে অর্থনীতি ও কারিগরি সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি।
এই চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিডিসির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নির্বাহী পরিচালক রমিজ উদ্দিন সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন বলেন, ১৬৫ কোটি ডলার ব্যয়ে ডিপিডিসির একটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ওই ঋণ নেওয়া হচ্ছে।
এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ২৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার এবং চীন সরকার ৩৮ কোটি ১০ লাখ ডলার দেবে। বাকি ১০২ কোটি ডলার চীনের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ হিসাবে পাওয়া যাবে।
পাঁচ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের আওতায়, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ১৪টি ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড সাব স্টেশন নির্মাণ এবং ৪০টি ৩৩/১১ কেভি সাব স্টেশন নির্মাণ করা হবে।
এছাড়া ডিপিডিসির জন্য কিছু উঁচু ভবন নির্মাণ করা হবে, যার মধ্যে হাতিরপুল এলাকায় একটি টুইন টাওয়ার এবং হাতিরঝিলে ২০ তলা একটি ভবন রয়েছে বলে জানান তিনি।
আর পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি চীনের কাছ থেকে পাওয়া ঋণে সঞ্চালন লাইনের সম্প্রসারণসহ ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে পিজিসিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ওই পাঁচ চুক্তি ছাড়াও ইনভেস্টমেন্ট কোঅপারেশন ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা এবং ইয়ালু ঝাংবো ও ব্রহ্মপুত্র নদীর তথ্য বিনিময়ের লক্ষ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে। সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পর্যটন খাতে সহযোগিতার বিষয়ে হয়েছে আরও একটি সমঝোতা স্মারক।
এছাড়া বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য আড়াই হাজার মেট্টিক টন চাল কিনতে একটি লেটার অব একচেঞ্জ বিনিময় হয়েছে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে।
চীন সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১ টার দিকে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে পৌঁছালে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং তাকে স্বাগত জানান। অভ্যর্থনার আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক।
বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হলে চীনের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত ভোজসভাতেও অংশ নেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার মেয়ে বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।
এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।