সৃষ্টিশীল মানুষের কথায় :হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে আছেন; বেঁচে থাকবেন তার সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে। নন্দিত এই কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতার গল্প, উপন্যাস, নাটক ও চলচ্চিত্রের অসংখ্য চরিত্র মানুষের মনে আঁচড় কেটেছে। দশকের পর দশক সে চরিত্রগুলোর আবেদন ম্লান হয়নি। হুমায়ূন আহমেদের অমর এক সৃষ্টি বাকের ভাই। এই বাকের ভাই চরিত্রে অভিনয় করেন অভিনেতা আসাদুজ্জামান নুর। চরিত্রটি নিয়ে কথা বলেছেন জনপ্রিয় এই অভিনেতা।
অভিনয় জীবনে অনেক নাটক করেছি। অনেক চরিত্র দর্শকের মনে গেঁথে আছে। তারপরও কোনো চরিত্র ‘বাকের ভাই’ ছাড়িয়ে যেতে পেরেছে বলে মনে হয় না। হয়তো সে কারণেই এখনও লোকে আমাকে বাকের ভাই বলে ডাকে। শুনলে অবাক হবেন, এই চরিত্রে অভিনয়ের আগে আমাকে বলা হয়েছিল, ‘তোমার তো সফট ফেস। স্ট্ক্রিনে আসো ভালো মানুষের চেহারা নিয়ে। গুণ্ডাপাণ্ডার রোলে তুমি ফেল করবা।’ আমাকে নিয়ে নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ ও প্রযোজক বরকত উল্লাহর এই ছিল ধারণা। যেজন্য আমারও মনে হয়েছিল, নাটকে মুনার প্রেমিক হিসেবে আমি যেভাবে উঠি বসি চলি, সেভাবে করলেই হয়ে যাবে। আমাকে কোনো চেষ্টা বা পরিশ্রম করতে হবে না। কিন্তু বাকের ভাই চরিত্রটি যদি করি, তাহলে ভেবেচিন্তে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। তারপরও শেষমেশ বাকের ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। চরিত্র বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে আলাদা প্রস্তুতি নেওয়ারও পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। নাটক লেখার পর প্রযোজক দেরি করতে চাননি। তখনই শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলেন। যেজন্য চুল বড় করে ঝুটি বেঁধে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা বাদ দিতে হয়েছিল।
চরিত্র যেহেতু একজন লোকাল মাস্তানের তাই চোখ সানগ্লাসে ঢেকে, গলায় চেইন, হাতে ব্রেসলেট পরে চরিত্র বাস্তব করে তোলার চেষ্টা করেছিলাম। ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিকের বেশ কিছু পর্ব অভিনয় করার পরও অনুমান করতে পারিনি- নাটকের বাকের ভাই চরিত্র নিয়ে দর্শকের প্রতিক্রিয়া কেমন। বুঝেছিলাম নাটকের শেষের পর্বগুলোয় গিয়ে। আদালতের রায়ে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। নাটকের গল্প ও চরিত্র সবই কাল্পনিক।
অথচ নাটকে বাকের ভাইয়ের ফাঁসির ঘটনাকে কেন্দ্র করে দর্শকদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। ধারাবাহিকের শেষ পর্ব প্রচারের দিন তো ঢাকার চেহারা যেন কারফিউর মতো রূপ নিয়েছিল। বাকের ভাইয়ের যেন ফাঁসি না হয়- সেজন্য দর্শক বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন। অভিনয় জীবনে এমন অভিজ্ঞতা আর কখনও হয়নি। এমন চরিত্র হুমায়ূন আহমেদের পক্ষেই সৃষ্টি করা সম্ভব। তার কারণেই এখনও আমি দর্শকের মাঝে বাকের ভাই হয়ে বেঁচে আছি।