ভুক্তভোগী নারী আর তাঁর সন্তানকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে ১৯ বছর পর মুক্তি পান ইসলাম। আজ বৃহস্পতিবার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে হাজির হন ধর্ষণ মামলায় দণ্ডিত ইসলাম।
আদালত ভুক্তভোগী নারীর (বাদী) কাছে জানতে চান, তিনি কেমন আছেন?
জবাবে ওই নারী আদালতকে বলেন, তিনি ভালো আছেন। ইসলাম মৃধা তাঁকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছেন। নিয়ে গেছেন তাঁর (ইসলাম) বাড়ি। ঈদের সময় ইসলাম তাঁদের বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি ভালো আছেন।
বাদীর বক্তব্যের পর আদালত দণ্ডিত ইসলামের উদ্দেশ্যে বলেন, উল্টাপাল্টা কিছু হলে ইসলামের জামিন বাতিল হবে। আবার তাঁকে কারাভোগ করতে হবে।
এই কথা শোনার পর ইসলাম আদালতকে বলেন, ‘আর যত দিন বাঁচব তত দিন এই স্ত্রী আর এই সন্তানকে নিয়ে সংসার করব।’
বাদী বলেন, ‘ইসলাম আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছে। আমার সন্তান বাবার স্বীকৃতি পেয়েছে। আমি আনন্দিত। আদালতকেও একই কথা বলেছি।’
ইসলামও বলেন, ‘আমরা এখন একসঙ্গে বসবাস করছি।’
ইসলামের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস বলেন, রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের ওপর শুনানির জন্য আগামী ২৭ অক্টোবর দিন ঠিক করেছেন আপিল বিভাগ। দণ্ডিত ইসলাম কেন খালাস পাবেন তা লিখিত আকারে জবাব চেয়েছেন আদালত।
রুহুল কুদ্দুস জানান, ইসলাম কেন খালাস পাবেন সেই জবাব সাত দিনের তিনি আপিল বিভাগের কাছে জমা দেবেন।
মামলার কাগজপত্র এবং আইনজীবী সূত্র বলছে, ঝিনাইদহের ইসলাম মৃধা ধর্ষণ করেছিলেন তা বিচারিক আদালতে প্রমাণিত হয়। সাজা হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন ইসলাম। হাইকোর্টও ইসলামের আপিল খারিজ হয়। তারপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসেন ইসলাম। শুনানির পর ইসলামের আপিল খারিজ হয়। ১৯ বছর ধরে কারাভোগ করা ইসলাম এরপর রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আপিল বিভাগে রিভিউ করেন।
শুনানিতে ইসলামের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল আদালতকে বলেছিলেন, যাকে ধর্ষণ করার অভিযোগে সাজা হয়েছে, তিনি ইসলামের স্ত্রী। ওই নারীর ১৮ বছর বয়সী যে ছেলে আছে তা ইসলামের সন্তান। ডিএনএ পরীক্ষায় তা প্রমাণিত।
এমন বক্তব্য তুলে ধরার পর আদালত ইসলামের আইনজীবীকে বলেন, যদি দণ্ডিত ইসলাম মামলার বাদীকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দেন, যদি সন্তানকে স্বীকৃতি দেন তবেই ইসলাম জামিন পাবেন। দণ্ডিত ইসলাম বাদীকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি হন। বাদীর সন্তানকেও ছেলের স্বীকৃতি দিতে চান।
উভয় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে যশোর কারাগারে দণ্ডিত ইসলামের সঙ্গে বাদীর বিয়ে সম্পন্ন হয় গত ৩১ জুলাই।
বিয়ের কাবিননামা আদালতে জমা দেওয়ার পর গত ১ আগস্ট ইসলামকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। যশোর কারাগার থেকে ইসলাম ছাড়া পান গত ৮ আগস্ট।
দণ্ডিত ইসলাম আর বাদীর বাড়ি পাশাপাশি।
আপিল বিভাগে জমা দেওয়া ইসলামের রিভিউ আবেদন অনুযায়ী, বাদীর বাবা বিচারিক আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে বলেছিলেন, তাঁর মেয়েকে মৌলভি ডেকে ২০০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেন ইসলাম। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর বাদীকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেননি। এরপর ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন ভুক্তভোগী ওই নারী। ওই মামলায় ২০০৫ সালে ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঝিনাইদহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।