এডিস মশা বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতি মাঠ পর্যায়ে নেওয়ার নির্দেশ মন্ত্রীর

acdes-mosquito_samakal-5d45aa52c47fa

ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশার বংশবিস্তার রোধে পুরুষ এডিসকে বন্ধ্যা করা হবে। এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন সাভারের গণকবাড়ির পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের কীট জীবপ্রযুক্তি বিভাগের বিজ্ঞানীরা।

শনিবার সকালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এ বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতি শিগগিরই মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী শনিবার ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করতে গিয়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পদ্ধতিটির বিভিন্ন কারিগরি দিক সরেজমিন দেখেন। উদ্ভাবিত এ পদ্ধতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিজ্ঞানীদের জন্মই হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধকল্পে তাদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিটি মাঠ পর্যায়ে দ্রুত কার্যকর করা হবে। এ জন্য তাদের সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

এ সময় বিজ্ঞানীরা মন্ত্রীকে জানান, ডেঙ্গু নিরসনে স্টেরাইল ইনসেক্ট টেকনিক (এসআইটি) পদ্ধতির প্রায়োগিক বিষয়ে গবেষণার কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এ পদ্ধতিতে পুরুষ এডিস মশাকে গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে বন্ধ্যা করা হয় এবং তা এ মশার প্রাদুর্ভাব রয়েছে এমন এলাকায় অবমুক্ত করা হয়। এ অবস্থায় প্রকৃতিতে বিদ্যমান স্ত্রী এডিস মশার সঙ্গে এই মশা মিলিত হওয়ার পর এটি যে ডিম কিংবা লার্ভা ছাড়ে, তা থেকে কখনই এডিস মশা বিস্তৃত হয় না। এ কারণে এ মশার সংখ্যা দিন দিন কমতে থাকবে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও পরিবেশবান্ধব। পুরুষ এডিস মশা মানুষকে কামড়ায় না, অন্যদিকে বন্ধ্যা পুরুষ এডিস স্ত্রী এডিসের ডিম বা লার্ভাকে নিষিক্ত করতে পারে না। তাই এসআইটি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। চীন এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সফল হয়েছে।

পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিটিউটের কীট জীবপ্রযুক্তি বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কাজলা শেহেলী জানান, গবেষণায় পুরুষ এডিস মশাকে গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে বন্ধ্যা করে স্ত্রী এডিসের সঙ্গে বংশ বিস্তারের উদ্দেশে সংযুক্ত করা হয়। তখন দেখা যায়, স্ত্রী মশা যে ডিম বা মূক কীট নির্গত করেছে, তা থেকে বংশবিস্তার হচ্ছে না। গবেষণার এ ফল সরেজমিনে জানতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন।

পরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিটিউট অব বায়োটেকনোলজি মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ইয়াফেস ওসমান বলেন, কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে বিষাক্ত মাছি এসে বসায় শুঁটকির গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। সেখানে শুঁটকি মাছের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছিল। তখন এখানকার বিজ্ঞানীরা এই একই পদ্ধতিতে পুরুষ মাছিকে বন্ধ্যা করে মাছির বংশবিস্তার ঠেকানো হয়। গবেষণার এই পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বিজ্ঞানীরা মশা নিয়েও গবেষণা শুরু করেন। তাদের গবেষণা সফল হয়েছে।

বিজ্ঞানমন্ত্রী বলেন, এটা পাইলট প্রকল্প- মাঠ পর্যায়ে এটি কার্যকর করা হলে এডিসের বংশ বিস্তার রোধ হবে এবং ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব আস্তে আস্তে কমে আসবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক, সদস্য অধ্যাপক ডা. সানোয়ার হোসেন, পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ড. এম আজিজুল হক, এনআইবির মহাপরিচালক ড. সলিমুল্লাহ, ইনস্টিটিটিউটের একাধিক পরিচালক, বিভিন্ন স্তরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, প্রকৌশলী ও বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা।

Pin It