ঈদযাত্রায় সড়কপথে যানজটে ভোগান্তি, সূচি মানছে না ট্রেনও

image-78662-1565253940

আনন্দের ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ লেগেই আছে। প্রতিবারের মতো এবারও সড়কপথে ভিড়, যানজটের ভোগান্তি। সময়সূচি মেনে চলছে না ট্রেনও। টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় এ দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। এ অবস্থায়ও বৃহস্পতিবার ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে রেলস্টেশন ও বাস টার্মিনালে।

নিম্নচাপের প্রভাবে বুধবার রাত থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে ঢাকায়। রাজধানীর অনেক সড়ক তলিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবসে অনেকে অফিসে হাজিরা দিয়েই ছোটেন রেল ও বাস টার্মিনালে। তবে বৃষ্টির কারণে তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেকেই সময়মতো স্টেশনে পৌঁছাতে পারেননি। ট্রেনের মতো বাসের সময়সূচিতেও বিপর্যয় ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে গিয়ে দেখা যায়, সড়কে হাঁটুপানি। পানিতে তলিয়ে থাকা সড়কে গাড়ির সারি। একই অবস্থা ছিল তেজগাঁওয়ে। মহাখালী টার্মিনালে ঈদযাত্রার বাস ও যাত্রীদের চাপে তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে বনানী পর্যন্ত দিনভর ছিল তীব্র যানজট।

শ্যামলীর কলেজ রোডে শ্যামলী এসআর পরিবহনের কাউন্টারে কথা হয় যাত্রী আয়তুল্লাহ খোমেনীর সঙ্গে। তিনি জানান, দুপুর ২টায় বাস ছাড়ার কথা ছিল। কাউন্টারে এসে জানতে পারেন, ৪টায় ছাড়বে। নির্ধারিত সময়ে কাউন্টারে আসতে তাকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

খোমনী জানান, হাজারীবাগের মনেশ্বর রোড থেকে ৪০০ টাকায় অটোরিকশা ভাড়া করে শ্যামলী এসেছেন। জিগাতলা ও ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে হাঁটুপানি। কোনো অটোরিকশা আসতে রাজি হয় না। পানির কারণে, উবারের কোনো গাড়িও জিগাতলা থেকে নিতে রাজি হয়নি। হাজারীবাগ থেকে শ্যামলী যেতে দুই ঘণ্টা লেগেছে।

অভিন্ন চিত্র কমলাপুর স্টেশনে। বৃষ্টির পানি মাথায় নিয়ে কমলাপুরে পৌঁছান যাত্রীরা। তবে পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ ট্রেন দেরিতে ছাড়ে। সকাল ৯টার ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায় সাড়ে তিন ঘণ্টা দেরিতে দুপুর সাড়ে ১২টায়। সকাল ৬টার রাজশাহীগামী ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ সোয়া তিন ঘণ্টা দেরিতে সকাল সোয়া ৯টায় ছাড়ে। পঞ্চগড়গামী ‘একতা এক্সপ্রেস’ প্রায় তিন ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে। ১০টার এই ট্রেনটি দুপুর ১টায় কমলাপুর ছাড়ে। ৬টা ২০ মিনিটের খুলনাগামী ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ দুই ঘণ্টা দেরিতে এবং চিলাহাটিগামী ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’ও দেরিতে ছাড়ে। পশ্চিমাঞ্চলের ১৮টি ট্রেনের প্রায় সবক’টি এক ঘণ্টা থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে ছাড়ে।

কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার আমিনুল হক বলেছেন, যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ। প্রতিটি স্টেশনে পাঁচ থেকে সাত মিনিট বেশি সময় লাগছে যাত্রী ওঠা-নামায়। এ কারণে ট্রেন দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে। ঢাকায় ফিরতে দেরি করছে। তিনি জানান, যাত্রী না কমা পর্যন্ত সিডিউল মেনে ট্রেন চালানো প্রায় অসম্ভব।

কমলাপুর স্টেশনে দুপুর ১২টার দিকে কথা হয় ‘রংপুর এক্সপ্রেসে’র যাত্রী আসাদুজ্জামান মিলনের সঙ্গে। তিনি জানান, ৯টায় ট্রেন। তাই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সকাল ৭টায় বাসা থেকে বের হয়েছেন। বৃষ্টিতে আধভেজা হয়ে স্টেশনে আসেন সাড়ে ৮টায়। এরপর সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে বসে রয়েছেন। ওয়েটিং রুমে বসার চেষ্টা করেছিলেন, সেখানে ভিড়ের কারণে জায়গা পাননি। প্রথমশ্রেণির টিকিটের যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত ওয়েটিং রুমেও ভিড়। সেখানে টয়লেটের সংখ্যা অপ্রতুল। বিশেষ করে নারীদের জন্য টয়লেট সুবিধা নেই বললেই চলে। খুব দুর্ভোগে রয়েছেন। তার দাবি, রংপুর এক্সপ্রেস শুধু ঈদের নয়, সাধারণ সময়েও দেরি করে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবারের ঈদযাত্রায় স্টেশন থেকে ছাড়ার আগে ট্রেনে মশা মারার ওষুধ দেওয়ার ঘোষণা ছিল। তবে বাস্তবে তা দেখা যায়নি। স্টেশন ম্যানেজাররা জানান, যাত্রীদের চাপের কারণেই ওষুধ দেওয়া যাচ্ছে না। ট্রেন দেরিতে ফেরায় পরিস্কার করার সময়ও পাওয়া যাচ্ছে না।

একই চিত্র বাসে। হানিফ পরিবহনের কমলাপুর কাউন্টার ব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন জানান, প্রতিটি বাস ঢাকায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রী পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আধাঘণ্টা বিরতি দিয়ে আবার চালাতে হচ্ছে। এ কারণে মশার ওষুধ দেওয়া যাচ্ছে না।

Pin It