পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক করতে মরিয়া সরকার। মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ দিনে দিনে খালাস করার উদ্যোগ নিতে শুল্ক্ক কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে নির্দেশ। পেঁয়াজের বাজার নিয়ে কেউ কারসাজি করছে কি-না সে ব্যাপারেও তথ্য সংগ্রহ করছেন গোয়েন্দারা। চট্টগ্রামের পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জে গতকাল বুধবারও আসেনি মিয়ানমারের কোনো পেঁয়াজ। অথচ গতকালও একদিনে প্রায় ১৮০ টন পেঁয়াজ এসেছে টেকনাফে। মঙ্গলবার একই রুট দিয়ে পেঁয়াজ আসে ১৩৩ টন। সব মিলিয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে গত চারদিনে এসেছে ৫০০ টন পেঁয়াজ। কিন্তু পাইকারি মোকামে সরবরাহ হয়েছে মাত্র ১৮০ টন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেকনাফ স্থলবন্দরে এখন যে পরিমাণ পেঁয়াজ আছে, তার ৭০ শতাংশের মালিক মাত্র তিন ব্যবসায়ী।
টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্টের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আসা পেঁয়াজ দিনে দিনে খালাস করে তা বাজারে সরবরাহ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তারপরও কেন পাইকারি মোকামে পেঁয়াজ যাচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়। তবে এসব পেঁয়াজ চট্টগ্রামের পাইকারি মোকামে গেলে তা বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত।’
টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করা শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী এমএইচ ট্রেডিংয়ের মো. হাশেম বলেন, ‘বুধবার একদিনেই প্রায় ১৮০ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছি আমি। প্রতিটন পেঁয়াজ আনতে খরচ পড়েছে প্রায় ৪৬০ ডলার। ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর খবর পেয়ে মিয়ানমারেও প্রতিটন পেঁয়াজ প্রায় ১০ ডলার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।’
পাইপলাইনে আরও ২০০ টন পেঁয়াজ আছে বলে জানান তিনি। দু-একদিনের মধ্যে এগুলোও এসে পৌঁছানোর কথা। আমদানির প্রথম চালানটি চট্টগ্রামে না দিয়ে তিনি ঢাকার পার্টির কাছে বিক্রি করেছেন।
এমএইচ ট্রেডিং ছাড়াও টেকনাফ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা অপর দুটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মো. শওকত আলীর জিন্নাত ব্রাদার্স ও যদু চন্দ্র দাশের এশিয়া এন্টারপ্রাইজ। গত তিন দিনে যেসব পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে তার বেশিরভাগের মালিক তারাই।
শুল্ক্ক বিভাগ জানায়, মিয়ানমার থেকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে বড় আকারের চালানে নতুন করে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়। ওইদিন বন্দরে ১৭৮ টন পেঁয়াজ আসে। ১৭ সেপ্টেম্বর আসে ১৩৩ টন পেঁয়াজ। আর গতকাল আসে ১৮০ টন পেঁয়াজ।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রবি ও সোমবার খাতুনগঞ্জে ১৫ ট্রাকে করে ১৮০ টন পেঁয়াজ এলেও মঙ্গলবার কোনো পেঁয়াজ আসেনি এ পাইকারি মোকামে। গতকাল বুধবারও কোনো পেঁয়াজ আসেনি খাতুনগঞ্জে। এ জন্য দামও আছে অপরিবর্তিত। মঙ্গলবারের মতো বুধবারও নাসিক পুরনো ও সাউথ নতুন পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ রবি ও সোমবার একই পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। পর্যাপ্ত আমদানির পরও গত দু’দিন মিয়ানমারের কোনো পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে না আসার প্রভাবেই কমছে না দাম।
খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের পাইকারি মোকাম হচ্ছে হামিদ উল্লাহ মিয়া মার্কেটে। এ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস মিয়া বলেন, রবি ও সোমবার মিয়ানমার থেকে কিছু চালান খাতুনগঞ্জে আসে। এতে দামে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। কিন্তু মঙ্গল ও বুধবার টানা দু’দিন আবার মিয়ানমারের কোনো পেঁয়াজ আসেনি খাতুনগঞ্জে। এ কারণে দাম যেটি কমেছিল সেটি আবার বেড়ে গেছে। স্থলবন্দরে পর্যাপ্ত পণ্য থাকার পরও কেন তা সরবরাহ হচ্ছে না তা আমার জানা নেই।
জানা গেছে, দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা থাকে ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে ১০ থেকে ১২ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। এসব পেঁয়াজের বেশিরভাগ ভারত থেকে আসায় সেখানকার দর ওঠা-নামার প্রভাব ব্যাপক হারে পড়ে দেশে। এমনকি টেলিফোনে দরবৃদ্ধির খবর পেয়ে দেশের বাজারে কিছু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন বলেও অভিযোগ আছে। অস্থির এ বাজার স্বাভাবিক করতেই পেঁয়াজ আনা হচ্ছে মিয়ানমার থেকে।