আদালতে স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচনে ভোটাভুটিতে গেছে ছাত্রদল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায় বুধবার সন্ধ্যায় প্রক্রিয়া শুরু হয়।
গোপন কক্ষে ব্যালটের মাধ্যমে কাউন্সিলররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। এজন্য পাঁচটি বুথ প্রস্তুত করা হয়েছে। লন্ডন থেকে স্কাইপে ভোটগ্রহণ তত্ত্বাবধান করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এজন্য একটি প্রজেক্টর বসানো হয়েছে। রাত সাড়ে ৯টায় ছাত্রদল নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন বলেন, নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচনের কাজটি শুরু করেছি। ভোট শুরু হয়ে গেছে। টানা ভোট হবে, কোনো বিরতি নেই। ভোটের পর দ্রুতই গণনার কাজ শুরু করে ফলাফলও ঘোষণা করব।
ছাত্রদলের সভাপতি পদে নয়জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১৯ জন প্রার্থী। ৫৩৪ জন কাউন্সিলরের ভোটে ছাত্রদলের নতুন নেতা নির্বাচিত হবেন। তবে কাউন্সিলে অংশ নিতে আসা কাউন্সিলরসহ গত দু’দিনে ৪০ জনের বেশি ছাত্রদল নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ছাত্রদলের কাউন্সিলকে বাধাগ্রস্ত করতে সরকার নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বুধবার ও আগের দিন মঙ্গলবার- কমপক্ষে ৪০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে অধিকাংশই কাউন্সিলর। আসলে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না বলেই সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করছে।
এবারের সভাপতি পদের প্রার্থীরা হলেন- কাজী রওনুকুল ইসলাম শ্রাবণ, ফজলুর রহমান খোকন, হাফিজুর রহমান, মামুন বিল্লাহ (মামুন খান), সাজিদ হাসান বাবু, মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, রিয়াদ মো. তানভীর রেজা রুবেল, এরশাদ খান, মাহমুদুল আলম সরদার।
সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীরা হলেন- শাহনেওয়াজ, জুয়েল হাওলাদার, আমিনুর রহমান আমিন, জাকিরুল ইসলাম জাকির, তানজিল হাসান, কারিমুল হাই নাঈম, মাজেদুল ইসলাম রুমন, ডালিয়া রহমান, শেখ আবু তাহের, সাদিকুর রহমান, কেএম সাখাওয়াত হোসাইন, সিরাজুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন শ্যামল, মুন্সি আনিসুর রহমান, মিজানুর রহমান শরীফ, শেখ মো. মসিউর রহমান রনি, মোস্তাফিজুর রহমান, সোহেল রানা ও কাজী মাজহারুল ইসলাম।
মঙ্গলবার তারেক রহমানের নির্দেশে সারাদেশের কাউন্সিলর ও প্রার্থীদের নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়। সে অনুযায়ী বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমবেত হন প্রার্থী ও কাউন্সিলররা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের সঙ্গে আসা কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক নয়াপল্টনের অফিসের সামনে দুপুর থেকে অবস্থান নিতে শুরু করে। এতে বিকেলে অফিসের সামনে সমাবেশে পরিণত হয়। এর মধ্যে সন্ধ্যায় খবর আসে তারেক রহমান সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, মির্জা আব্বাসের বাসায় কাউন্সিল হবে, সেখানে সবাইকে যাওয়ার জন্য বলা হয়। নির্দেশ পাওয়ার পর কাউন্সিলর ও প্রার্থীরা মির্জা আব্বাসের শাজাহানপুরের বাসায় ছুটে যান। পরিচয়পত্র দেখে দেখে কাউন্সিলরদের বাসার ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়।
রাত পৌনে ৯টায় জানতে চাইলে কাউন্সিলর ও বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজুল আলম জানান, ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাত পৌনে ৯টায় দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। তার বক্তব্যের পরই ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা। জানা গেছে, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু মির্জা আব্বাসের বাসায় গেছেন।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার চতুর্থ জজ আদালত সাবেক কমিটির সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমান উল্লাহর দায়ের করা মামলায় ১৪ সেপ্টেম্বরের নির্ধারিত কাউন্সিলের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১০ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা মেনে ছাত্রদলের কাউন্সিল প্রক্রিয়া থেকে আমরা সরে দাঁড়িয়েছি। কাউন্সিলর ও ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির কেন্দ্রীয় নেতারা কাউন্সিলে দায়িত্ব পালন করছেন।