মাছ ও মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও মাথাপিছু পুষ্টির চাহিদা মেটানোর মত দুধ উৎপাদনে এখনও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
সরকারি হিসাবে দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিন একজন মানুষের দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধের প্রয়োজন থাকলেও উৎপাদন হচ্ছে ১৬৫ মিলিলিটার।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ‘সফলতা’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়।
সেখানে বলা হয়, দুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ ‘কিছুটা পিছিয়ে’ আছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান রি-ফাইন্যান্সিং স্কিম এবং বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি খাতের উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, মাথাপিছু পুষ্টির চাহিদা মেটানোর মত দুধ উৎপাদনে এখনও পিছিয়ে থাকলেও গত এক দশকে বাংলাদেশ দুধ উৎপাদন ৩ দশমিক ২ গুণ বেড়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমাদের দুধের উৎপাদন কম হওয়ার একটা কারণ হল চাহিদা কম। দেশের মানুষ আমিষের চাহিদা মেটাতে যেভাবে মাছ ও মাংস খায়, সে পরিমাণ দুধ খায় না। আমাদের ২০ শতাংশ মানুষই দুধ খায় না।”
“তাছাড়া বিদেশি গুঁড়ো দুধের কারণে দেশি দুধের চাহিদা কম। খামারিরা দাম কম পায়। অনেক সময় এ কারণে খামারিরা উৎসাহ কম পায়। বিদেশি গুঁড়ো দুধ যদি আস্তে আস্তে বাজারে কমিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে দেশি দুধের উৎপাদন বাড়বে।”
তিনি যুক্তি দেন, ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ায় যেহেতু কোনো অসুবিধা হয়নি, বিদেশি গুঁড়ো দুধ বাজারে না থাকলেও কোনো অসুবিধা হবে না।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে মোট চাহিদার ৬৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ দুধ উৎপাদন হয়েছে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের চেয়ারম্যান কেবিএম সাইফুল মনে করেন, দেশে পোল্ট্রি শিল্পের বাণিজ্যিকীকরণ যেভাবে হয়েছে, ডেইরি শিল্পে তেমনটা হয়নি কয়েকটি প্রতিবন্ধকতার কারণে।
“পুঁজি বেশি লাগে বলে এই খাতে বিনিয়োগকারী কম। প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ কম। আমাদের আবহাওয়া, জলবায়ু উপযোগী জাতের অভাব আছে। এবং এ খাতে প্রণোদনা কম। এসব কারণে দুধ উৎপাদনে আমরা এখনও পিছিয়ে আছি।”
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, একজন মানুষের দৈনিক ১২০ গ্রাম মাংসের প্রয়োজন। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ১২৫ গ্রাম।
গত কোরবানির ঈদে শতভাগ চাহিদা পূরণ হয়েছে দেশি গবাদিপশু দিয়ে। চাহিদা মিটিয়েও প্রায় ১০ লাখ গবাদিপশু অতিরিক্ত ছিল।
প্রতিদেনে বলা হয়েছে, একজন মানুষের জন্য বছরে ১০৪টি ডিমের প্রয়োজন, এর বিপরীতে এখন উৎপাদন হচ্ছে ১০৩টি।
২০২১ সাল নাগাদ ডিম উৎপাদনেও বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বলে আশা করছে অধিদপ্তর।
মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে বলে গত বছরই ঘোষণা দেয় মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
১৯৯০ সালে দেশে ১ লাখ ৯৩ হাজার টন মিঠা পানির মাছ উৎপাদন হয়। ২০০০ সালে তা বেড়ে হয় ৬ লাখ ৫৭ হাজার টন।
২০১৭ সালে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হয় ৪১ দশমিক ৩৪ লাখ মেট্রিক টন।