‘চাকরি ছাড়া সংসার চালানোর মতো আমার আর কিছু নেই। কিন্তু আমার পা তো শেষ, এখন আমি কীভাবে অফিস করব ?’
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে কাছে পেয়ে এভাবেই নিজের কষ্টের কথা জানালেন বাসের চাকায় পা হারানো বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় চৌধুরী।
তিনি তাকে বলেন, ‘আমরা অসহায়। স্যার, আপনারা ছাড়া কেউ নেই। আপনারা পাশে না থাকলে শেষ হয়ে যাব।’ তখন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী তাকে অভয় দিয়ে বলেন, ‘আমরা সব সময়ে আপনার পাশে আছি, আপনার পাশে থাকব। চিকিৎসার জন্য যা দরকার সব করা হবে।’
শনিবার সকালে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) কৃষ্ণা রায়কে দেখতে যান নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ওই সময় তার সঙ্গে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন। প্রতিমন্ত্রী হাসপাতালের কেবিনে উপস্থিত কৃষ্ণা রায়ের স্বজনদের পাশে থাকারও আশ্বাস দেন।
৫৫ বছর বয়সী কৃষ্ণা রায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনে (বিআইডব্লিউটিসি) অর্থ বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক। গত মঙ্গলবার তিনি বাংলামটরে অফিস থেকে বের হয়ে উল্টো পাশের সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই সময় ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্টের এক চালক তার ওপর বাস উঠিয়ে দেয়। এতে চাকায় পিষ্ট হয়ে তার বাঁ পা থেঁতলে যায়। পরে পঙ্গু হাসপাতালে হাঁটু থেকে নিচ পর্যন্ত পায়ের ওই অংশটুকু কেটে ফেলেন চিকিৎসকরা। তিনি ওই হাসপাতালের ২১৯ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
কৃষ্ণা রায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে তার কাছে ওই দিনের মর্মান্তিক ঘটনার কিছুটা বিবরণ দেন। তিনি বলেন, ‘আমি ফুটপাতে দাঁড়িয়েছিলাম। সেটি তো হাঁটার নিরাপদ জায়গা। এরপরও বাসটি সেখানে উঠিয়ে দেওয়া হলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার পা চাকার নিচে চলে গেল। সেই চাকা দিয়েই পিষ্ট করে দিল।’
নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বামী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, এখন টিউশনি করেন। ছেলে-মেয়ে দু’জন পড়ালেখা করে। আমার চাকরি না থাকলে সংসার চলবে না। প্রধানমন্ত্রী তো ১৬ কোটি মানুষের হাসি-কান্নার সাথী। তিনিই পারেন সহায়তা করতে। তিনি সহায়তার হাত বাড়ালে বেঁচে যাব। আপনারা পাশে না থাকলে সব শেষ হয়ে যাবে।’
কৃষ্ণা রায়ের স্বামী রাধে শ্যাম চৌধুরী জানান, কৃষ্ণা রায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা। ওই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী তার স্ত্রীকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন। আন্তরিকভাবে কথা বলেছেন, সবকিছুর খোঁজ নিয়েছেন। এতে তারা স্বস্তি পেয়েছেন, তার পা হারানো স্ত্রীও সাহস পেয়েছেন।
কৃষ্ণা রায় পঙ্গু হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রবের অধীনে চিকিৎসাধীন। শনিবার ওই চিকিৎসক বলেন, শনিবার কৃষ্ণা রায়ের পায়ের ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করা হয়েছে। তার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে, এখনও পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না।
তিনি বলেন, কৃষ্ণা রায়ের বাঁ পায়ের হাড়েও ক্ষত রয়েছে। আজ রোববার তার বড় ধরনের একটি অস্ত্রোপচার করা হবে। এরপর তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে ওই দুর্ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় অভিযুক্ত ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্টের বাসের মালিক, চালক বা হেলপারের কাউকেই শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশ জানিয়েছে, আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক খায়রুল আলম জানান, ঘটনার পরপরই আসামিরা আত্মগোপনে চলে গেছে। এজন্য তাদের গ্রেফতারে সময় লাগছে। থানা পুলিশ ছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আরও কয়েকটি সংস্থা আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে। হয়তো শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।