দুবাইয়ে যেভাবে গ্রেফতার হলো শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান

zisan-5d975b21cd42e

বাংলাদেশ পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পালিয়ে আছে- এমন খবর অনেক বছর ধরেই শোনা যাচ্ছিল। এর মধ্যে কয়েক মাস আগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কর্মকর্তারা তাকে আইনের আওতায় আনতে নতুন করে তৎপরতা শুরু করেন।

মাস দুয়েক আগে দুবাইয়ের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) তার অবস্থান শনাক্ত করে বাংলাদেশকে জানায়। তখন থেকেই সেখানে তাকে নজরদারিতে রাখা হয়। তবে দুবাইয়ে সে আলী আকবর চৌধুরী নামে পরিচিত ছিল। পাসপোর্টও ছিল সেই নামে। এনসিবি ঢাকা ও দুবাই তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চালায় নজরদারিতে থাকা ব্যক্তিই সন্ত্রাসী জিসান কি-না। সব তথ্য ঠিকঠাক মিলে যাওয়ার পর বুধবার রাতে তাকে গ্রেফতার করে সেখানকার পুলিশ। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পুলিশ তার গ্রেফতারের বিষয়ে নিশ্চিত হয়।

২০০৩ সালের ১৪ মে ঢাকার মালিবাগের একটি হোটেলে ডিবির দুই কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যাসহ অসংখ্য হত্যা-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত জিসান। ২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় ছিল তার নাম। প্রায় ১৬ বছর ধরে পলাতক এই সন্ত্রাসীর নামে ইন্টারপোলে রেড নোটিশও জারি ছিল। সেখানে তার বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক বহনের অভিযোগের কথা উল্লেখ ছিল। দীর্ঘদিনের চেষ্টায় গ্রেফতারের পর এখন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এনসিবি) মহিউল ইসলাম বলেন, দেশটির সঙ্গে বহিঃসমর্পণ চুক্তি না থাকলেও জিসানকে ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে না। তবে এ জন্য কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আইনি চুক্তি করতে হবে। তাছাড়া দুবাই থেকে কিছু তথ্য যাচাই করতে বলা হয়েছে। নতুন করে কিছু বিষয়ও তারা জানতে চেয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এসব প্রক্রিয়া শেষ করার চেষ্টা চালাবে পুলিশ।

সংশ্নিষ্টরা জানান, রাজধানীর মতিঝিল, মালিবাগ, বাড্ডা, গুলশান, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় একসময় ত্রাস হিসেবে পরিচিত ছিল জিসান ওরফে মন্টি। দুই ডিবি কর্মকর্তা হত্যার পর সে প্রথমে ভারতে পালিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে দুবাই চলে যায় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। সেখানে বসেই সে ঢাকার অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। তার নামে চাঁদাবাজি করে আসছিল সহযোগীরা। মাঝেমধ্যেই বিদেশের ফোন নম্বর থেকে কল করে জিসান পরিচয়ে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছে চাঁদা দাবি করা হতো। আর চাঁদা না পেলে গুলি করা বা ককটেল হামলার ঘটনাও অনেকবার ঘটেছে। সম্প্রতি ক্যাসিনোকাণ্ডে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁঁইয়া ও ঠিকাদার জি কে শামীম গ্রেফতার হওয়ার পর নতুন করে আলোচনায় আসে জিসান। ওই দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদে জিসানের দুবাইয়ে অবস্থানের ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বলেন, পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখার উদ্যোগে ও এনসিবি দুবাইয়ের সহযোগিতায় শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এনসিবি দুবাই বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করে। তাকে সেখানে বিচারিক হেফাজতে রাখা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, জিসান ও তার ভাই দুবাইয়ে অবস্থান করে নানারকম অপকর্ম চালিয়ে আসছে বলে তথ্য ছিল ডিবির কাছে। দুই মাস আগে ডিবির মাধ্যমে পাওয়া জিসানের সাম্প্রতিক ছবি, হালনাগাদ তথ্য ও কয়েকটি ফোন নম্বর দুবাই এনসিবি কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়। সম্প্রতি তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতারের তথ্যও তাদের জানানো হয়। সেগুলো যাচাই করে তারা জিসানকে নজরদারিতে রেখে জানায়, নাম মিলছে না এবং তার পাসপোর্টও বাংলাদেশের নয়। পরে দেখা যায়, জিসান ভিন্ন নামে ‘ভারতের পাসপোর্ট’ ব্যবহার করে সেখানে অবস্থান করছে। এই পাসপোর্টের ব্যাপারে তথ্য অনুসন্ধানের মধ্যেই দুবাই জানায়, তার পাসপোর্টটি ডমিনিকান রিপাবলিকের। দেশটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা নিশ্চিত করে, এমন কোনো পাসপোর্ট তারা ইস্যু করেনি। এসব তথ্য দুবাই এনসিবিকে জানানো হয়। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ইন্টারপোলের রেড নোটিশটিও হালনাগাদ করা হয়। যুক্ত করা হয় নতুন করে পাওয়া তথ্য। শেষে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, দুবাই এনসিবির সব শর্ত পূরণের পর তারা জিসানকে ফেরত দেবে। এ ক্ষেত্রে তারা জিসানকে বাংলাদেশগামী বিমানে তুলে দেবে। ঢাকায় নামার পরপরই তাকে গ্রেফতার করবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রাথমিকভাবে এমন আলোচনা হয়েছে। তবে প্রয়োজনে বাংলাদেশের পুলিশ গিয়ে দুবাই থেকেও তাকে নিয়ে আসতে পারে।

Pin It