জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও হল না ছাড়ার কথা বলেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার রাতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করে যাচ্ছেন। অপরদিকে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এর আগে দুপুরে জরুরি সিন্ডিকেট ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। এরপর বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে প্রায় তিনশতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
এদিকে কিছু শিক্ষার্থী হল ছাড়লেও অনেকেই রয়েছেন সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে। বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা থাকায় অনেকেই ক্ষিপ্ত এ সিদ্ধান্তের প্রতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৪৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মুস্তায়িন বিল্লাহ বলেন, হুট করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দিলে আমরা কোথায় যাবো? সামনে বিসিএসের লিখিত পরীক্ষাসহ একাধিক চাকরির পরীক্ষা রয়েছে। তারা এখন কি করবে। প্রশাসনের কাছ থেকে এ ধরনের দায়িত্বহীন আচরণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের কাম্য নয়।
মঙ্গলবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়ে আন্দোলনকারীদের উপাচার্যের বাসার সামনে থেকে হটিয়ে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে দীর্ঘ ১০ দিন পর অফিসে প্রবেশ করেন উপাচার্য। তাকে আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে ‘মুক্ত’ করায় ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ দেন উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে সাংবাদিকদের উপাচার্য বলেন, আমার সহকর্মীসহ ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞ। কারণ তারা দায়িত্ব নিয়ে এ কাজটি করেছে। এখন সুষ্ঠুভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য সবাই আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন। জানা যায়, জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে প্রায় দুই মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দুর্নীতির দায়ে তাকে পদত্যাগের আল্টিমেটামের পরও তিনি পদত্যাগ না করলে আন্দোলন জোরদার হয়। এর মধ্যেই শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানালে আন্দোলনকারীরা তা নাকচ করে আন্দোলন চালিয়ে যায়।
সোমবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে তার বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। এরপর মঙ্গলবার সকাল ১২টার দিকে উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা উপাচার্যকে বাসা থেকে বের করতে গেলে ব্যর্থ হয়। এরপরেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিবির মুক্ত করতে মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করে।
হামলায় আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ২০জনকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।
আন্দোলনকারীদের উপর হামলার বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষক পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খবির উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এরকম ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের উপস্থিতি ও প্রত্যক্ষ উস্কানিতে ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ছাত্রলীগ যখন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে তখন ভিসিপন্থী শিক্ষকরা তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে হাততালি দিয়েছে।’
হামলার বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘আমরা শিবিরমুক্ত ক্যাম্পাস চাই। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল।’