বোলিংটা আগের দিনের মতো ক্ষুরধার হয়নি। মেহেদি হাসান হয়তো ভাবলেন, ব্যাটিং তো অন্তত একইরকম হওয়া চাই! বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে এই অলরাউন্ডার উপহার দিলেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি। নির্ভরতার প্রতীক হয়ে তামিম ইকবাল ফিরলেন দলকে জিতিয়ে। দুজনের ব্যাটিংয়ে ঢাকা ছাপিয়ে গেল জনসন চার্লসের ছক্কার মালায় সাজানো চ্যালেঞ্জ।
বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের শেষ দিনে সিলেট থান্ডারকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে ঢাকা প্লাটুন। ৬ ম্যাচে ঢাকার এটি চতুর্থ জয়, সমান ম্যাচে সিলেটের পঞ্চম হার।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার টস জিতে সিলেট ২০ ওভারে করতে পারে ৪ উইকেটে ১৭৪ রান। ঢাকা জিতে যায় ৯ বল বাকি রেখে।
সিলেটের লড়িয়ে পুঁজির মেরুদণ্ড ছিল চার্লসের ইনিংস। ৪ রানে জীবন পেয়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান ৮ ছক্কায় করেন ৪৫ বলে ৭৩ রান। ঢাকার হয়ে অমন তাণ্ডব ছিল না কারও ব্যাটে। তবে সম্মিলিত পারফরম্যান্সে তারা জিতে যায় অনায়াসেই।
৪৯ বলে ৬০ রানে অপরাজিত থেকে যান তামিম। আগের দিন ২৯ বলে ৫৯ রানের ইনিংসের পর এবার মেহেদি করেন ২৮ বলে ৫৬।
প্রথম ব্যাটসমান হিসেবে বিপিএলে ২ হাজার রান স্পর্শ করার পথে তামিম ইকবালের শট। তার ও মেহেদি হাসানের ফিফটিতে সহজেই সিলেট থান্ডারকে ৮ উইকেটে হারায় ঢাকা প্লাটুন। ছবি: সুমন বাবু
ম্যাচের শুরুটা ছিল নাটকীয়। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান আন্দ্রে ফ্লেচার এবার দেখেন মুদ্রার উল্টো পিঠ। ম্যাচের প্রথম বলেই আউট! মেহেদি হাসানের লেগ-মিডলে থাকা বল ক্রস ব্যাটে খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন বোলারের হাতেই।একই ওভারে জনসনের উইকেটও পেতে পারতেন মেহেদি। মিড উইকেট সীমানায় সহজ ক্যাচ ছাড়েন আসিফ। সেটির চড়া মূল্য দিতে হয় ঢাকাকে।
জীবন পাওয়ার পর অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটেছেন জনসন। বল সীমানা পেরিয়েছে প্রায় প্রতি ওভারেই। হাসান মাহমুদকে চার-ছক্কা, মেহেদির ওভারে চার-ছক্কা, শাদাব-আফ্রিদি-ওয়াহাব রিয়াজ, পার পাননি কোনো বোলার।
দলের রান যখন ৬০, জনসনের রানই তাতে ৩২ বলে ৫০! ফিফটির পর আফ্রিদিকে দুই ছক্কা হাঁকান তিন বলের মধ্যে।
আরেক পাশে আব্দুল মজিদ আউট হয়ে যান ১০ বলে ৮ করে। মোহাম্মদ মিঠুন নামার পর রান আসে দুই পাশ থেকেই।
ছক্কার নেশাতেই শেষ পর্যন্ত জনসন আউট হন শাদাবের বলে। মোসাদ্দেক হোসেনও ছক্কার চেষ্টায় ধরা পড়েন সীমানায়। তবে জোড়া ধাক্কায় থমকে যায়নি সিলেট। মিঠুন ও শেরফেইন রাদারফোর্ড অবিচ্ছিন্ন জুটিতে তোলেন ৪৫ বলে ৬৫ রান।
৪ ছক্কায় ৩১ বলে ৪৯ রানে অপরাজিত থেকে যান মিঠুন। বিপিএল অভিষেকে রাদারফোর্ড ৩৮ করেন ২৮ বলে।
ঢাকার বোলিংয়ে সেরা দুই পারফরমার দুই লেগ স্পিনার শাদাব ও আফ্রিদি। আগের ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দেওয়া মেহেদি এ দিন ৩ ওভারেই দেন ৩৩। মাশরাফি মুর্তজার জন্য ছিল আরেকটি হতাশার পারফরম্যান্স। মাঝের ওভারে বোলিং করলেও ঢাকা অধিনায়ক ছিলেন খরুচে। উইকেটশূন্য রইলেন তিনি টানা তিন ম্যাচে।
বোলিংয়ে শেষের হতাশা ঢাকা পুষিয়ে দেয় ব্যাটিংয়ের শুরুতে। জয়ের ভিত গড়ে দেয় তামিম ও এনামুল হকের উদ্বোধনী জুটি।
সোহাগ গাজির প্রথম ওভারে দুটি বাউন্ডারিতে ছুটতে শুরু করেন এনামুল। সোহাগের পরের ওভারে বেরিয়ে এসে দুটি ছক্কা মারেন তামিম। উদ্বোধনী জুটিতে দুজন তোলেন ৫৮ রান। ২৩ বলে ৩২ করে ফেরেন এনামুল।
মেহেদি নেমেই সোহাগকে চার ও ছক্কা মেরে জানান দেন, আরেকটি ম্যাচ জেতানো ইনিংস আসছে। তার ব্যাটে রান আসে ঝড়ের গতিতে, তামিম খেলে গেছেন পরিস্থিতি বুঝে। দুজনের ৫০ বলে ৮৭ রানের জুটি গড়ে দেয় ম্যাচের ভাগ্য।
সিলেট অধিনায়ক মোসাদ্দেকের বোলিং পরিবর্তন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। মূল বোলারদের রেখে অনিয়মিত বোলারদের দিয়ে বোলিং করিয়ে আলগা করে দেন চাপ।
৮ ওভারে যখন ঢাকার প্রয়োজন ৭২, রাদারফোর্ডের এক ওভারে তিনটি চার মারেন তামিম। পরের ওভারে নাজমুল অপুর বাঁহাতি স্পিনে মেহেদি ওড়ান দুটি ছক্কায়। ম্যাচের উত্তেজনা অনেকটা শেষ ওখানেই।
৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৬ করে মেহেদি বোল্ড হন ইবাদত হোসেনকে স্কুপ করতে গিয়ে। জয় তখন নাগালেই। তামিম ও জাকের বাকি পথটুকু পাড়ি দেন সহজেই। ১১ বলে ২২ রানে অপরাজিত থেকে যান জাকের।
ক্যারিয়ারের ৩৫তম টি-টোয়েন্টি ফিফটির পথে তামিম প্রথম ব্যাটসমান হিসেবে বিপিএলের স্পর্শ করেন ২ হাজার রান।
প্রথম ওভারে উইকেট ও ঝড়ো ফিফটিতে ম্যাচের সেরা মেহেদি। ২৫ বছর বয়সী অলরাউন্ডার ম্যান অব দা ম্যাচ হলেন টানা দুই ম্যাচে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট থান্ডার: ২০ ওভারে ১৭৪/৪ (ফ্লেচার ০, মজিদ ৮, চার্লস ৭৩, মিঠুন ৪৯*, মোসাদ্দেক ২, রাদারফোর্ড ৩৮*; মেহেদি ৩-০-৩৩-১, হাসান ৩-০-২৯-০, শাদাব ৪-০-২৩-১, আফ্রিদি ৪-০-২৬-২, ওয়াহাব ৪-০-৩৫-০, মাশরাফি ২-০-২৭-০)।
ঢাকা প্লাটুন: ১৮.৩ ওভারে ১৭৫/২ (এনামুল ৩২, তামিম ৬০*, মেহেদি ৫৬, জাকের ২২*; সোহাগ ৪-০-৪৭-০, সান্টোকি ৩-০-১৬-০, মোসাদ্দেক ৩-০-৩০-১, ইবাদত ৩.৩-০-২৪-১, নাজমুল মিলন ২-০-১৭-০, রাদারফোর্ড ২-০-২৫-০, নাজমুল অপু ১-০-১৬-০)।
ফল: ঢাকা প্লাটুন ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদি হাসান