জালিয়াতি ঠেকাতে ঢাকা আইনজীবী সমিতি চালু করছে নতুন ওকালতনামা, যেখানে থাকছে আইনজীবীর ছবি ও পরিচয়।
গত বৃহস্পতিবার থেকে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন ওকালতনামা বিক্রি শুরু হয়েছে, যাকে ‘ডিজিটাল ওকালতনামা’ বলছেন আইনজীবীরা। এখন তা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায়।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি গাজী মো. শাহ আলম সোমবার বলেন, “এই কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে আগামী ২ জানুয়ারি। ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল চৌধুরী নতুন ওকালতনামা এবং জামিননামা বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।”
ইতোমধ্যে যেসব ওকালতনামা ও জামিননামা ছাপিয়ে বিক্রির জন্য ছাড়া হয়েছে, সেগুলো আদালতে ব্যবহার করা যাবে বলে জানান শাহ আলম। তবে নতুন করে আর পুরনো ওকালতনামা এবং জামিননামা ছাপানো হবে না।
নতুন এই ওকালতনামা কিনতে একজন আইনজীবীকে নির্দিষ্ট বুথে গিয়ে তার সদস্য নম্বর বলতে হবে। এরপর প্রিন্ট করে ওকালতনামা দেওয়া হবে।
নতুন ওকালতনামায় থাকছে আইনজীবীর ছবি, সমিতিতে তার সদস্য নম্বর ও কিউআর কোড। কিউআর কোডটি স্ক্যান করলে যে কেউ তাৎক্ষণিকভাবে ওই আইনজীবীর নাম-ঠিকানা এবং তিনি কবে বার কাউন্সিলে নিবন্ধিত ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য হয়েছেন, তা জানা যাবে।
ওকালতনামার মাধ্যমে একজন বিচারপ্রার্থী তার পছন্দের আইনজীবী নিয়োগ দেন। এ জন্য বিচারপ্রার্থীকে ওকালতনামা কিনতে হয়। এখন থেকে বিচারপ্রার্থী ব্যক্তি ঢাকা আইনজীবী সমিতির ডিজিটাল ওকালতনামা কিনতে পারবেন ২২০ টাকায়।
এতদিন কাগজে ছাপানো ওকালতনামা ভেন্ডারদের মাধ্যমে বিক্রি করা হত। আর কোনো আসামি আদালত থেকে জামিন পেলে তার আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনদারসহ জামিননামা (বেইল বন্ড) আদালতে জমা দিতে হয়। সেগুলোও ভেন্ডরদের মাধ্যমে বিক্রি করা হত। এখন আর সেই পদ্ধতি থাকছে না।
নতুন ওকালতনামা ও জামিননামা বিক্রির জন্য তৈরি করা হয়েছে তিনটি আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত বুথ। ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে পূবালী ব্যাংকের পাশে একটি, পুরনো জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের বিপরীতে একটি এবং মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ভবন এলাকায় একটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে।
নতুন ওকালতনামা তৈরিরর কারণ ব্যাখ্যা করে সমিতির সভাপতি শাহ আলম বলেন, “বেশ কিছু দিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র আইনজীবী সমিতির ওকালতনামা জাল করে আসছিল। চলতি বছর একাধিকবার এই চক্রের সদস্যদের হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
“তবে জালিয়াতি পুরোপুরি ঠেকাতে এবার ঢাকা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে ডিজিটাল পদ্ধতির ওকালতনামা ও জামিননামা বিক্রি শুরু করা হয়েছে।”
এর আগে সরকারি জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, ওকালতনামা , জামিননামা জাল করার অভিযোগে জালিয়াত চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে মামলাও দেওয়া হয়েছিল।
জালিয়াতির কারণে সরকার যেমন রাজস্ব হারিয়েছে, তেমনি ঢাকা আইনজীবী সমিতিও ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
“নতুন ওকালতনামায় আমাদের এই বারের ২৫ হাজার আইনজীবীই উপকৃত হবেন,” বলেন শাহ আলম।
ঢাকা আইনজীবী সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৯ সালে। এই সমিতির কার্যালয় ভবন পুরান ঢাকার জনসন রোড সংলগ্ন কোর্ট হাউজ স্ট্রিটে।