জনগণের পাশে থেকে তাদের আস্থা অর্জনে কাজ করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নবম বারের মতো আওয়ামী লীগ সভানেত্রী পদে নির্বাচিত শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে রোববার গণভবনে বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীরা গেলে তাদের উদ্দেশে ভাষণে এই আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “একজন একবার এমপি হয়ে গেলে তার পরের বার জেতে না। কেন জেতে না? কারণ সে জনগণের আস্থাটা ধরে রাখতে পারে না। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হয়।
“আপনি যে এমপি হলেন.. এখন যদি মনে করেন এই বারই হইছি, যা পারি বানায়ে-বুনায়ে খাইয়ে বসে থাকি। অনেক টাকা হইলেই তো জিতে আসব। সেটা কিন্তু হয় না।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানকে উদাহরণ দেখিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “তারেক জিয়া খুব গর্ব করে বলতো দুই হাজার কোটি টাকা যদি সে বানাতে পারে তাহলে জীবনেও বিএনপিকে ক্ষমতায় থেকে কেউ সরাতে পারবে না।
“দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বানায়েও থাকতে পারেনি। পাঁচ হাজার কোটি টাকার উপর বানিয়েছিল। কিন্তু থাকতে পারে নাই।”
টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ দেশের যে উন্নয়ন করেছে, তা জনগণের কাছে তুলে ধরতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “একটা কথা মনে রাখবেন, আমরা খুব উন্নয়ন করেছি বলেই মানুষ ঢেলে ভোট দেবে, তা না। মানুষের চাওয়ার কোনো সীমা থাকে না। যত পাবে তত চাইবে। এটা মাথায় রাখতে হবে।
“কিন্তু আমরা যে উন্নয়ন করে যাচ্ছি এই কথাটা মানুষকে বারবার বলতে হবে। এটা আপনাদের দায়িত্ব। মানুষকে গিয়ে বলে দিতে হবে যে আপনাদের জন্য আমরা এ কাজটা করে দিয়েছি। আগে ছিল না, এখন হয়েছে।”
বারবার বলার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “কারণ মানুষ সুখ পেলে দুঃখের কথা ভুলে যায়। আর সুখটাও যে কারা দিল, মনে রাখতে চায় না। সেই কারণেই তাদের বারবার স্মরণ করাতে হবে। বলতে হবে আজকে বাংলাদেশে যতটুকু উন্নতি হয়েছে, সেটা আওয়ামী লীগের হাতে করা।”
এলাকায় কত লোক দরিদ্র আছে, ভূমিহীন আছে, গৃহহীন আছে, তা খুঁজে বের করতেও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেন তিনি।
দেশের মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের নেতাদের যদি একটু সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে, তাহলে আরও দ্রুত আমরা দারিদ্র্য বিমোচনটা করতে পারব। যেটা আমি বিশ্বাস করি।”
নেতাকর্মীদের নিজ এলাকার মানুষের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
“ইলেকশন করতে চান, ভোট চান, নির্বাচন করতে চান, সংগঠন করতে চান, নেতা হতে চান। তো আগে মানুষের কাছে যান। মানুষের কী সমস্যা আছে দেখেন। মানুষের জন্য কী করতে পারেন, করেন। তাহলে এই মানুষই কিন্তু সব সুযোগ করে দেবে, আপনাদের কারও কাছে গিয়ে ধরনা দিতে হবে না।”
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির ২৯টি এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে তা আর কমে ছয়টিতে নেমে আসার কারণও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সামনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
“বিরোধী দলে থাকতে তারা আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ালো। মানুষের উপর যে অত্যাচার করল! ২০০১ থেকে নিয়ে তাদের যে অত্যাচার, নির্যাতন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ। এতকিছুর পরে জনগণের সেই বিভীষিকাময় অবস্থার কথাটা মনে আছে। তারা ওদেরকে ভোটটা দেবে কেন?
“ওরা তো ইলেকশন করার জন্য ইলেকশন করেনি। নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে। একটা সিটে দুইটা-তিনটা করে নমিনেশন। তারেক জিয়া নিজেই.. তারা (বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী) এসে আমাকে অনেকে রিপোর্ট করেছে, সরাসরি বলেছে, এত টাকা দিতে হবে তাহলে নমিনেশন পাবেন।”
বিএনপি ছেড়ে আসা ইনাম আহমেদ চৌধুরী ও মোরশেদ খানের নাম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “যেমন সিলেটে ইনাম আহমেদ চৌধুরী। উনার কাছ থেকে টাকা চেয়েছে। উনি বলেছেন, আমি টাকা দেবো কোত্থেকে? বলেছে, তাহলে আপনার ইলেকশন করা লাগবে না। মোরশেদ খান সাহেব। সে নিজে এসে আমাকে বলে গেছে।
“এই যে বাণিজ্যটা। লন্ডনে বসে বাণিজ্য, পুরানা পল্টনে বাণিজ্য, গুলশানে বাণিজ্য। এই তিন বাণিজ্যে তিন রকম প্রার্থী দিয়ে তারা গো হারা হেরে এখন গালি দেয় আমাদেরকে।”
পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার পর জিয়াউর রহমানের অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
“জিয়াউর রহমান গুম,খুন, হত্যা, নির্যাতন শুরু করেছিল। সে কথা অনেকে ভুলে গেছে যে কীভাবে আমাদের বহু নেতা-কর্মী অত্যাচারে মারা গেছে। অনেকের লাশ পাওয়া যায়নি। ঠিক সেভাবে বিএনপির আমলে তো হাত কাটা, চোখ কাটা, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মানুষ মারা। কীভাবে আমাদের নেতাকর্মীরা অত্যাচারিত।”
“আমি এই কথাগুলো এইজন্য বললাম যে অতীতের কথাগুলো সবার একটু মনে রাখা উচিৎ এই কারণে যে ভবিষ্যতে যেন আমাদের ওই পরিস্থিতিতে আবার পড়তে না হয়,” দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করেন শেখ হাসিনা।